বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন

সোর্সদের নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসা চৌগাছায় পুলিশের নাম ভাঙিয়ে অপরাধ

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৬১ Time View

চৌগাছা (যশোর) থেকে ফিরে রনজিত মল্লিক : যশোরের চৌগাছায় পুলিশের নাম ভাঙিয়ে অপরাধ সোর্সদের নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসা। মাদক কারবারের অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট এখন সীমান্ত এলাকা চৌগাছা। উপজেলার কুলিয়া, আন্দুলিয়া, দৌলতপুর, মাশিলা, কাবিলপুর, গদাধরপুর, বর্ণি, আড়শিংড়ি, পুকুরিয়া ও বল্লভপুররুটে প্রতিদিন মাদকের বিপুল পরিমাণ চালান প্রবেশ করছে। এসব চালানের মধ্যে রয়েছে মধ্যে গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল। তবে ফেনসিডিলের চেয়ে এখন সবচেয়ে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মরণনেশা ইয়াবা। এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই যেখানে ইয়াবার কারবার হচ্ছে না ।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা তৈরি করে পুলিশের সোর্সরাই বিভিন্ন কৌশলে পুলিশের অজান্তেই তাদের নাম ভাঙিয়ে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। এসব সোর্সদের মধ্যে আবার অনেকে নিজেরাই জড়িত মাদক ব্যবসায়। ফলে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় সৃষ্টি হয়েছে মাদকের ভয়াবহ পরিস্থিতি। সোর্সরা আসামি ধরার নামে পুলিশের সঙ্গে গাড়ি বা মোটর সাইকেলে ঘুরে বেড়ান। যে কারণে সোর্সরূপী মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বেড়ে গেছে মাদকের ছড়াছড়ি, অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসায়ীরা। পাড়ার অলি-গলিতে ফেনসিডিলের খালি বোতল চোখে পড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অপরাধী গ্রেফতারে নানা তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করাই সোর্সের কাজ। পুলিশ এসব সোর্স নিয়োগ করে অপরাধীদের মধ্য থেকেই। বিনিময়ে তারা অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পান। কিন্তু সোর্সরা অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের ধরিয়ে দিয়ে নিজেরাই ব্যবসা শুরু করেছেন। এরা মাঝেমধ্যে বিরোধী গ্রুপের দুই চার জনকে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা নিরাপদ রাখেন। এদের ছত্রছায়ায় উপজেলায় অর্ধশতাধিক মাদকের ¯পট তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের নীরবতার কারণেই দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে অপরাধীদের সংখ্যা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, উপজেলার মাশিলার বাজার, তিলকপুর বাজার, কাকুড়িয়ার মাঠ, বল্লভপুর বাওড়, আন্দুলিয়া বাজার মোড়, দৌলতপুর, পুড়াপাড়া বাজার, পুড়াপাড়া খালপাড়া, চৌগাছা পৌর শহরের মাছ বাজার, বস্তিপাড়া, বাবু ঘাট, পাকিস্তান রোড এলাকা, কালিতলা এলাকা, দিঘলসিংহা ঘাটপাড়া, ঢেকিপুতার মোড়, কাবিলপুর বাজার এলাকাসহ অসংখ্য ¯পটে চলছে মাদক বেচাকেনা। মাদক কারবারে কেউ বাধা দিলে তাকে নিয়ে চলে ষড়যন্ত্র। কখনো ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে গ্রেফতারের হুমকি আবার কখনো মারধরের হুমকিও দেওয়া হয়।

উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন, দিঘড়ি গ্রামের নিজাম উদ্দীন, বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের নাজমুল হোসেন, চৌগাছা মাঠপাড়া গ্রামের রেফান হোসেন, হিজলী গ্রামের আব্দুল মান্নান ও আলী খুড়া, মাশিলা গ্রামের সোহাগ হোসেন ও ফারুক, ইদ্রোপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান, হুদাহাজীপুর গ্রামের নুর ইসলামরে ছেলে সোহাগ হোসেন, জয়নাল আলীর ছেলে মাছুদ হোসেন, পিন্টুর ছেলে লেন্টু রহমান এ ছাড়াও পৌর এলাকার সবুজ হোসেন, মিরাজ হোসেন, বুদো, শাহিন, মনিরুল, লিখন ও আজমির মাদক ব্যবসায় এগিয়ে রয়েছে। ভুয়া ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে বুক ফুলিয়ে বীরদর্পে কেউ কেউ মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালানোর আগেই সব মাদক কারবারীদের পূর্বেই সতর্ক করে দেন সোর্সরা। ফলে অভিযান চালিয়েও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সফলতা পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশের একটি সূত্রে জানায়, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে সাধারণত পুলিশের সোর্স প্রয়োজন হয়। এ জন্য পুলিশের নিয়মিত বাজেটের একটি বড় অংশ সোর্সমানি হিসেবে বরাদ্দ রয়েছে। তবে এ সোর্সমানির টাকা কখনো সোর্সদের দেওয়া হয় না। তারা এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা করেই তাদের পাওনা পুষিয়ে নেন। আর এ কারণে সোর্সরা কখনো ঐ টাকা দাবিও করেন না। অপর একটি সূত্র বলছে, সোর্সমানি না দিলেও জব্দকৃত মাদকের একটি অংশ সোর্সদের দেওয়া হয়ে থাকে। পরে সোর্সরা তাদের লোক দিয়ে এসব মাদক বিক্রি করে থাকেন।

অধিকাংশ সোর্সই মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে জড়িত থাকায় একাধিকবার পুলিশের হাতে মাদকসহ আটক হন। এরপর থেকেই পুলিশের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে হয়ে ওঠে আরো ঘনিষ্ঠ। আইনের ফাঁকে বেরিয়ে এসেই শুরু করে তাদের পুরোনো কর্মকান্ড, সঙ্গে যোগ করেন পুলিশের সোর্স হিসেবে বাড়তি ক্ষমতা। আর এই ক্ষমতাবলে নিরীহ জনসাধারনদের মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। স্থানীয় মাদকসেবীকেও মাদক বিক্রেতা সাজিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়াসহ নানা অপকর্ম চালায়।

তাদের রয়েছে একাধিক জুয়ার আসরও। অন্যদিকে প্রকৃত মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা ও সাপ্তাহিক আদায় করে নিজের ভাগেরটা রেখে অসাধু পুলিশ সদস্যদের তা দিয়ে থাকেন। এ ভাবেই নির্বিঘ্নে সোর্সদের নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে মাশিলা বিজিবি কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার মিজানুর রহমান বলেন, মাশিলা সিমান্ত দিয়ে মাদক আসার কোন সুযোগ নেই। আমরা নিয়মিত টহল জোরদার ভাবেই করে থাকি। তবে আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক পারাপার হতেও পারে।

এ ব্যাপারে চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, মাদকের সাথে আমাদের কোন আপস নেই। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এখানে মাদেকের সাথে অনেকে জড়িত রয়েছে। আমরা মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতেই অভিযান অব্যহত রেখেছি। কোন পুলিশ সদস্য মাসোহারা ও সাপ্তাহিক আদায় করেন না। কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানু ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৪ নভেম্বর ২০২৪,/বিকাল ৫:২২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit