এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছার স্বরুপদাহ গ্রামের চাষী কামারুল ইসলাম আধুনিক যন্ত্রপাতির যুগে এসেও হাল চাষের জন্য ব্যবহার করছেন ঘোড়া। গরু ও মহিষ দিয়ে হাল চাষ প্রায় বিলুপ্ত হলেও কামারুল ইসলাম ঘোড়ার মাধ্যমে এই পুরোনো চাষ পদ্ধতিকে ধরে রেখেছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) স্বরুপদাহ গ্রামের পান্তার মাঠে গেলে এ চিত্র চোখে পড়ে। কৃষক কামারুল ইসলাম স্বরুপদাহ গ্রামের মুক্তার মোল্লার ছেলে।
এক সময় গ্রামের মাঠে মাঠে গরু ও মহিষ দিয়ে হাল চাষের দৃশ্য ছিল নিয়মিত। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতির আগমনে এটি প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছে। বর্তমানে কৃষকরা ট্রাক্টর, পাউরটিলার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিব্যবহার করে জমি চাষ করেন। তবে কামারুল ইসলাম এখনো নিজের ঘোড়া দিয়ে হালচাষ পদ্ধতি ধরে রেখেছেন। যদিও এ এলাকায় আর কোন কৃষক ঘোড়া দিয়ে হাল চাষ করেন না।
এই বিষয়ে চাষী কামরুল ইসলাম বলেন, এই চৌগাছা উপজেলায় আমিই একমাত্র ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করি। আগে গরু দিয়ে চাষ করলেও গত পাঁচ বছর ধরে ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করছি। কারণ গরুর থেকেও ঘোড়া দ্রুত কাজ করে। এছাড়া একজোড়া হালের গরুর দাম তিন থেকে চার লাখ টাকা। সেদিক দিয়ে কম টাকাতে ঘোড়া পাওয়া যায়। কামরুল বলেন, আমি ছোট দুইটা ঘোড়া কিনি, পরে নিজেই ঘোড়া দুইটার নাংলা (চাষ উপযোগী) করি। এ ছাড়াও গরু চুরি হওয়ার ভয় রয়েছে কিন্তু ঘোড়া চুরি হওয়ার ভয় নেই। তা ছাড়া গরুর চাইতে ঘোড়ার খাদ্য খরচও কম। ঘোড়ার রোগবালাই নেই বললেই চলে।
ঘোড়ার হালচাষে আয়-রোজগার প্রসঙ্গে কামারুল বলেন, গত বছরে এই ঘোড়ায় অন্যের জমিতে চাষ/মই দিয়ে চাল কিনে খেয়ে সংসার খরচ বাদে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেড়ি মজুদ করেছিলাম। এই ঘোড়া দিয়েই আয় করে আমি গত পাঁচবছরে একটি ছাদের বাড়ি করেছি, জমিও নিয়েছি। আমার প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন এনজিওর দুই হাজারথেকে তিন হাজার টাকা কিস্তি টাকা দিই। চারটা ঘোড়ার মধ্যে বর্তমানে তিনটা আছে।
প্রতিবেশী আদম আলী বলেন, আমিসহ গ্রামের অনেকেই কামরুলের ঘোড়ার নাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করেন। তিনি বলেন, ঘোড়ার মাধ্যমে ভালই দেড়ি মজুদ করেছেন কৃষক কামারুল ইসলাম। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফখরুল ইসলাম বলেন, শুধু হালচাষ না। এই ঘোড়া দিয়ে ধান,পাট, সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য টানাসহ বিভিন্ন কাজ করেন কামারুল ইসলাম। এর মাধ্যমেই তার পরিবার এখন ভালই স্বচ্ছল।
কিউএনবি/আয়শা/২৩ জানুয়ারী ২০২৫,/রাত ৯:৩৩