এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : আজ শনিবার যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বেলা ৩টার দিকে যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া দপ্তর এ তাপমাত্রা রেকর্ড কর হয়। একদিকে প্রচন্ড রোদের তাপে ভ্যাপসা গরম অন্যদিকে চৌগাছায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। প্রাণী কুলের মাঝে দেখা দিয়েছে হাসফাস।
এক সপ্তাহ ধরেই খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে এ বিভাগের যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা বাড়ছে।তিন দিন আগে ১৮ এপ্রিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এদিনতাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ১৯ এপ্রিল যশোর জেলায় তাপমাত্রা বেড়েদাঁড়ায় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ শনিবার (২০ এপ্রিল) যশোর জেলায় তাপমাত্রা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর চুয়াডাঙ্গা জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে প্রচন্ড গরমে নাকাল হয়ে পড়েছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার সাধারণ মানুষের জীবন। শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। একদিকে প্রচন্ড গরম অন্যদিকে ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। গরমে গলে গেছে কয়েকটি পিচঢালা সড়ক। প্রখর রোদ ও ভেপসা গরম উপেক্ষা করেই শ্রমজীবিরা তাদের কাজ করছেন। সূর্যের তাপ এতই বেশি যে খোলা আকাশের নিচে হাঁটলেও গরম বাতাস লাগছে চোখে-মুখে। যাত্রাপথে ছাতা মাথায় দিয়ে তাপ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন পথচারীরা।
চৌগাছায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় স্বস্তিতে নেই শ্রমজীবী মানুষ। কেউ কেউ রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন পানির কল থেকে হাতে মুখে ও মাথায় পানি দিয়ে ঠান্ডা হওয়ার চেষ্টা করছেন। আর শিশু-কিশোরেরা গরম থেকে রেহাই পেতে মাতছে নলফুপের হাউজের মধ্যেডান্ডা পানিতে গোসলে।উপজেলার বেলেমাঠ গ্রামের ভ্যান করে সবজি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, তীব্র গরমের কারণে ভ্যানে সবজি নিয়ে যেতে ব্যাপক কষ্ট হচ্ছে। এত গরম যে তাজা সবজি ভ্যানে তুলতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড গরমে মাথার মধ্যে ঘুরিয়েউঠছে। তার পরেও সবজি বিক্রি না করলে তো সংসার চলবে না।
চৌগাছা পৌর শহরের চা দোকানি উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রামের আব্দুল মুন্নাফ কালু মুল্লাহ বলেন, মানুষ বাইরে কম বের হচ্ছে। যারা বাইরে আসছেন, গরমের সঙ্গে তাদেরও মেজাজ গরম থাকছে। মানুষের সঙ্গে ভালো করে কথা বলা যাচ্ছে না। ফলে চা-পানের দোকানে লোক আসছে না। কেউ খেতে চাচ্ছে না। বেঁচা-বিক্রি নেই তাই দোকান সকালে খুলে আবার বন্ধ করে দিয়েছি।
পৌর শহরের বাসিন্দা আব্দুল মান্নানের স্ত্রী শাপলা বেগম বলেন, প্রচন্ড গরমের ফলে বাসার ছাদের পানির রিজার্ভট্যাংকের পানি অনেক গরম হয়ে যাচ্ছে। তাই দুপুর বারোটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানিতে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। এদিকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বাসার টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে পানি সংকটে পড়েছি। যে টিউবওয়েলে এক চাপে আড়াই লিটার পানি আসত, এমন টিউবওয়েলে অকেজ হয়ে পড়ে রয়েছে।
চৌগাছা শহরের নাসির হোটেল এলাকায় আখের রস বিক্রেতা আব্দুল আজিজ বলেন, গরম বাড়ায় তার আখের রস বিক্রি বেড়েছে। মানুষ পিপাসা মেটাতে ও একটু স্বস্তি নিতে ঠান্ডা আখের রস কিনে খাচ্ছেন।যশোর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছেন, এ দাবদাহ আরও কিছুদিন বিরাজ করবে। বাতাসে জলীয় বা®েপর পরিমাণ বেশি হওয়ায় অস্বস্তি বাড়বে।
গ্রীন ওয়ার্ন্ড এনভাইরনমেন্ট ফাউন্ডেশন যশোরের নির্বাহী পরিচালক আশিক মাহমুদ সবুজ বলেন, জেলায় ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ব্যাপকহারে বেড়েছে। পুকুর জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে।অপরিকল্পিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপনের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দ্রুত জলাধার সংরক্ষণ আইন পাস না করলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে তীব্র পানি সংকট দেখা দেবে।যশোর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশল জাহিদ পারভেজ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ওয়াটার টেবিলের লেয়ার নি¤œমুখী। ওয়াটার লেভেল নেমে যাওয়ার কারণে সুপেয় পানির যাতে সংকট না হয় সে জন্য উপজেলা পর্যায়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সাবমারসিবলের পানি সরবরাহ নিশ্চিত রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/২০ এপ্রিল ২০২৪/সন্ধ্যা ৭:৪৫