সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৫ অপরাহ্ন

বৈঠক ছাড়াই নবান্ন থেকে ফিরলেন ডাক্তাররা, যা বললেন মমতা

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৫১ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : লাইভ স্ট্রিমিং সম্ভব নয় বলে জানালেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জুনিয়র ডাক্তাররা নবান্নতে গিয়েও বৈঠক না করে ফিরে এলেন। অবস্থান ধর্মঘট ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন বলেই জানালেন তারা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, লাইভ স্ট্রিমিং করা সম্ভব নয়। কারণ বিষয়টি বিচারাধীন। সুপ্রিম কোর্ট লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারে। আমরা পারি না। মামলা বিচারাধীন।

তিনি বলেন, দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করেছি। আমি চাই ডাক্তার ভাইবোনদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আমি ওদের ক্ষমা করে দিচ্ছি। আমি পদ ছাড়তেও রাজি।

এদিকে জুনিয়র ডাক্তাররা বলেছেন, সরকার যদি প্রশাসনিক বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং করতে পারে, তাহলে এ বৈঠকের কেন হবে না? ডাক্তাররা প্রথম থেকেই লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি করে এসেছেন।

জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, তারা প্রথম থেকেই বলেছেন- তারা ন্যায় পাওয়ার জন্য লড়াই করছেন। পরে সিনিয়র ডাক্তাররা তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এরপর জনসাধারণ যোগ দিয়েছেন। ফলে প্রথম থেকে তারা একই কথা বলেছেন। তারা তাদের দাবি থেকে সরে যাননি। তারা কখনো বলেননি রেকর্ড করে রাখলে বৈঠকে যাবেন।

তাদের বক্তব্য, প্রথম থেকে পুলিশি তদন্ত ঠিক দিকে গেলে তাদের এইভাবে রাজপথে থাকতে হত না। আগে এনআরএসে এ রকম ঘটনার লাইভ স্ট্রিমিং হয়েছিল। এই একই মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তাহলে এখন কেন হবে না?

কিন্তু রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্ত ও পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার জানিয়ে দেন, কোনো ফরমাল বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং হয় না। ভিডিও তুলে রাখা হবে। ডকুমেন্টেশন হবে।

মুখ্যসচিব এটাও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিকাল ৫টা থেকে আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছেন। দেড় ঘণ্টা হয়ে গেছে। একটা সীমা আছে।

ঘটনা হলো- চিকিৎসকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর লাইভ স্ট্রিমিং কোনো অভূতপূর্ব ঘটনা নয়। অতীতে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের দুই ঘণ্টার বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠক লাইভ স্ট্রিমিংও হয়েছে।

মুখ্যসচিবের বক্তব্য, লাইভ স্ট্রিমিং গুরুত্বপূর্ণ নয়, আসল কথা হলো আলোচনা। আমাদের দুই পক্ষের লক্ষ্য এক। আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা জুনিয়র ডাক্তারদের কাছ থেকে তাদের সুপারিশ জানতে চাই। তাহলে সেগুলো আমরা রূপায়ণ করতে পারব।

সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের আইনজীবী অরিন্দম দাস ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং সম্ভব নয়। কিন্তু এমন কোনো নির্দেশ সুপ্রিম কোর্ট দেয়নি। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের কোনো বাধা ছিল না। কোর্টে মামলার শুনানিরই তো লাইভ স্ট্রিমিং হয়।

নবান্নের সামনে কী হলো?

পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানিয়েছিল, ৫টার সময় বৈঠক হবে। জুনিয়র ডাক্তারদের ৩৪ জন প্রতিনিধি ৫টা বাজার কিছুক্ষণ পর বাসে করে নবান্নের সামনে আসেন।

তাদের বলা হয়, নবান্নে ঢোকার জন্য সবাইকে সই করতে হবে। সই করতে মিনিট দশেক সময় যায়। এরপর জুনিয়র ডাক্তাররা জানতে চান, বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং হবে তো? তখন পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লাইভ স্ট্রিমিং হবে না। পুলিশের ডিজি, মুখ্যসচিবসহ একের পর এক অফিসার জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে আসেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা বারবার করে বলেন, আপনারা আলোচনায় আসুন।

কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের দাবিতে অনড়, লাইভ স্ট্রিমিং ছাড়া তারা বৈঠক করবেন না। তারা জানতে চান, কেন লাইভ স্ট্রিমিং হবে না?

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৬টা ৫৫ মিনিট নাগাদ নবান্ন সভাকক্ষ থেকে নিজের দপ্তরে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বাইরে থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে নির্দেশ এসেছে, আলোচনায় যাবে না।

তিনি বলেন, আমি জুনিয়র ডাক্তারদের ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি তিন দিন ধরে অপেক্ষা করছি, আজও দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। আমাকে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কিছু পদ্ধতি মানতে হয়। কেউ এখানে সিবিআইয়ের সমালোচনা করলে কী আমাদের দায়বদ্ধতা থাকত না?

মমতা বলেন, ২৭ জন মারা গেছেন। সাত লাখ মানুষ পরিষেবা পাননি। দেড় হাজার গুরুতর রোগী ৩২ দিন ধরে অপেক্ষা করছে। যারা চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন, তাদের জন্য মোমবাতি জ্বালাব না!

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি ক্ষমা চাইছি। জনগণ আমাকে ক্ষমা করবেন। আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে, অপমান করা হয়েছে। কুৎসা, অপপ্রচার হয়েছে। ওরা বিচার নয়, চেয়ার চায়। আমি চেয়ার চাই না। আমি চাই, তিলোত্তমা বিচার পাক।

চিকিৎসকদের বক্তব্য

এদিকে জুনিয়র ডাক্তাররা পরে বলেন, উনি বললেন নীরবতা পালন করতে চাই। আমরা অনেকবার নীরবতা পালন করেছি। ৩৪ দিন রাজপথে পড়ে আছি। দরকার হলে ৩৫ বা ৩৬ দিন থাকব।

তাদের বক্তব্য, আমরা স্বচ্ছ্তা চেয়েছি। আমরা চেয়ার চাইনি। আমরা রাজনীতি করার জন্য আসিনি। নির্যাতিতার বাবা-মা বলেছিলেন, আমাদের হয়ে তোমরা দেখে নিও। আমরা তো পাঁচটি দাবি নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলাম। সরকারি অফিসারদের বিরুদ্ধে শুধু আমরা নই, সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছেন।

তারা বলেছেন, আমরা আশা রাখছি, অপেক্ষা করছি, আরও অপেক্ষা করব।

চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেছেন, যে যুক্তি দেওয়া হলো, আমাদের মনে হয়েছে অবান্তর। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। সুপ্রিম কোর্টকে দেখানোর জন্য এসব করা হলো। তদন্তের ফাঁক নিয়ে প্রশ্ন করলে তখন মুখ্যমন্ত্রী কী বলতেন? সেজন্য লাইভ স্ট্রিমিং করা হলো না। 

কিউএনবি/অনিমা/১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/রাত ৯:৩৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit