বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন

চৌগাছায় স্কুল-মাদরাসার মাঠ ঘিরে চলছে অবৈধ বলুহর মেলা, পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৯২ Time View

চৌগাছা বলুহর মেলা থেকে ফিরে রনজিৎ মল্লিক স্টাফ রিপোর্টার : যশোরের চৌগাছায় অনুমতি ছাড়াই অবৈধ ভাবে চলছে পীর বলুহ দেওয়ানের মেলা। মেলা এলাকায় থাকা একটিপ্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি দাখিল মাদরাসা ঘিরে বসেছে এ মেলার দোকান পসরা। মাঠজুড়ে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান আর দর্শণার্থীদের হৈ চৈ, নানা ধরণের ম্যাশিন ও বাঁশির শব্দের কারণে দারুণ ভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

এদিকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা উপস্থিতি নেই বললেই চলে। অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেলার ভিড়ে হৈচৈয়ের মধ্যে বসতে হচ্ছে পরীক্ষায়। এতে ক্ষুদ্ধ হচ্ছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। কর্তৃপক্ষ বলছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকা শান্ত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। হাজরাখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, দুই শফটে পরীক্ষা চলছে। সকাল ১০ টা থেকে ১২ পর্যন্ত শিশু থেকে ২য় শ্রেণি এবং বেলা ১ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধবার্ষিক মূল্যয় নেওয়া হচ্ছে।

মেলার কারণে বিদ্যালয় আশপাশে ব্যাপক ভিড় হচ্ছে। এতে শিশু শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হাজরাখানা পীর বলুহ দেওয়ান দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানিয়েছেন, মেলা চলায় শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসায় আসছে না। আর অভিভাবকরাও নিরাপত্তার কারণে তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠাচ্ছেন না। কয়েকজন অভিভাবক জানায়, প্রতি বছর মেলা চলাকালে সাত থেকে দশ দিন দুটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়।

প্রতি বছর বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী উচুঁ ঢিবিতে এ এলাকার বিখ্যাতপীর বলুহ দেওয়ানের মাজারে ওরশের উপলক্ষ্যে উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী হাজরাখানা গ্রামে বসে বলুহ দেওয়ানের মেলা। স্থানীয়রা যশোর জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে প্রতি বছর মেলার আয়োজন করে থাকেন। কিন্তু দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারনে বর্তমান দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটা নিরব থাকায় এ বছরে মেলার অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসক।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর স্থানীয় প্রভাবশালী লোক মেলাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েনেন। মেলায় বসানো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে মনুমোদন ছাড়াই মেলা পরিচালনা করছেন। ফলে যে কোন সময়আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় আসংঙ্খা রয়েছে। স্থানীয় লোকজন আরও জানান, মেলাকে কেন্দ্র করে মূলত অর্থ বাণিজ্য করার উদ্দেশ্য থাকে প্রভাবশালীদের।

ফলে ওই স্থানে থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দাখিল মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এছাড়া মেলা চলাকালে এই এলাকার ৮ থেকে ১০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়। কারণ মেলার সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি কম হয়। অনুমোদন না নিয়ে মেলা আয়োজন করেছেন তারা। অনুমোদন ছাড়াই ১০ সেপ্টম্বর মঙ্গলবার মেলা শুরু হয়ে চলমান রয়েছে। ওই দিন থেকে মেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি দাখিল মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

মাজারের আশেপাশে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬ থেকে ৭শ দোকান বসানো হয়েছে। সাত থেকে ১০ দিনের জন্য প্রতিটি দোকান থেকে পাঁচ হাজার থেকে বিশ হাজার টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়। এতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মেলার আয়োজকরা। রোববার (১৫ সেপ্টম্বর) দুপুরে মেলাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল ও মাদ্রাসর আশেপাশে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও জমজমাট পসরা বসানো হয়েছে। মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়নি। কয়েকজন শিক্ষককে দেখা গেলেও শিক্ষার্থী না থাকায় পাঠাদান বন্ধ ছিল।

হাজরাখানা সরকারি প্রাথমিক বিধ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবকরা সমস্যার কথা জানালেও অদৃশ্য কারনে প্রধান শিক্ষক তাসলিমা খাতুনের কন্ঠে চিলো ভিন্ন সুর তিনি মেলার পক্ষে সাফাই গাইলেন বলেন, একটু শব্দ হলেও বাচ্চাদের পরীক্ষা দিতে কোনো সমস্য হচ্ছেনা। শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ের জানালার কাছেই উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে পণ্য বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। এছাড়া বিদ্যালয়েল পাশেই বিভিন্ন রাইডারের মিউজিক তো রয়েছেই। অভিভাবকরাও ছোট ছোট শিশু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

একজ অভিভাবক বলেন, প্রতি বছর মেলার সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। বিদ্যালয়ের আশেপাশে মেলায় আসা অপরিচিত লোকজন থাকায় ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় কাজ করে। আমরাও নিরাপত্তাহীনতার কারণে ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চায়না। এ বছর তো পরীক্ষা চলছে। মেলার ভিড়ে এবং মাইকের উচ্চ শব্দের বাচ্চাদের পরীক্ষায় দিতে কষ্ট হচ্ছে।

হাজরাখানা পীর বলুহ দেওয়ান দাখিল মাদ্রাসার সুপার সিরাজুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগেও সুষ্ঠুভাবে মেলার কার্যক্রম চলত। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে এখন মেলার কার্যক্রম ব্যবসা কেন্দ্রীক হয়ে গেছে। অনুমোদন না থাকলেও কিছু লোক মেলা বসিয়ে বাণিজ্য করছেন। তিনি বলেন, মেলা উপলক্ষ্যে নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৭/৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিত বন্ধ থাকে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকে এবং প্রাথমিকের অভিভাবকেরা ভিড়ের মধ্যে ঝুকির কারনে বিদ্যালয়ে পাঠাতে চাইনা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মেলা চললেও শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যালয়ের মাঠে মেলার না বসানোর জন্য মেলা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম রফিকুজ্জামান বলেন, মোলার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার কোনো সুযোগ নেই। মেলার কারনে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির বিষয়টি খোজ খবর নিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/বিকাল ৫:৩৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit