বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : করতেন ব্যবসা। এ পেশা থেকে বাৎসরিক আয় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। নগদ ছিলো ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া স্থাবর কিংবা অস্থাবর নেই। বাবা শাহ জাহান ভুইয়া থেকে তিন লাখ ও ভগ্নিপতি আবু হানিফ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে ভোট লড়বেন। ২০১৪ সালে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে গিয়ে হলফনামায় এমনটাই উল্লেখ করেছিলেন মো. মুরাদ হোসেন ভুইয়া। ভোটে জিতেন মুরাদ হোসেন।
২০১৯ সালে আবারো তিনি ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তিনি। পেশায় লিখেছেন কৃষিজীবী। তবে ব্যবসা বা অন্য খাত থেকে আয়ের কথা উল্লেখ করেননি। অর্থাৎ তিনি ‘বেকার’। তবে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বছরে তিন লাখ ২৪ হাজার টাকা সম্মানী পান তিনি। তার হাতে তখন নগদ ১০ গুন বেড়ে পাঁচ লাখ টাকা। আছে ৩০ ভরি স্বর্ণ। এটা ছিলো ওই সময়ে দেওয়ার হলফানামার তথ্য।
ভোট জয়ী হয়ে এবার যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেলেন মুরাদ হোসেন! একটি ইটভাটার মালিক তিনি। যৌথ মালিকানায় ৬০ শতাংশ জমির মালিক হয়েছেন। যার মূল্য হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে দুই লাখ টাকা। এছাড়া তার ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের বাড়ি রয়েছে, যা পিতা হেবা দলিল করে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন তার বাৎসরিক আয় পাঁচ লাখ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার কাছে যে ৩০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে সেটি বিয়েতে উপহার হিসেবে পাওয়া বলে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইটভাটাটি তিনি এক কোটি ১০ লাখ টাকায় কিনেছেন। এরপর এটাকে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করতে আরো প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো খরচ করেন। ২০১৯ সালে জমা দেওয়া হলফনামায় আয় হিসেবে সম্মানি ভাতা বাদে আর কিছু না থাকলেও হুট করে কোটি টাকার ইটভাটার মালিক হয়ে যাওয়া নিয়ে মুরাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন থেকেই যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মুরাদ হোসেন ভুইয়া। বাড়ি উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের ভাটামাথা গ্রামে। পর পর দুইবার তিনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। এর আগে উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়কও ছিলেন।
আগামী ২১ মে আখাউড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘ঐক্যের প্রার্থী’ হিসেবে ভোটে লড়ছেন মো. মুরাদ হোসেন ভুইয়া। বৃহস্পতিবার তিনি আনারস প্রতীক বরাদ্দ পান। ইতিমধ্যেই তিনি শুরু করে দিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণা। যদিও আওয়ামী লীগ ঘরানার আরো দুই প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। তারা হচ্ছেন, আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ বোরহান উদ্দিন আহমেদ এবং আখাউড়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক ও মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন।
বোরহান উদ্দিন দোয়াত কলম ও মনির হোসেন ঘোড়া প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। মুরাদ হোসেন ঐক্যের প্রার্থী হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ভুইয়া , আওয়ামী লীগ ঘরানার আরো দুই প্রার্থী গোলাম সামদানী ফেরদৌস ও বাছির মো. আরিফুল হক মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। তবে মুরাদ হোসেনকে ঐক্যের প্রার্থী বলা হলেও ইতিমধ্যেই দলের নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে তিন প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন।
এদিকে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ি, শেখ বোরহান উদ্দিন রবিবার তার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। পৌর কার্যালয়ে মুরাদ হোসেন আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচিত ও মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হয়ে শেখ বোরহান উদ্দিন জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সম্মানার্থে তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি মুরাদ হোসেনকে জয়ী করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সর্বশেষ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সাধারন মানুষ থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন মুরাদ হোসেন। তিনি ইটভাটাসহ অন্যান্য ব্যবসায় বেশ মনযোগি ছিলেন। উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা-সমাবেশেও তিনি খুব একটা উপস্থিত হতেন না। দিনকে দিন তিনি নানা কারণে এলাকায় বিতর্কিত হয়ে উঠেন।
কিউএনবি/আয়শা/০৭ মে ২০২৪,/দুপুর ১২:৩৩