সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

ক্যাডার কিংবা নন-ক্যাডার, ভয়ে সারখেকো বদরুলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন না কেউ

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৬০ Time View

ডেস্ক নিউজ :  কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখা অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে উপপ্রধান কৃষি অর্থনীতিবিদ শেখ মো. বদরুল আলমের বিরুদ্ধে অনিময়, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। দেশে সার সংক্রান্ত সব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে। সার সংক্রান্ত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে বিদেশে যাওয়ার সময় সরকারি আদেশ (জিও) নিজেই সই করেন। মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখার নিয়োগবিধি হালনাগাদ করার সময় ৭৫ শতাংশ পদোন্নতি এবং ২৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান অনুমোদন করে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি। কিন্তু তিনি প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগবিধিতে ৭৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগ এবং ২৫ শতাংশ পদোন্নতির বিধান সংযুক্ত করেন। বিষয়টি ধরে বসে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

শেখ বদরুল আলম পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য ইতালি গিয়ে তা না করেই দেশে ফিরে আসেন। উচ্চ ডিগ্রি অর্জনের জন্য বিদেশে গিয়ে ফিরে আসা সরকারি চাকরিবিধি অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও অদৃশ্য কারণে তার কোনো শাস্তিই হয়নি। প্রথম স্ত্রী অনামিকা নাসরিনের করা যৌতুক দাবি, প্রতারণা এবং মানসিক নির্যাতনের মামলায় দুইদিন জেলে থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি কৃষি মন্ত্রণালয়। উলটো দেওয়া হয় পদোন্নতি। তার কারসাজির কারণে মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অনুবিভাগে যুগ্মসচিব, উপসচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব পর্যায়ের কোনো ক্যাডার কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হলেও অনেকেই দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। আবার যারা সাহস করে দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছেন, তাদের কৌশলে সার আমদানি, সার ব্যবস্থাপনা, মনিটরিং, সার আমদানি সংক্রান্ত চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কোনো ফাইল দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়ের মধুর হাঁড়ি হচ্ছে এই সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখা। মন্ত্রণালয়ের বিগত সময়ের সব মন্ত্রী ও সচিব শেখ বদরুল আলমের প্রতি আজানা কারণে দুর্বল ছিলেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান যুগান্তরকে বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। আগে খোঁজখবর নিই, তারপর মন্তব্য করব। এখনো কিছুই বঝে উঠতে পারিনি। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ বদরুল আলম যুগান্তরকে বলেন, এগুলো সবই গুজব। আমার কী করার ক্ষমতা আছে। আমি একজন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা। আমি বিদেশ সফরে যেতে চাই না। কিন্তু মন্ত্রী কিংবা সচিব চাইলে তো যেতেই হয়। নিয়োগবিধি প্রণয়নে আমার কোনো ভূমিকা ছিল না। তিনি আরও জানান, তার ভাগনে বেসরকারি সার আমদানিকারক পোটনের অফিসে আগে চাকরি করতেন। এখন করেনন না। প্রথম স্ত্রীর করা মামলার বিষয়ে তিনি বেমালুম অস্বীকার করেন। তিনি কখনো পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনে ইতালি যাননি বলেও জানান। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্যি নয় বলে তিনি দাবি করেন।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে ডিএপি, এমওপি এবং পটাশ-এ তিন ধরনের সার আমদানি করে সরকার। এ তিন ধরনের সারের বার্ষিক চাহিদা কত, তা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নেই। দেশের ৬৪ জেলায় কত লাখ হেক্টর জমি চাষাবাদ হয়, প্রতি হেক্টরে কোন ধরনের সার কতটুকু ব্যবহার করতে হয় এবং সব মিলিয়ে এ তিন ধরনের সারের বার্ষিক চাহিদা কত মেট্রিক টন। আমদানি করা হচ্ছে কত মেট্রিক টন, এর প্রকৃত হিসাবে গরমিল রয়েছে। এর সঙ্গে আমদানিকারক, শেখ বদরুল আলমসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা গড়ে ২৫ শতাংশ সার কম আমদানি করে চট্টগ্রাম পোর্ট, সরকারি গুদাম এবং ডিলার পর্যায়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিতরণ দেখিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, চাহিদা মোতাবেক সার আমদানি করলে তো সারের দাম কৃষক পর্যায়ে বেশি কেন? কেন কৃষক সরকার নির্ধারিত দামে সার পাচ্ছে না। বিষয়টি তদন্তের দাবি রাখে বলে তারা মন্তব্য করেন। ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে এ বিষয়ে একাধিক অভিযোগ দেওয়া হলেও রহস্যজনক কারণে তা তদন্ত করেনি কৃষি মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশ সফরের সব গ্রেডের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারর কর্মকর্তা-কর্মচারীর জিও হয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৩ শাখা থেকে। কিন্তু বিদেশ থেকে সার আমদানির জন্য রপ্তানিকারক দেশের সঙ্গে চুক্তি কিংবা এমওইউ স্বাক্ষরের জন্য বিদেশ সফরের সব জিও সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখা থেকে জারি করা হয়। ওই শাখার উপপ্রধান (কৃষি অর্থনীতিবিদ) শেখ বদরুল আলম নিজেই সেই জিওতে স্বাক্ষর করেন। আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তার বিদেশ সফরের জিও নিজেই স্বাক্ষর করেন। বছরের পর বছর এ অপরাধমূলক কাজটি বদরুল আলম করলেও তাকে প্রশাসনিক কোনো অনুমোদন নিতে হয়নি। জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) রেহানা ইয়াসমি যুগান্তরকে বলেন, সব কথা তো বলা যাবে না। কর্তৃপক্ষ চাইলে সবকিছু সম্ভব। এ সংক্রান্ত বিধান কী-জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর বেশি কিছু আমার জানা নেই। জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সরকারি চাকরির বিধিবিধান বইয়ের লেখক সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের কাজ সুস্পষ্ট দুর্নীতি। কোনো কর্মকর্তা তার বিদেশ সফরের জিও নিজেই স্বাক্ষর করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই।

