সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

ট্রাম্পের পানামা খাল নিয়ন্ত্রণ চীনা বিনিয়োগে সতর্ক সংকেত

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৫৪ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সম্প্রতি পানামা খালের ওপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এতে বড় ধরনের শিপিংয়ে বিঘ্ন ঘটবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে বিষয়টি লাতিন আমেরিকায় চীনা বিনিয়োগের জন্য একটি সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখা দিতে পারে।

‘চীন পানামা খাল পরিচালনা করছে’ বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ২০ জানুয়ারির উদ্বোধনী ভাষণে যে দাবি করেছিলেন, তা ছিল মূলত ১৯৯৭ সাল থেকে হংকং-ভিত্তিক কোম্পানি হাচিসন পোর্টস দ্বারা পরিচালিত বন্দরগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে। এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা। একই সঙ্গে তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক আলোচনায় কোম্পানিটির ভূমিকা নতুন হলেও এর রাজনৈতিক প্রভাব খুব একটা ছিল না।

এ নিয়ে শিপব্রোকিং ও শিপিং পরিষেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বানচেরো কোস্টা-র গবেষণা প্রধান র‍্যালফ লেসজিনস্কি বলেন, ‘এটি বরাবরই একটি বাণিজ্যিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। যার কোনো রাজনৈতিক অর্থ বা প্রভাব ছিল না’। পানামা খাল নিয়ে তৈরি হওয়া উত্তেজনা বাণিজ্যিক কার্যক্রম বা পণ্য পরিবহনের হারকে প্রভাবিত করেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত গুরুত্ব

পানামা খাল হলো যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ও পূর্ব উপকূলের মধ্যে সংক্ষিপ্ততম শিপিং রুট। যা দেশটির জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে এটি এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট।

বিশ্বের বৃহত্তম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পানামা খালের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এ খালের মোট পণ্য চলাচলের প্রায় ৭৫ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের গন্তব্যে যায় বা সেখান থেকে আসে।

লেসজিনস্কি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থই হচ্ছে এটা নিশ্চিত করা যে, তাদের এলএনজি এবং এলপিজি রপ্তানি বাধাহীন ও সাশ্রয়ী মূল্যে খাল অতিক্রম করতে পারে’।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান তাদের নতুন প্রশাসনের আগ্রাসী বৈদেশিক নীতির অংশ হলেও, বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানটি কোথাকার, তা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বড় কোনো পরিবর্তন হবে না।

রাজনৈতিক উদ্বেগ ও চীনের বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ

এদিকে লাতিন আমেরিকায় চীনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রচার কাউন্সিলের সাবেক প্রতিনিধি আন দালি বলেছেন, পানামা খাল সম্পর্কিত আলোচনা মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এ বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, পানামা খালের বন্দরের অপারেটররা কেবল তাদের নিজস্ব টার্মিনালে আসা জাহাজের পরিষেবা দেন। কিন্তু তারা পানামা খালের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখেন না। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর এটিই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ।

এ নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি এক শুনানিতে কয়েকজন মার্কিন সিনেটর এমন এক পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করেন। যেখানে দক্ষিণ চীন সাগরে সংঘাত হলে ‘চীন-নিয়ন্ত্রিত বন্দরগুলো’ মার্কিন নৌবাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

আন দালি বলেন, পানামা খাল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ পেরুর চানকাই বন্দরে চীনা বিনিয়োগের বিরুদ্ধে মার্কিন সমালোচনার মতোই।

পানামার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ থেকে বেরিয়ে আসা

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সম্প্রতি পানামা সফরকালে চীনের প্রভাব কমানোর জন্য ‘তাৎক্ষণিক পরিবর্তনের’ আহ্বান জানাস। এর পরই পানামা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ থেকে বেরিয়ে আসে। একই সঙ্গে দেশটি হাচিসন পোর্টস কোম্পানি পরিচালিত বন্দরের কার্যক্রম পর্যালোচনা শুরু করেছে।

এতে ইতোমধ্যেই অনিশ্চিতার মুখে পড়েছে পানামায় চলমান বেশ কয়েকটি চীনা অবকাঠামো প্রকল্পের ভবিষ্যৎ।

২০১৬ সালে চীনের ল্যান্ডব্রিজ গ্রুপ পানামার বৃহত্তম আটলান্টিক বন্দর মার্গারিটা আইল্যান্ড ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় এবং আধুনিক কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করে।

২০১৮ সালে চীনের হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি পানামা খালের চতুর্থ ব্রিজ নির্মাণের জন্য ১.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে। যা এখনো নির্মাণাধীন।

ভবিষ্যৎ পরিণতি

হাচিসন পোর্টস মূলত হংকংয়ের ধনকুবের লি কা-শিং-এর মালিকানাধীন সিকে হাচিসন হোল্ডিংস-এর অংশ। এই কোম্পানিটিই পানামা খালের ক্রিস্টোবাল ও বালবোয়া বন্দর পরিচালনা করে। সংস্থাটি বর্তমানে বিশ্বের ২৪টি দেশে ৫৩টি বন্দর পরিচালনা করছে। যার মধ্যে ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরও রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি তার মনরো নীতি (১৯ শতকের সেই ঘোষণা, যেখানে পশ্চিম গোলার্ধের দেশগুলোর বিষয়কে কেবল তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়) পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে পানামা খালের বর্তমান উত্তেজনা চীনের লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে বিনিয়োগের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে।

কারণ, শিল্প-কারখানা ও পরিকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর জন্য দীর্ঘ সময় লাগে এবং বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার করতেও সময় লাগে। তাই চীনের জন্য বিদেশে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখা এখন এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫,/রাত ৯:৩৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit