ডেস্ক নিউজ : ফেরেশতারা কী বলে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করে তার একটি নমুনা এই আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে। ‘হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যপ্ত। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন”। (সুরা মুমিন ৭)
নবীজি বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন যাদের আমলের কারণে ফেরেশতারাও তাদের জন্য দোয়া করেন। নিচে সেসব ব্যক্তি ও তার আমলগুলো তুলে ধরা হলো।
জামাতে নামাজ পড়ে স্বস্থানে বসে থাকে যেহজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘(মসজিদে) জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার সওয়াব বাজারে কিংবা বাড়িতে একা নামাজ পড়ার চেয়ে ২৫ বা ২৭ গুণ বেশি। কারণ, যখন কোনো ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে এবং একমাত্র নামাজের নিয়তেই মসজিদে আসে, তখন মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে তার একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে পাপ মোচন করা হয়।
মসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ নামাজ তাকে (মসজিদে) আটকে রাখে, ততক্ষণ সে নামাজের মধ্যেই থাকে (অর্থাৎ ততক্ষণ সে নামাজের সওয়াব পেতে থাকে) এবং নামাজ পড়ে যতক্ষণ সে স্বস্থানে বসা থাকে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। তারা বলতে থাকে, হে আল্লাহ, তার প্রতি দয়া করুন। হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, তার তওবা কবুল করুন। (তারা এসব দোয়া করতেই থাকে) যতক্ষণ পর্যন্ত সে কাউকে কষ্ট না দেয় এবং তার অজু নষ্ট না হয়’। (বুখারি ২১১৯, মুসলিম ৬৪৯)
প্রথম কাতারে নামাজ আদায়কারীএকদিন রসুলুল্লাহ (স.) (তার সামনে উপস্থিত সাহাবাদের লক্ষ করে) বললেন, যারা প্রথম কাতারে নামাজ পড়ে, আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (তার এ কথা শুনে) সাহাবিরা বললেন, যারা দ্বিতীয় কাতারে নামাজ পড়ে তাদের জন্যও (দোয়া করুন)।
রসুলুল্লাহ (স.) আবার বললেন, যারা প্রথম কাতারে নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। তখন সাহাবিরা বললেন, যারা দ্বিতীয় কাতারে নামাজ পড়ে তাদের জন্যও (দোয়া করুন)।
রসুলুল্লাহ (স.) আবার বললেন, যারা প্রথম কাতারে নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। তখন সাহাবিরা বললেন, যারা দ্বিতীয় কাতারে নামাজ পড়ে তাদের জন্যও (দোয়া করুন)।
(তাদের কথা শুনে চতুর্থবার) রসুলুল্লাহ (স.) বললেন, এবং যারা দ্বিতীয় কাতারে নামাজ পড়ে তাদের প্রতিও (রহমত বর্ষণ করেন)’। (মুসনাদে আহমদ: ২২২৬৩)
কাতারের ডান দিকে দাঁড়ায় যে
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যারা কাতারের ডান দিকে দাঁড়ায়, আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন’। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ২১৬০, সুনানে কুবরা, বায়হাকি: ৩/১০৩, হাদিসটি সহিহ)
উপর্যুক্ত হাদিস অনুযায়ী, ডান দিকে ফাঁকা থাকলে সেদিকেই আগে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা উচিত। ফাঁকা না থাকলে তো ভিন্ন কথা।
মানুষকে কল্যাণকর কথা শিখায় যে
‘হজরত আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যকার সাধারণ কারো ওপর আমার মর্যাদা যেমন, একজন আবেদের ওপর একজন (সত্যিকারের) আলেমের মর্যাদা ঠিক তেমন। এরপর বলেন, আল্লাহ তাআলা ওসব লোকদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন, যারা মানুষকে কল্যাণকর কথা শিক্ষা দেয়, ফেরেশতারা এবং আসমান-জমিনের সকল বাসিন্দা, এমনকি গর্তের পিঁপড়া এবং পানির মাছ পর্যন্ত তাদের জন্য দোয়া করে’। (তিরমিজি ২৬৮৫)
মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া প্রার্থনাকারী
হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যখন কোনো মুসলিম তার ভাইয়ের জন্য তার পশ্চাতে দোয়া করে, তখন তার (মাথার কাছে নিযুক্ত) একজন ফেরেশতা তাকে লক্ষ্য করে বলে, তোমার জন্যও এমনই হোক’। (মুসলিম ২৭৩২)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কোনো মুসলিম তার ভাইয়ের অবর্তমানে তার জন্য নেক দোয়া করলে তা কবুল হয়। তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে, যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, তখনই ওই ফেরেশতা বলেন, ‘আমিন! তোমার জন্যও এমনই হোক। (মুসলিম ২৭৩২)
অজুসহ ঘুমানো ব্যক্তিহজরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে পবিত্র অবস্থায় (অজু সহকারে) ঘুমায়, একজন ফেরেশতা তার গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা কাপড়ের ভেতরে অবস্থান করে। রাতে সে যখনই জাগ্রত হয়, ওই ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করে বলে, হে আল্লাহ, আপনি আপনার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিন। সে পবিত্র অবস্থায় রাত কাটাচ্ছে’। (ইবনে হিব্বান ১০১৫)
প্রতিদিন অল্পকিছু হলেও সদকা করা
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা (আসমান থেকে) অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ, যে দান করে তাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ, যে দান করে না, তাকে ধ্বংস করে দিন’। (বুখারি ১৪৪২; মুসলিম ১০১০)
সেহরি খায় যেরসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যারা সেহরি খায়, আল্লাহ তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন’ (ইবনে হিব্বান ৩৪৬৭) মুসনাদে আহমদে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সেহরি পুরোটাই বরকত। অতএব তোমরা সেহরি খাওয়া ছেড়ো না, এক ঢোক পানি হলেও পান করো। কারণ, যারা সেহরি খায়, আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারাও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন”। (মুসনাদে আহমদ ১১১০১)
অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে যায় যে
কোনো মুসলিম যদি অন্য কোনো (অসুস্থ) মুসলিমকে সকাল বেলা দেখতে যায়, সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর যদি সন্ধ্যায় যায়, তাহলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর জান্নাতে তার জন্য আহরিত ফল নির্ধারিত হবে’। (তিরমিজি ৯৬৭)
দরুদ পাঠকারী
রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখনই কেউ আমার ওপর দরুদ পড়ে, যতক্ষণ দরুদ পড়ে ততক্ষণ ফেরেশতারাও তার জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকে। অতএব কেউ কম পড়তে পারে আবার বেশিও পড়তে পারে’। (মুসনাদে আহমদ ১৫৬৮৯)
কিউএনবি/আয়শা/১৩ নভেম্বর ২০২৪,/সন্ধ্যা ৭:২৮