রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
পরিবারে সুখ ফেরাতে বিদেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন শার্শার রনি শার্শায় গৃহবধূকে গনধর্ষণের অভিযোগ কোম্পানীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তরুণের মৃত্যু মনিরামপুর প্রেসক্লাবের দাতা সদস্যের বোনের ইন্তিকাল মনিরামপুরে রশীদ বিন ওয়াক্কাসকে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা আটোয়ারীতে কিন্ডারগার্টেনের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও সনদপত্র বিতরণ পাঁচদোনা টু ডাঙ্গা চারলেন সড়ক অপরাধীদের অভয়ারণ্যে  চৌগাছায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠিত দৌলতপুরে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিনের দাফন সম্পন্ন চৌগাছায় ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বিএনপি নেতাকে পিটিয়েছে প্রতিবেশী পুলিশ সদস্য

২০ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েতে ৩১ ওঠানামার পথ

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৭২ Time View

বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হয়েছে ঢাকা শহরের ভেতরের যানজট কমাতে। ফার্মগেট পর্যন্ত আংশিক খুলে দেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে শহরের যানজটের নতুন নতুন স্পট তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন এসব স্পটে যানজটের চরম ভোগান্তি সইতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। দ্রুতগতির এই উড়াল সড়ক হয়ে ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাবে যেসব গাড়ি সেগুলো যাতে শহরের ভেতর ঢুকতে না হয়। অথচ ৩১টি র‌্যাম্প (ওঠানামার পথ) করে দিয়ে উড়াল সড়কটিকে শহরের সাধারণ সড়কে পরিণত করা হয়েছে। এই র‌্যাম্পগুলোর দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটারের বেশি; যা এক্সপ্রেসওয়ের চেয়েও সাত কিলোমিটার বেশি দীর্ঘ। আর বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটারে র‌্যাম্প রাখা হয়েছে ১৫টি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বেশি র‌্যাম্প থাকার কারণে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি র‌্যাম্পগুলো ঢাকার নতুন যানজট স্পট তৈরি করেছে। ফলে সরকারের প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই মেগা প্রকল্পের সুফল মিলছে না। যদিও প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পুরোটা খুলে দিলে যানজট হবে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা তা মনে করছেন না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ঢাকাকে বাইপাস করা। কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকার আরেকটা সড়কে পরিণত হয়েছে। পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব) প্রকল্প হওয়ায় যত্রতত্র র‌্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। এতে করে প্রকল্প ব্যয় ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার ঢাকার যানজট নিরসনের নামে একের পর এক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে ব্যথার চিকিৎসায় দেওয়া হচ্ছে ঠাণ্ডার ওষুধ; এভাবে জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলা হয়েছে। এসব কাজে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।’

এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না উল্লেখ করে ড. মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, ‘শুধু নির্মাণখাত সংশ্লিষ্টদের মতামত অনুসরণ করে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এজন্য যেনতেন প্রকল্প হচ্ছে। এতে সরকারের বিপুল অর্থ গচ্চা যাচ্ছে।’ এ ক্ষেত্রে অপচয় হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অপচয় বন্ধ করতে হলে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এটা করতে হলে আইন করা দরকার, বাংলাদেশে সেই আইন নেই। আইনের আওতায় দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া ছাড়া এসব অপচয় বন্ধ হবে না। আর এটা যোগাযোগ খাতের প্রকল্পের মাধ্যমে শুরু করা দরকার।’

ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইইবি) সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নকশায় র‌্যাম্প সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, যাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বেশিসংখ্যক গাড়ি ওঠে এবং টোল আদায় বেশি হয়। যদি ঢাকার যানজট নিরসন এবং আরিচা, যমুনা ও আশুলিয়া এলাকার গাড়িগুলো দ্রুত শহর পার করা প্রধান উদ্দেশ্য হতো, তাহলে র‌্যাম্পসংখ্যা অনেক কমানো যেত। এখন যে র‌্যাম্প রাখা হয়েছে, তার তিন ভাগের এক ভাগ র‌্যাম্প দিয়েই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পরিচালনা করা সম্ভব হতো।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী গিয়ে শেষ হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ঢাকার যানজট নিরসনে এটা সরকারের নেওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। পাশাপাশি আশুলিয়া-বিমানবন্দর পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত হবে বিমানবন্দর-কুতুবখালী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে। দুটি প্রকল্প সেতু কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করলেও বিস্তর ফারাক রয়েছে। অর্থাৎ, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে র‌্যাম্প রেখেছে ৩১টি, আর আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ২৪ কিলোমিটারে র‌্যাম্প রেখেছে সাতটি। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপির আওতায় বাস্তবায়ন হওয়ায় টোল আদায়কে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আর আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঋণ সহায়তা ও নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে সরকার। এ কারণে টোল আদায়ের বিষয়টি এখানে বেশি গুরুত্ব পায়নি। আর সেজন্যই সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলীরা বলছেন, আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে ঢাকা এলিভেটেডের মতো ভোগান্তি হবে না।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। র‌্যাম্প রাখা হয়েছে ১৫টি, যেগুলোর দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার। র‌্যাম্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দরে দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয়সরণিতে দুটি ও ফার্মগেটে একটি। এর মধ্যে বনানী ও মহাখালীর একটি করে দুটি র‌্যাম্প চালু হয়নি।

র‌্যাম্পের কারণে ফার্মগেটের যানজট এখনো এ পথে যাতায়াত করা মানুষের জন্য বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া মহাখালী ও বনানীতে র‌্যাম্পের আশপাশের সড়কে যানজট হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প। বিনিয়োগকারীদের এখান থেকেই লাভসহ খরচ ওঠাতে হবে। সেজন্য নকশায় আয় বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘র‌্যাম্প কম হলে ভালো হতো না মন্দ হতো; তার ব্যাখ্যার কোনো শেষ নেই। পছন্দ ও অপছন্দের কোনো শেষ নেই; যেমন প্রয়োজন সে রকম নকশা করা হয়েছে ঢাকা এলিভেটেডের। এটা নিয়ে বিভিন্ন লোক বিভিন্ন কথা বলছে, এটা বলবে। সেসব তো আর বন্ধ করা যাবে না।’

প্রকৌশলী ফেরদাউস আরও বলেন, ‘পুরো প্রকল্প চালু হলে ফার্মগেট এলাকাসহ অন্যান্য স্পটের যানজট কমে যাবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের আমি বিশেষজ্ঞ মনে করতে পারছি না।’

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সড়ক নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রাথমিকভাবে এক্সপ্রেসওয়ের গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পরে গতিসীমা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ফাস্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বিনিয়োগকারী কোম্পানি। এখানে ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার ৫১ শতাংশ, চায়না শানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপের (সিএসআই) শেয়ার ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের শেয়ার ১৫ শতাংশ। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সব ধরনের যানবাহন চলালেও মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার চলাচলের অনুমতি নেই। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বনিম্ন টোল ৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ টোল ৪০০ টাকা।

প্রকল্পের সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি প্রায় ৬৫ শতাংশ। ফার্মগেট থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হবে আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে। নির্মাণ-পরবর্তী সাড়ে ২১ বছর টোল আদায় করবে বিনিয়োগকারী সংস্থা।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৬ অক্টোবর ২০২৩,/বিকাল ৫:২৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit