মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন

যে কারণে নবীজির ওপর দরুদ পড়তে হয়

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : মুফতি আবদুল্লাহ তামিম

আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোটা মানবজাতির জন্য আল্লাহ তাআলার সর্বশেষ দূত। তাই তার প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য ছাড়া আল্লাহতে বিশ্বাস ও আল্লাহর আনুগত্যের দাবি অর্থহীন। কোরআন মজিদের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে। আর নবীর উপর দরুদ পাঠ করলে মহান আল্লাহ খুশি হন। ফেরেশতারাও তার জন্য দোয়া করেন, যে নবীর জন্য দরুদ পাঠ করেন। 
 

 
আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর উপর রহমত নাজিল করেন, ফেরেশতারা তার জন্য রহমতের দোয়া করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি দরুদ পড়। অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সুরা আহজাব ৫৬) নবীর উপর দরুদ পাঠের মাহাত্ম্য ফজিলত অনেক অনেক বেশি। এর মধ্য থেকে নয়টি ফজিলত পাওয়া যায়।
 
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যে আমার উপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাজিল করবেন। (মুসলিম ১/১৬৬; জামে তিরমিজি ১/১০১)
 
অন্য হাদিসে আছে, হযরত আনাস রা. বলেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে আমার উপর একবার দরুদ পড়বে আল্লাহ তার উপর দশটি রহমত নাজিল করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করা হবে এবং দশটি দরজা বুলন্দ হবে। (নাসায়ি ১/১৪৫; মুসনাদে আহমদ ৩/১০২; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ২/৪৩)
 
হযরত আবু বুরদা রা. থেকে বর্ণিত আছে, তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হবে। (আলমুজামুল কাবির, তবারানি ২২/৫১৩) হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকেও দরুদের এই ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ ২/২৬২, হাদিস ৭৫৬১)
 
হযরত আমের ইবনে রবিআহ রা. বলেন, আমি আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুতবার মধ্যে বলতে শুনেছি, আমার উপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম। (মুসনাদে আহমদ ৩/৪৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ৬/৪০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৯০৭)
 
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন, যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উপর দরুদ না পড়বে ততক্ষণ দোয়া আসমানে যাবে না, আসমান-জমিনের মাঝে থেমে থাকবে। (জামে তিরমিজি ১/১১০)
 
হযরত রুওয়াইফি ইবনে সাবিত আল আনসারি রা. বলেন, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি এ দরুদ পাঠ করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত হয়ে যাবে। (আলমুজামুল কাবির, তবারানি ৫/৪৪৮১; মাজমাউজ যাওয়াইদ ১০/২৫৪)
 
হযরত আবদুললাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার উপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে। (জামে তিরমিজি ১/১১০)
 
হযরত উবাই ইবনে কাব রা. বলেন, একবার আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিকরুল্লাহর খুব তাকিদ করলেন। আমি আরজ করলাম, ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করে থাকি। আমি আমার দোয়া কতভাগ আপনার জন্য নির্ধারণ করব? তিনি বললেন, তোমার যে পরিমাণ ইচ্ছা। আমি বললাম, চারভাগের এক ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা।
 
তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে তিন ভাগের দুই ভাগ? তিনি বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা হয়। তবে বেশি করলে আরো ভালো। আমি বললাম, তাহলে কি আমার দোয়ার পুরোটাই হবে আপনার প্রতি দরুদ? তিনি বললেন, তবে তো তোমার মকসুদ হাসিল হবে, তোমার গুনাহ মাফ করা হবে। (জামে তিরমিজি ২/৭২; মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/২৪৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা ৬/৪৫)
 
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে চায় আমাদের উপর অর্থাৎ আহলে বাইতের উপর দরুদ পাঠের সময় তাকে পাত্র ভরে দেওয়া হোক, সে যেন এভাবে দরুদ পড়ে- للهم صل على محمد النبي وأزواجه أمهات المؤمنين وذريته وأهل بيته كما صليت على آل إبراهيم إنك حميد مجيد (সুনানে আবু দাউদ ১/১৪১)
 
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলার জমিনে বিচরণকারী কিছু ফেরেশতা আছেন, তাঁরা আমার নিকট উম্মতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সালাম পৌঁছিয়ে থাকেন। (মুসনাদে আহমদ ১/৪৪১; ইবনে আবী শাইবা ৬/৪৪; সুনানে নাসায়ী ১/১৪৩)
 
হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মুসলমানের দান করার সামর্থ্য নেই সে যেন দোয়ায় বলে-اللهم صل على محمد عبدك ورسولك، وصل على المؤمنين والمؤمنات، والمسلمين والمسلمات এটা তার জন্য যাকাত (সদকা) হিসেবে গণ্য হবে। (ইবনে হিববান ৩/১৮৫
 
একবার দরুদ পড়লে ন্যূনতম ১০ টি রহমত নাজিল হয়। যত বেশি পড়বেন ততই আপনার উপর রহমত বর্ষিত হবে। দরুদ পড়ার জন্য সংখ্যার কোনো সীমা-পরিসীমা আবশ্যক নয়। আল্লাহ তাআলা অসীম দাতা। তার কাছ থেকে যত বেশি নিতে পারবো আমরা ততোই সৌভাগ্যের অধিকারী হব ইনশাআল্লাহ।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/রাত ১০:২১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit