এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় ট্রান্সফরমার চুরি থামছেই না। ব্যাহত হচ্ছে কৃষি কাজ ভোগান্তির ও আর্থিক ক্ষতি কৃষকের। গত আট মাসে উপজেলায় ৫০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসে চুরি হয়েছে ৮টি। উপজেলার গভীর ও অগভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি থামছেই না।
ট্রান্সফরমার চুরি রোধে সেচ পা¤প ও শিল্প সংযোগের মালিকদের নিজ দায়িত্বে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা নিতে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ চৌগাছা জোনাল অফিসের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। তবে এই উদ্যোগও কাজে আসেনি। পুলিশ বলছে, আউস ধান কাটা-মাড়াই ও আমন ধান সবেমাত্র জমিতে জমে উঠেছে এ কারণে মাঠ ফাঁকা থাকছে। যার ফলে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে।
চুরি ঠেকাতে পুলিশ কাজ করছে। ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক এজাহার দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ট্রান্সফরমার চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের জন্য তৎপর। তবু ট্রান্সফরমার চুরি থামছে না। এ জন্য ট্রান্সফরমার চুরি রোধে গভীর-অগভীর মালিকদের নিজ উদ্যোগে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা করতে মাইকিং করা হয়েছে।
চৌগাছা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৮২৫ টি গভীর-অগভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে গতকয় মাসে প্রায় ৫০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এসব গভীর-অগভীর নলকূপে ৫ থেকে ২৫ কেভি ক্ষমতার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার রয়েছে। প্রতিবছরই ফসলি মাঠের গভীর-অগভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে হয়েছে ৮টি।
এর মধ্যে অতিসম্প্রতি চুরি হয়েছে উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের কলেজ মাঠ থেকে মৃত সনতোসের ছেলে আলী আকবার বিশ্বাসের ৩টি ১ কেবি, মৃত আত্তাপ হোসেনের ছেলে তবিবর রহমানের ১টি ৫ কেবি, যাত্রাপুর গ্রামের কৃষক মোরশেদ আলমের ৩টি ১০ কেবি, স্বরুপপুর গ্রামের কলিমুল্লার ১টি ৫ কেবি, নারায়নপুর গ্রামের আশরাফ আলীর ৩টি ১০ কেবি ও পৌর শহরের পাঁচনামনা গ্রামের লোকমান হোসেনের ৩টি ১০ কেবি ট্রান্সফরমার।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা জানান, সেচ ও শিল্প সংযোগে ৫ কেভি, ১০ কেভি, ১৫ কেভি ও ২৫ কেভি ক্ষমতাস¤পন্ন ট্রান্সফরমার লাগানো হয়। ৫ কেভির ট্রান্সফরমারের দাম ৪২ হাজার ৬০০ টাকা, ১০ কেভির ট্রান্সফরমার ৬৭ হাজার, ১৫ কেভির ট্রান্সফরমার ৭৯ হাজার টাকা ও ২৫ কেভি ট্রান্সফরমারের দাম ১ লাখ ৮ হাজার টাকা। প্রথম দফায় চুরি হলে গ্রাহক সমিতিতে ট্রান্সফরমারের অর্ধেক দাম দিতে হয়।
দ্বিতীয় দফায় চুরি হলে নির্ধারিত দাম সমিতিতে দিয়ে দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনতে হয়। চুরি যাওয়া প্রতিটি ট্রান্সফরমারে ১২-১৫ কেজি তামার তার থাকে। চোরেরা প্রতি কেজি তামার তার ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করে। চুরি যাওয়া ৫০টি ট্রান্সফরমারের গড়মূল্য প্রায় কোটি টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গভীর ও অগভীর নলকূপের মালিক বলেন, দুই বছর আগে তাঁদের গভীরঅগভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছিল। পরের বছর আবারও ট্রান্সফরমার চুরি হয়। দুবার তাঁদের প্রায় ৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন নিজেরা ট্রান্সফরমার পাহারা দেন।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ চৌগাছা জোনাল অফিসের ডিজিএম বালী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার দেওয়া হয়। পুলিশ ট্রান্সফরমার চোর চক্রের সদস্যদের অকেন সময় গ্রেপ্তারও করে থাকেন। তবু ট্রান্সফরমার চুরি থামছে না। এ জন্য ট্রান্সফরমার চুরি রোধে গভীর-অগভীর মালিকদের নিজ উদ্যোগে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা করতে মাইকিং করা হয়েছে।
চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, পুলিশ বিভিন্ন সময় ট্রান্সফরমার চোরদের গ্রেপ্তার করেছে। এখন মাঠের আমন ধান নিড়ানোর কাজ চলছে। অনেক মাঠ ফাঁকা থাকায় চোরেরা এ সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে। এই চোর চক্রের সদস্যদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/বিকাল ৫:২১