মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:১৬ পূর্বাহ্ন

হাসিমুখে কুশলবিনিময়ে দানের সওয়াব

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ২২ Time View

ডেস্ক নিউজ : মানুষের জীবনে ছোট কিছু আচরণ আছে, যেগুলো আমাদের চোখে তুচ্ছ মনে হলেও আসলে তার ভেতর লুকিয়ে আছে অপরিসীম সৌন্দর্য ও গভীর তাৎপর্য। মানুষের সঙ্গে দেখা হলে মুখে হাসি ফোটানো, কোমল কণ্ঠে কথা বলা—এ যেন হৃদয়ের সোনালি দরজায় একটি মৃদু কড়া নাড়া। একটি মিষ্টি হাসি কোনো দামি উপহার নয়, কিন্তু এর প্রভাব এমন যে তা হতাশ মানুষকে নতুন আশার আলো দেখাতে পারে, কঠোর হৃদয়কে নরম করতে পারে, আর দূরের সম্পর্ককে কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন আমাদের সামনে সেই অসাধারণ উদাহরণ হিসেবে উপস্থিত।

সাহাবিরা সাক্ষ্য দিয়েছেন—নবীজির মুখশ্রী সর্বদা ছিল উজ্জ্বল, হাস্যোজ্জ্বল ও প্রশান্ত। কারো সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি কখনো ভ্রুকুটি করেননি, কখনো রূঢ়ভাবে কথা বলেননি। তাঁর হাসি ছিল শীতল বাতাসের মতো, যা মানুষের অন্তরে প্রশান্তি ঢেলে দিত।
কোরআনের বাণীতে হাসির আলো

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা যখন হজরত মুসা ও হারুন (আ.)-কে ফেরাউনের মতো দুঃসাহসী এক স্বৈরাচারীর কাছে পাঠালেন, তখনো তিনি নির্দেশ দিলেন, ‘তোমরা তার সঙ্গে কোমল ভাষায় কথা বলো।’ (সুরা : ত্বাহা, আয়াত : ৪৪)
নববী আদর্শ আর কোরআনের এসব অমিয় বাণীর আলোকেই  ইসলাম বলছে—শত্রুর সঙ্গেও কঠোর মুখ নয়, বরং হাসিমাখা আচরণ ও নম্র বাক্য দিয়ে কথা বলো। কারণ এগুলো সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার।

হাদিসের ভাষ্যে হাসির আলো

আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তুমি তোমার ভাইয়ের দিকে হাসিমুখে তাকালে সেটি তোমার জন্য সদকা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)

এ হাদিসে স্পষ্ট যে হাসি শুধু সৌজন্য নয়, এটি এক ধরনের ইবাদত।

মসজিদে নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা, সদকা দেওয়া যেমন আল্লাহর দরবারে পুরস্কারের যোগ্য, তেমনি মানুষের সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলাও এক বিশাল সওয়াবের কাজ।
বিজ্ঞানের আলোকে হাসির অলৌকিক প্রভাব

আধুনিক বিজ্ঞানও আজ স্বীকার করছে—একটি হাসির ভেতর লুকিয়ে আছে চিকিৎসা, প্রশান্তি ও দীর্ঘায়ুর রহস্য। একজন মানুষ যখন হাসে, তখন মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হয় এন্ডরফিন, ডোপামিন ও সেরোটোনিন। এগুলো মানুষের মনের অস্থিরতা দূর করে, দুশ্চিন্তা কমায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলেন, হাসলে হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, অক্সিজেনের মাত্রা উন্নত হয়, ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।

নিয়মিত হাসলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়, সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। আজকের যুগে মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে মানসিক চাপে। হাসি কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনকে হ্রাস করে, অনিদ্রা ও বিষণ্নতা কমায়। সামাজিক মনোবিজ্ঞানে প্রমাণিত, যারা হাসিমুখে কথা বলে, তারা সহজেই মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করে।

ইসলামী শিক্ষা ও আধুনিক বিজ্ঞানের সমন্বয়

বিজ্ঞান যা শতাব্দীর পর শতাব্দী গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করছে, ইসলাম তা বহু আগে স্পষ্ট করে দিয়েছে। নবীজির জীবন ও তাঁর বাণী আমাদের শিখিয়েছে—হাসি শুধু মুখের নয়, এটি হৃদয়ের আলো, যা অন্যের হৃদয়কেও আলোকিত করে।

যে কারণে একজন মুমিনের হাসি অন্যের জন্য কেবল আনন্দ নয়, বরং সওয়াবের কাজ। বিজ্ঞান বলছে, হাসি মানুষের শরীর-মনকে সুস্থ রাখে আর ইসলাম বলছে, এটি তোমার আখিরাতকেও সুন্দর করে তোলে।

একটি সাধারণ হাসি ও কোমল ভাষা যে কত বড় শক্তি বহন করে, তা আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না। কিন্তু সত্য হলো—এটি মানুষের জীবনে এক অমূল্য দান। একটি হাসি পারে হিংসা-বিদ্বেষ কমাতে, বিভক্ত হৃদয়কে একত্র করতে, শত্রুকেও বন্ধুতে পরিণত করতে।

তাই আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্রয়োজন হাসিমুখে কথা বলা, কোমল ভাষায় আলাপ করা এবং পরস্পরের হৃদয়কে প্রশান্ত করা। এ শুধু সামাজিক সৌজন্য নয়, বরং এটি কোরআনের নির্দেশ, নবীজির শিক্ষা, বিজ্ঞানের স্বীকৃতি। একটি হাসি হলো দুনিয়ার সুখের চাবিকাঠি আর আখিরাতের মুক্তির সেতুবন্ধ।

লেখক : শিক্ষার্থী, তাকমিল ফিল হাদিস, জামিয়া ইমদাদিয়া দারুল উলুম মুসলিম বাজার, মিরপুর, ঢাকা

কিউএনবি/অনিমা/০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫/রাত ৯:৪৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit