স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর) : যশোরের মনিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নে ভিজিএফ কার্ড বিতরনে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মৃত ব্যক্তি প্রবাসী ও ধনাঢ্যদের নামে কার্ড বরাদ্দ করে চাল আত্মসাত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ভূক্তভোগীদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকার অতিদরিদ্রদের জন্য ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেন। সে হিসেবে উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নে এক হাজার নয়’শ কার্ড বরাদ্দ হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মৃত ব্যক্তি প্রবাসী ভূয়াব্যক্তি এবং ধনাঢ্যদের নামে কার্ড বরাদ্দ দিয়ে অধিকাংশ চাল আত্মসাত করেন।
সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানাযায়, বড়চেতলা গ্রামের আক্কাস আলীর স্ত্রী আছিরোন নেছা মারা গেছেন সাত মাস আগে। অথচ মৃত আছিরোন নেছার নামে ভিজিএফ কার্ড(নং ১৩১০) বরাদ্দ করে চাল উত্তোলন করা হয়েছে । আবার কোলা গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে সাকিব হাসান তিন বছর আগে পাড়ি জমিয়েছেন মালয়েশিয়াতে। সাকিবের নামে কার্ড(নং১২৪৪) বরাদ্দ করে চাল উত্তোলন করা হয়েছে। আলমগীর হোসেন(কার্ড নং ১২৬২), শাহাবুদ্দিন আহমেদ(কার্ডনং ১৩৫৩), সুমন হোসেন(কার্ডনং ১৩৯০), সায়ফুল ইসলাম(কার্ডনং১৩৭৯)ও রয়েছে বিদেশে। অথচ তাদের নামে কার্ড বরাদ্দ দিয়ে চাল উত্তোলন করা হয়েছে।
অন্যদিকে বড়চেতলা গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে আব্দুর রহমান, শহর আলীর স্ত্রী মুন্নি বিবি, তকব্বর আলীর স্ত্রী ময়না খাতুন, আবু তালেবের স্ত্রী রোকেয়া পারভীন, কোলা গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম, সোলায়মান গাজীর স্ত্রী নাছিমা খাতুন, আতিয়ার রহমানের স্ত্রী রেহেনা খাতুন, তাজপুর গ্রামের মামুন শেখের ছেলে নজরুল ইসলাম, অহেদ আলীর ছেলে আব্দুস সালাম, ফজর আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম ও আব্দুল কাদের, জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী ঝরনা বেগম, মফিজুর রহমানের ছেলে আব্দুল বারিক সহ অনেকের নামে কার্ড বরাদ্দ করে চাল উত্তোলন করা হয়।অথচ এসব ব্যক্তিদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল করিম অভিযোগ করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান এসব ভূয়া নাম দিয়ে সমুদয় চাল আত্মসাত করেন। রেজাউল করিমের অভিযোগ এ ওয়ার্ডের তিনি সদস্য হলেও তার কাছ থেকে তালিকা নেওয়া হয়নি। চেয়ারম্যান তার পছন্দের লোকদের দিয়ে তালিকা প্রস্তুত করেন। তবে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক চাল আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইউপি সদস্য রেজাউল করিম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তালিকা জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ঝর্না বেগম ও গ্রাম পুলিশ সুজন হোসেনের দেওয়া তালিকা অনুসারে কার্ডের মাধ্যমে চাল বিতরণ করা হয়।
তবে মহিলা সদস্য ঝর্না বেগম ও গ্রাম পুলিশ সুজন হোসেন জানান, তারা এ তালিকার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যানের দেওয়া ভিজিএফ কার্ডের তালিকা যাচাই বাছাই না করেই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিদ অনুমোদন করেন। এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ বায়েজিদের মোবাইল ফোনে একাধীকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে উপসহকারি প্রকৌশলী গোলাম সরোয়ার বলেন, স্বল্প সময়ের কারনে তালিকা যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে এলাকার ভূক্তভোগীদের পক্ষ থেকে ইউপি সদস্য রেজাউল করিম বাদি হয়ে ২৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ভিজিএফ নিয়ে অনিয়ম এবং দূর্নীতি কোন অবস্থাতেই বরদাশত করা হবেনা। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিউএনবি/আয়শা/২৮ এপ্রিল ২০২৪,/সন্ধ্যা ৬:৫০