ডেস্ক নিউজ : পাবলাখালি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য দেশের দ্বিতীয় সংরক্ষিত বন। রাঙামাটির বাঘাইছড়ির কাচালং নদী তীরবর্তী বনের আয়তন প্রায় ৪২ হাজার ৮৭ হেক্টর। চিরসবুজ এ বনের পাশে লংগদু উপজেলার গুইলস্যাখালি, ভাসাইন্যাদাম, বগাচত্বও, রাজনগর, চাইল্যাতলী। বন ছেড়ে এসব এলাকায় গত ১২ বছরের বেশি সময় ধরে বন্য হাতির বিচরণ। কখনো কখনো খাবারের খোঁজে হাতির পাল কাপ্তাই লেক পাড়ি দিয়ে বরকলের বরুণাছড়ি পর্যন্ত বিচরণ করে। হাতির বিচরণ করা এলাকাগুলোতে মানুষের বসতি থাকায় এসব এলাকায় মানুষের সঙ্গে হাতির দ্বন্দ্ব তীব্র।
এলিফেন্ট রেসপন্স টিম : তিন বছর আগে হাতির সুরক্ষায় স্থানীয়দের সম্পৃক্ততায় গড়ে তোলা হয়েছে এলিফেন্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করেছে বন বিভাগ। বর্তমানে এ টিমের সদস্য সংখ্যা ১১ জন। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হাতির জীবন সুরক্ষার পাশাপাশি হাতি রক্ষায় মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেন এ টিমের সদস্যরা। হাতির অবস্থান জানিয়ে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সতর্কও করেন তারা। টিমের সদস্য মো. জয়নাল বলেন, ‘হাতি আমাদের ক্ষতি করলেও আমরা হাতির ক্ষতি করি না। হাতি ক্ষতি করলে আমরা সরকারকে জানাই। এর আগেও ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কীভাবে হাতির দ্বারা ক্ষতি কমানো যায় সে বিষয়ে স্থানীয়দের পরামর্শ দিই। হাতির অবস্থান জানিয়ে সাধারণ মানুষকে সর্তক করে দিই।
টিমের সদস্য রমজান আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে হাতি স্থানীয়দের ক্ষতি করে আসছিল। বন বিভাগ আমাদের নিয়ে কমিটি করল। এরপর থেকে আমরা মানুষকে সচেতন করি- হাতি ক্ষতি করতে পারবে কিন্তু হাতির ক্ষতি করা যাবে না।’ইআরটি’র সংগঠক ও ভাস্যাইনাদাম ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা এবং হাতি মিলেমিশে আছি। কিছুদিন আগে হাতি অসুস্থ হয়েছিল। আমরা হাতির চিকিৎসা করেছি। এলাকাতে হাতি কীভাবে নিরাপদ থাকবে, আমরা কীভাবে নিরাপদ থাকব সে বিষয়ে আমরা সবসময় কাজ করছি।’
হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন : রাঙ্গাপানি ছড়ার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মোমিন বলেন, বুধবার সকালে বাগানে ছাগল বিচরণ করছিল। ছাগলটি হাতির সামনে পড়ে যায়। পায়ে পিষ্ট করে ছাগলটিকে মেরে ফেলে। বন বিভাগ ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করতে বলেছে। খাবারের খোঁজে আসা বন্য হাতির পাল প্রায়ই ধানের জমি, পেঁপে বাগান, সবজি খেতের ক্ষতি করে। অনেক সময় ঘরবাড়ি বিনষ্ট করে। ২০২০ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা গেছে তিনজন ও আহত হয়েছে ছয়জন। বন্য হাতি পাল ধানের জমি, সবজি, ফলদ বাগানের ক্ষতি এবং মানুষের প্রাণহানি ঘটালে যাচাই-বাছাই করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
পাবলাখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সজীব কুমার মজুমদার বলেন, ‘ফসলের ক্ষতির জন্য সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা, হাতির দ্বারা আহত হলে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ও কেউ নিহত হলে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। ১০৮ জন ক্ষতিগ্রস্তকে ২৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণ পাওয়ায় কেউ হাতিকে আক্রমণ করে না। হাতির দ্বারা ফসলের ক্ষতি, কেউ আহত বা নিহত হলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হয়। যাচাই বাছাই শেষে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন ‘যদি করে হাতি ক্ষতি, সরকার দিবে ভর্তুকি’-এ স্লোগানটি স্থানীয়রা খুব ভালো করে মুখস্থ করেছে। তারা হাতির কোনো ক্ষতি করে না। ’
তবে হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে হাতিকে বনাঞ্চলে ফেরানোসহ স্থায়ী সমাধনের লক্ষ্যে কাচালং বন রক্ষায় প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যেসব জায়গায় বনের ক্ষতি হয়েছে সেখান থেকে কিন্তু হাতি সরে যাচ্ছে। হাতি লোকালয়ে চলে আসছে। সবুজ লতাপাতা গাছপালা ঘেরা পাহাড়ি জঙ্গলে হাতির বিচরণ বাড়ছে। হাতি যেন বনাঞ্চল ফিরে সেই চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য সরকারসহ বিদেশি দাতা সংস্থার কাছে প্রকল্প দেওয়া আছে। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে হাতি লোকালয় ছেড়ে বনে ফিরে যাবে।
কিউএনবি/আয়শা/১১ ডিসেম্বর ২০২৩,/রাত ৯:০৮