লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : চট্টগ্রাম শহরের মধ্যেই রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। কোনো কাজে চট্টগ্রাম গেলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই স্থানগুলোতে ঘুরে আসতে পারবেন।
ফয়’স লেক একটি কৃত্রিম হ্রদ। পূর্বে এটি পাহাড়তলী লেক হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা এবং নৌকা ভ্রমণ ইত্যাদির কারণে দেশি বিদেশি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ফয়’স লেক বেশ জনপ্রিয়। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর খুলশী এলাকার প্রধান সড়কের পাশে ফয়’স লেকের তোরণ। সেখান থেকে কিছুটা ভেতরে এর মূল প্রবেশ পথ।
স্বাধীনতা কমপ্লেক্স মূলত একটি থিম পার্ক যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে অবিকল নতুন করে রূপায়ণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের পাশেই অবস্থিত। এটির উত্তর-পূর্ব পাশে কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র অবস্থিত। বাংলাদেশের বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর সমন্বয়ে থিম পার্ক হওয়ায় এটি মিনি বাংলাদেশ নামেও পরিচিত।
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহরের অতি প্রাচীনতম স্থাপনার নাম সিআরবি। এর পূর্ণ রূপ হচ্ছে সেন্ট্রাল রেলওয়ে ভবন। কালজয়ী ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সিআরবি ভবন। নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে কিছুটা স্বস্তি, আরাম আর মানসিক প্রশান্তির খোঁজে সময় পেলে মানুষ জমায়েত হয় এই সিআরবি শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে। পুরো এলাকায় দৃষ্টিনন্দন আঁকা-বাঁকা, সর্পিল রাস্তা উঁচু নীচু সবুজ পাহাড় টিলা, বন-বনানী ছায়া সুনিবিড় এই বিরাট এলাকাটি অঘোষিত ভ্রমণের জায়গা হিসেবে যুগ যুগ ধরে চট্টগ্রামের মানুষদের দিয়ে আসছে বিনোদনের আস্বাদন।
নগর জীবনের ক্লান্তিকর একঘেয়েমি থেকে নগরবাসীকে একটু বিনোদনের ছোঁয়া দিতে চট্টগ্রামের ফয়’স লেকের পাশে সবুজে ঘেরা বনবীথির আবেষ্টনীতে ১৯৮৮ সালে তৈরি করা হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। এটি শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তর-পূর্বদিকে পাহাড়তলী ইউএসটিসি মেডিকেল কলেজের বিপরীত পাহাড়ের পাদদেশে ১০ দশমিক ২ একর ভূমির উপর অবস্থিত।
জাম্বুরি পার্ক চট্টগ্রামের একটি উন্মুক্ত উদ্যান। এটি আগ্রাবাদের এস এম মোরশেদ সড়কে অবস্থিত। এই পার্কে রয়েছে দীর্ঘ চক্রাকার হাঁটার পথ আর ৮ হাজার রানিং ফুটের উদ্যানটিতে রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার বর্গফুটের জলাধার, যার কিনারায় রয়েছে বসার জন্য তিনটি বড় গ্যালারি।
চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব রণাঙ্গনে নিহত সৈনিকদের একটি সমাধিক্ষেত্র। চট্টগ্রাম মহানগরের বাদশা মিঞা সড়কে (জয়নগর মৌজা) এর অবস্থান। তখনকার চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে পূর্ব ও দক্ষিণে বিন্যস্ত অশ্বক্ষুরাকৃতি পাহাড়ের পাদদেশে একটি ধানক্ষেতে এ সমাধিক্ষেত্র স্থাপিত। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন। এখানে যুদ্ধে নিহতদের ৭৫৫টি কবর আছে। যুদ্ধ চলাকালে এখানে চট্টগ্রামে সামরিক প্রশিক্ষণের সুবিধাসহ মিত্র শক্তির চতুর্দশ বাহিনীর অগ্রবর্তী শিবির এবং ব্রিটিশ জেনারেল হাসপাতাল নম্বর ১৫২ স্থাপিত হয়। ১৯৪৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৪৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত হাসপাতালটি সক্রিয় ছিল এবং প্রাথমিকভাবে এ কবরখানায় ৪০০ জন সৈনিকের মৃতদেহ সামরিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে সমাধিস্থ হয়।
চট্টগ্রামের মূল কেন্দ্রে অবস্থিত বাটালি হিল। এটি চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। বাটালি পাহাড় যা বাটালি হিল নামেও পরিচিত। চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রামের শহরের সর্বাধিক উঁচু পাহাড়। এর উচ্চতা প্রায় ২৮০ ফুট। বাটালি হিলের সর্বোচ্চ চূড়াটিকে বলা হয় শতায়ু অঙ্গন। এর চূড়া থেকে বঙ্গোপসাগর এবং চট্টগ্রাম শহরের বড় অংশ পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। এই বাটালি হিল আবার ‘জিলাপি পাহাড়’ নামেও পরিচিত। এর কারণ হচ্ছে- পাহাড়ের উঠার রাস্তাটি জিলাপির প্যাঁচের মত আকা-বাকা পথ বেয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে এর ফলে পাহাড়ের চূড়ায় উঠার সময় অন্যরকম একটা চমৎকার অনুভূতি হয়। সেখানে গিয়ে অনুভব করা যাবে জঙ্গলের মুগ্ধতা। বিগত ২০০৩ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাটালি হিলে বাংলাদেশ পুলিশের সৌজন্যে জলপাই, কাঁঠাল, কালোজাম, লিচু, কমলা, আম, জাফরান, চন্দন, কফি, অর্জুন গাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় সাড়ে ১২ হাজার গাছ রোপণ করা হয়।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামবাসীর বিনোদনের অন্যতম প্রধান স্থান। একদিকে সমুদ্রের আছড়ে পড়া বিস্তীর্ণ জলরাশি, অন্যদিকে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। দুইয়ে মিলে যেন এক নৈসর্গিক পরিবেশ। স্থানীয়রাতো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকদের ভিড়ে নিয়মিত মুখরিত থাকে পতেঙ্গা।
কর্ণফুলী আর বঙ্গোপসাগরের মোহনা চট্টগ্রামে নেভাল নামে পরিচিত। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পূর্বে হযরত শাহ আমানত (র) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে এই স্থানটি চট্টগ্রামবাসীদের কাছে অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়। একটু সময় পেলেই সবাই বন্ধু-বান্ধব বা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে চলে যান নেভাল। শহরের যান্ত্রিকতামুক্ত নির্মল পরিবেশে নদীর পাড়ে বসে মুক্ত শীতল হাওয়া যেন দূর করে দেয় বহুদিনের জমানো ক্লান্তি। আর রসনা বিলাসের জন্য রয়েছে বিখ্যাত কাঁকড়া ভাজা ও পেঁয়াজু।
কিউএনবি/আয়শা/১৪ ডিসেম্বর ২০২৪,/সন্ধ্যা ৭:৫৫