আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাত্র নয় বছর আগে মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম সৌদি আরবের রাজনীতিতে কেউ শোনেনি। তার সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানতেনও না কেউ। প্রথমে ছিলেন ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এরপর ক্ষমতার ব্যবহার করে শুরু করলেন নিজ পিতা বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আযিয কে নজরে রাখতে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষমতার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন মোহাম্মদ বিন সালমান। দেশজুড়ে এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সালমান সক্রিয় ও নিষ্ঠুর কৌশলের মাধ্যমে হয়ে ওঠেন ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণের গল্পকার।
সুযোগ পেয়ে এমবিএস তার বাবাকে পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের থেকে আলাদা করে ফেলেন। এমনকি মা এবং দুই বোনকে গৃহবন্দি করেন এবং বাবাকে এ সম্পর্কে ঘুণাক্ষরেও কিছু টের পেতে দেননি। বাদশাহ নিজের স্ত্রীর কথা জিজ্ঞেস করলেই বলা হতো চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে তাকে।
২০১৫ সালে মোহাম্মদ বিন সালমানের পিতা সালমান বিন আব্দুল আযিয সৌদি আরবের বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন তার বয়স ছিল ৭৯ বছর। বাদশাহ সালমান তখন তার ভাতিজা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্স এবং মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স নিযুক্ত করেন। যা ছিল বড় ধরনের রাজনৈতিক খেলা। সেই চক্রেই নতুন খেলা শুরু করেন এমবিএস।
২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে চাপ দিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে তাকে গৃহবন্দী করা হয় এবং তার নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর নিজে ক্রাউন প্রিন্স হন মোহাম্মদ বিন সালমান। একই সালে শতাধিক প্রভাবশালী রাজপুত্র, মন্ত্রী এবং ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার ও আটক করেন তিনি। শুধু পদবী পাওয়া নয়, এমবিএস তার ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী ও নিরঙ্কুশ করার জন্য একাধিক কৌশল অবলম্বন করেন।
সৌদি আরব বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে ‘শুরা’ ও জ্যেষ্ঠ প্রিন্সদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঐতিহ্যে বিরাম টেনে নিজেকে এক এবং একমাত্র শাসক হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। যে সিদ্ধান্ত সৌদি রাজপরিবারের ঐক্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকির বলে মনে করেন তিনি।
মসনদে টিকে থাকার কৌশল হিসেবে ভিশন ২০৩০ নামে একটি উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন তিনি। মূল লক্ষ্য তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করা এবং সমাজকে আধুনিকীকরণ করা। যা তাকে পশ্চিমা এবং তরুণ সৌদি জনগণের কাছে প্রগতিশীল, সংস্কারক নেতা হিসেবে উপস্থাপন করে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী ক্ষমতাধর নেতা।
কিউএনবি/আয়শা/০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /সন্ধ্যা ৭:৫৫