এগুলো ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় কিছু কর্মচারী করে। তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখার নিয়োগবিধি হালনাগাদের জন্য ২০১২ সালে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো হয়। প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি ৭৫ শতাংশ পদোন্নতি এবং ২৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের বিধান রেখে নিয়োগবিধি হালনাগাদ করে। নিয়োগবিধিতে সরকারি কর্ম কমিশনের মতামত নেওয়ার বাধ্যতামূলক শর্ত জুড়ে দেয় সচিব কমিটি। নিয়োগবিধিতে মতামত নেওয়ার জন্য সরকারি কর্ম কমিশনে পাঠানোর আগে বদরুল আলম কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রভাব খাটিয়ে ২৫ শতাংশ পদোন্নতি এবং ৭৫ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান যুক্ত করেন। বিষয়টি পিএসসি ধরে বসে এবং বাধ্য হয়ে তা সংশোধন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখার গবেষণা অনুসন্ধানী পদ পূরণের ক্ষেত্রে সরেজমিন তদন্তকারী থেকে কত শতাংশ কিংবা পরিসংখ্যান সহকারী থেকে কত শতাংশ আসবে, তা উল্লেখ নেই। এছাড়া ওইসব পদে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে কত শতাংশ নিয়োগ পাবে বা পদোন্নতির মাধ্যমে কত শতাংশ পদ পূরণ হবে, তা উল্লেখ নেই। যে কারণে ওইসব পদে কর্মরতরা বিগত ১১ বছরে একটি পদোন্নতিও পাননি। এসব বদরুলের কারসাজি।

 

সূ্ত্র : যুগান্তর

কিউএনবি/অনিমা/০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/সকাল ১১:১০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit