এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় আমন খেতে মাজরা পোকার আক্রমণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। কীটনাশক প্রয়োগেও পোকা দমন হচ্ছে না। কৃষকেরা বলছেন, এ বছর তীব্র গরমে জমিতে কীটনাশকের কার্যকারিতা হারাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, তীব্র তাপপ্রবাহে মাজরা পোকার বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন হয়েছে। পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছ রক্ষায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানা যায়, এ বছর উপজেলায় হাইব্রিড- ধানীগোল্ড, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫১, ব্রি-৭৫,ব্রি-৮৭, স্বর্ণ, প্রতিক ও রড-মিনিকেট জাতের আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৮শ হেক্টর। চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে। তবে অতি বৃষ্টিতে কোন কোন এলাকায় তুলনা মুলক নিচু জমির ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে উপজেলার নারায়নপুর, স্বরুপদাহ, সুখপুকুরিয়া, ধুলিয়ানী, পাশাপোল, সিংহঝুলী, ফুলসারা, পাতিবিলা, হাকিমপুর ও জগদিশপুর ইউনিয়নসহ পৌর এলাকায় বিভিন্ন ফসলি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কিছু আগাম জাতের ধানে থোড় বের হয়েছে। এ সময়ে কেউ ধানখেতে কীটনাশক, কেউবা সার ছিটাচ্ছেন। কেউ ব্যস্ত আগাছা পরিষ্কারের কাজে।উপজেলার স্বরুপদাহ গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম, খড়িঞ্চা গ্রামের কৃষক আব্দার আলী বলেন, এখনো ধানের গাছ থোড় পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিবছর তিনবার বালাইনাশক ছিটালেই আর প্রয়োজন পড়ে না। বেশি হলে কখনো চারবার দিতে হয়েছে। এবার গাছে এখনো শিষ বের হয়নি। এরই মধ্যে তিনবার বালাইনাশক দিতে হয়েছে। আরও অন্তত তিনবার না দিলে এবার ধান ঘরে তুলতে পারব না। পোকার ধরণ পাল্টে গেছে। স্প্রে করলেও মাজরা পোকার আক্রমন বন্ধ হচ্ছে না।
পৌর সদরের ইছাপুর গ্রামের কৃষক বিপ্লব হোসেন, সচিন কুমার বলেন, মাত্র ধানের থোড় বের হচ্ছে। এই মুহূর্তে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এর প্রতিকার না করা গেলে আমাদের মতো বর্গাচাষিদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। কয়ারপাড়া গ্রামের কৃষক চকম আলী বলেন, প্রতিবছর বর্গাচাষ, পরিচর্যা, সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ছে। এতে আমাদের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। তার ওপর পোকার আক্রমণ দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।উপজেলার সিংহঝুলী গ্রামের কৃষক ফজের আলী বলেন, আবাদের শেষ সময়ে হঠাৎ ধান ক্ষেতে পঁচা রোগ ও পোকার আক্রমন দেখা দিয়েেেছ। আমাদের মাঠে আমন ক্ষেতে কয়েকবার ¯েপ্র করছি। এতেও পোকা দমন হচ্ছে না।কৃষকরা জানান, মৌসুমের শুরুতে টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় পচে যায় হাজার হাজার একর জমির বীজতলা ও রোপা আমন। এর পর আবার মাজরা পোকা নিয়ে নতুন বিপদ! একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত আমন চাষিরা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও এখন শঙ্কিত। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, মাজরা পোকায় আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে ফসলের খরচ উঠানো দূরের কথা, মুশকিল হয়ে পড়েছে আমাদের টিকে থাকাই!।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোসাব্বির হোসাইন বলেন, অতিবৃষ্টিতে ডুবে বীজতলা ও আমন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে তীব্র তাপপ্রবাহে মাজরা পোকার বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন হয়েছে। যদিও এই সময়ে ধানগাছে মাজরা পোকার আবির্ভাব ঘটে। পোকা দমনে কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে কৃষি উপসহকারীরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূল ও রোগবালাই থেকে ফসল রক্ষা করা গেলে এবারও ধানের বা¤পার ফলন হবে।
কিউএনবি/অনিমা/৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/রাত ৯:২৬