ডেস্ক নিউজ : নির্মাণ সামগ্রীর দাম ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে ফ্ল্যাটের দাম, এতে ফ্ল্যাটের বাজার বর্তমানে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। ব্যবসায়ীরা জানান, ২০২২ সালে প্রতি টন রডের দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে প্রতি টন রডের দাম ওঠানামা করছে কোম্পানিভেদে ৮৮ হাজার থেকে লাখ টাকার মধ্যে।
মূল্যস্ফীতির প্রভাবও পড়ছে নির্মাণসামগ্রীর দামে। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল প্রাইস ইনডেক্স বা বিএমপিআই অক্টোবর মাসে বেড়েছে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ, যা গত সেপ্টেম্বর থেকে দশমিক ০৯ শতাংশ কম হলেও গত ফেব্রুয়ারির ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ থেকে দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। এর আগে আগস্ট মাসে বিএমপিআই বেড়েছিল সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে এ খাতে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে এলেও তা এখনও অনেক বেশি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে বাজারে কোম্পানিভেদে ’৬০ গ্রেড’ ও ’৫০০ডব্লিউ গ্রেড’ রড বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ৮৮ হাজার থেকে ৯৯ হাজার টাকার মধ্যে। সামান্য কমে বিক্রি হচ্ছে ‘৪০ গ্রেড’ রড। অথচ কয়েক মাস আগেও রডের দাম ছিল কোম্পানি ও গ্রেডভেদে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকার মধ্যে। রাজধানীর ইংলিশ রোড আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রচার সম্পাদক ও নয়াবাজার মোড়ে অবস্থিত প্যারাডাইজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাজ্জাদ হোসেন সোহেল সময় সংবাদকে বলেন,
বর্তমানে ৬০ গ্রেড ও ৫০০ ডব্লিউ (৭২ গ্রেড) রডের দাম কোম্পানিভেদে প্রতি টন ৮৮ হাজার থেকে ৯৯ হাজার টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে। যেমন ‘৫০০ ডব্লিউ’ গ্রেডের রডের দাম বিএসআরএম এর প্রতি টন ৯৯ হাজার টাকা ও রহিম স্টিল মিলের প্রতি টন ৯২ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে বন্দর স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ বা বিএসআই-এর ৬০ গ্রেড বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ৮৮ হাজার টাকা, এবং ‘৫০০ ডব্লিউ’ গ্রেড বিক্রি হচ্ছে ৮৯ হাজার টাকায়। অথচ গত বছর একই সময় এই দর ছিল ৮০ হাজার টাকার মধ্যে।
রডের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ডলার সংকটের কারণে কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলার হার কমার কথা জানালেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি কাঁচামালের অভাবে মিলগুলো সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না বলেও জানান তারা।
তিনি আরও বলেন, আগে ৫ শতাংশ মার্জিনে কাঁচামাল আমদানি করা যেত, এখন ব্যাংক মার্জিনও বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূলধনও কমে গেছে। এর ফলে ব্যবসায় তো প্রভাব পড়ছেই, সব মিলিয়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রি ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
রডের পাশাপাশি দাম বাড়ছে সিমেন্টেরও। সিমেন্টের কাঁচামালও আমদানি নির্ভর হওয়ায় ডলার সংকটের প্রভাব পড়ছে দেশের সিমেন্ট শিল্পেও। দাম বাড়ার কারণে চাহিদা কমছে সিমেন্টের, অপরদিকে চাহিদা কম থাকায় মিলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বস্তাপ্রতি গড় উৎপাদন খরচ বাড়ছে সিমেন্ট কারখানাগুলোর। এতে লোকসানের সম্মুখীন হওয়ার দাবি জানান সিমেন্ট উৎপাদকরা। বর্তমানে কোম্পানিভেদে ৫০ কেজির সিমেন্টের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ থেকে ৫৭০ টাকার মধ্যে।
তিনি বলেন, সক্ষমতার থেকে চাহিদা বর্তমানে অনেক কম। পাশাপাশি নির্মাণ খাতের মৌসুম হিসেবে শীতকালকে ধরা হলেও এবার সিমেন্টের চাহিদা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। ফলে চাহিদা না থাকায় সক্ষমতা সত্ত্বেও পূর্ণ উৎপাদনে নেই বেশিরভাগ সিমেন্ট কারখানাই। এতে লোকসানের মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে কারখানাগুলো। সব মিলিয়ে কোম্পানিগুলো এখন টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। যেখানে বছরের এ সময় সিমেন্টের চাহিদা ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়, সেখানে বর্তমানে এখনও চাহিদা বাড়ার বদলে চাহিদা বরং কমতির দিকে।
নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি অপরদিকে হরতাল অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দেশে নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা কমে গেছে উল্লেখ করে গত বছরের তুলনায় বিক্রি ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ার কথা জানান এই খাতের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
রড সিমেন্টের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ডলারের দাম বাড়ার কারণে রড সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেন দেশের আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি শামসুল আলামিন। সময় সংবাদকে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ধাপে বেড়ে গেছে কনস্ট্রাকশন ম্যাটেরিয়ালের দাম। একবার দাম বেড়েছিলো ইউক্রেন যুদ্ধের সময়। সে সময় তেলের দাম বাড়ার কারণে, জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়ে গিয়েছিল। তার পর ডলারের দাম হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করার কারণে তার প্রভাবও সরাসরি আমাদের খাতে পড়ে। কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেছে।
কিউএনবি/আয়শা/২৪ নভেম্বর ২০২৩,/দুপুর ২:১৫