বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২১ অপরাহ্ন

মুমিনের যে উপহার আল্লাহ পছন্দ করেন

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪
  • ৬৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : ইসলাম নানাভাবে সামাজিকতায় উদ্বুদ্ধ করেছে এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয় এমন কাজের নির্দেশ দিয়েছে। তবে কখনো কখনো সামাজিকতা মানুষের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায় এবং তার বলি হয় অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। যেমন রেওয়াজি উপহার। বর্তমানে মানুষ বিয়ে, আকিকা, ওলিমার মতো সামাজিক অনুষ্ঠানে উপহার বাধ্যতামূলক মনে করে।

দাওয়াত প্রদান ও গ্রহণ উভয় ক্ষেত্রে উপহার দিতে পারা ও না পারার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হয়। বহু অনুষ্ঠানেই অতিথিদের উপহার ও অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে অনেকেই লজ্জাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। 

সামাজিকতা ও উপহার প্রশংসনীয় আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না ঈমানদার হবে। আর ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন করবে। আমি কি এমন একটি কাজের কথা তোমাদের বলে দেব না, যখন তোমরা তা করবে, পরস্পর ভালোবাসা স্থাপিত হবে? তোমরা পরস্পর সালামের প্রসার ঘটাও। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৬৮৮)

অন্যদিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষকে উপহার দিতেও উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও, ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫৯৪)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, তোমরা একে অন্যকে হাদিয়া-উপহার দাও। এ উপহার অন্তরের শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর করে দেয়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২১৩০)

উপহার কেন দেব?

উপহার ও উপঢৌকন পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় করে এবং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করে। তবে উপহার আদান-প্রদানে একজন মুমিনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য থাকবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ। মহানবী (সা.) বলেন, যে লোক আল্লাহর জন্য দান করে, আল্লাহর জন্য দান করা হতে নিবৃত্ত থাকে, আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে বিয়ে দেয় সে তাঁর ঈমান সুসম্পন্ন করেছে।(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫২১)

উপহারের জন্য দাওয়াত দেওয়া নিন্দনীয়

দাওয়াত দেওয়া এবং তা গ্রহণ করা ইসলামী শিষ্টাচারের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) দাওয়াত কবুলকে মুসলমানের অধিকার আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের পাঁচটি অধিকার- ১. সালামের জবাব দেওয়া, ২. অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, ৩. জানাজায় শরিক হওয়া, ৪. দাওয়াত করলে তা রক্ষা করা, ৫. হাঁচির জবাবে দোয়া করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৪০)

তবে অর্থবানদের দাওয়াত দেওয়া বা দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা নিন্দনীয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, যে ওলিমায় কেবল ধনীদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয় আর গরিবদের বর্জন করা হয়, সে ওলিমার খাবার নিকৃষ্ট খাবার। আর যে আমন্ত্রণ রক্ষা করে না, সে তো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হলো। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৭৭)

আলোচ্য হাদিসে দুটি বিষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এক. শুধু অর্থবিত্তের বিবেচনায় কাউকে দাওয়াত না দেওয়া, দুই. কেউ দাওয়াত দিলে তা রক্ষা করা। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যদি এমন পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয় যে উপহার ছাড়া সেখানে গেলে লজ্জিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে এমন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ না করলে কে দায়ী থাকবে? নিশ্চয়ই এমন পরিবেশ ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক মূল্যবোধবিরোধী।

গরিবের দাওয়াতও গ্রহণ করতে হবে

উপহার পাওয়ার জন্য দাওয়াত দেওয়া যেমন নিন্দনীয়, তেমনি উপহার দেওয়ার ভয়ে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করাও নিন্দনীয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) দরিদ্র মানুষের দাওয়াত গ্রহণের ব্যাপারে বলেন, আমাকে যদি (বকরির পায়ের) মাংসবিহীন চিকন হাড় খেতেও দাওয়াত করা হয়, তবু আমি সে দাওয়াত রক্ষা করব। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৭৮)

‘রেওয়াজি উপহার’ উপহার নয়

রাসুলে আকরাম (সা.) উপহার আদান-প্রদানে স্বতঃস্ফূর্ত সন্তুষ্টির শর্ত দিয়েছেন। সুতরাং সামাজিকতার চাপে যে উপহার আদান-প্রদান করা হয় তা উপহার বিবেচিত হবে না। মহানবী (সা.) বলেছেন, যে উপহার খুশি মনে দেওয়া হয় সেটাই শুধু বৈধ। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২০৭১৪)

পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ সন্তুষ্টির বাইরে সম্পদ গ্রহণকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ গ্রাস কোরো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮) 

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, এমন সব অপকৌশল আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে, যার মাধ্যমে মানুষের অসন্তোষ সত্ত্বেও তার থেকে অর্থ বা সম্পদ আদায় করা হয় বা সে দিতে বাধ্য হয়।

লৌকিকতা ও বৈষম্যহীন মুসলিম সমাজ

ইসলামী সমাজব্যবস্থার মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো তা লৌকিকতা ও বৈষম্যহীন। সেখানে সামাজিক সদাচরণ সবার প্রাপ্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং কোনো কিছুকে তাঁর সঙ্গে শরিক করবে না। আর সদাচরণ করো মা-বাবার সঙ্গে এবং আত্মীয়-স্বজন, এতিম-মিসকিন, নিকট প্রতিবেশী ও দূর প্রতিবেশী, সঙ্গীসাথি, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের সঙ্গেও। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)

আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।

কিউএনবি/অনিমা/০৫ জুন ২০২৪,/রাত ১১:০১

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit