গাজী গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি : আগামী অক্টোবরের ১২তারিখ থেকে ২নভেম্বর মা ইলিশ ধরার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা আসছে। নিষেধাজ্ঞা আসার খবর পেয়ে মা ইলিশ নিধনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিছু অসাধু জেলে। ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব অসাধু জেলেরা নতুন নতুন একাধিক নৌকা ক্রয় করাসহ ডজন ডজন কারেন্ট জাল সংগ্রহ করা শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার পুরনো জাল ও নৌকা মেরামত করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার “ভবানীপুর, হদুয়া,খোজাখালি,অনুরাগ,মগড় ও চর বহরমপুর” এলাকার কিছু অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধনের সকল আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছেন। তারা একাধিক কারেন্ট জাল ও তিন/চারটি করে নৌকা সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্যে বিশাল একটা অংশ আছে যারা মৌসুমি জেলে। যারা সারাবছর অন্য পেশায় নিয়োজিত থাকলেও মা ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে দাপিয়ে বেড়ান। যার কারনে প্রশাসনকেও নিষেধাজ্ঞা সফল করতে বেগ পেতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মৌসুমি জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় এক ঘন্টা ঠিকমত নদীতে জাল ফেলতে পারলে ৮-১০হাজার টাকা আয় করা যায়। তাই অনেকেই এই লোভে পরে মা ইলিশ শিকারে নেমে পরে। একটা জাল কিনতে খরচ হয় ৩-৪হাজার টাকা আর নৌকা ক্রয় করা যায় ৩হাজার টাকায় যা একদিনের আয়ের তিন ভাগের একভাগ। যদি প্রশাসন জাল ও নৌকা নিয়েও যায় তাতে তেমন সমস্যা হয় না। নিবন্ধিত জেলে মো. হেলাল হাওলাদার জানান, মা ইলিশ শিকারে যে সকল অসাধু জেলে নদীতে নামেন তাদের মধ্যে বড় একটা অংশ থাকে মৌসুমি জেলে যারা মূলত জেলে পেশায় নিয়োজিত না।
কেউ কৃষিকাজ করেন, কেউ বাবুর্চির কাজও করেন কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার সময় এলেই তারা মা ইলিশ নিধনে নদীতে দাপিয়ে বেড়ান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জেলে জানান, ভবানীপুরে বাবা- ছেলের দাপটেই থাকে এই নিষেধাজ্ঞার মৌসুম। জানা গেছে ছেলে সবুজ হাওলাদারের নাম নিবন্ধিত থাকলেও সে অতি লাভের আশায় মা ইলিশ নিধনে নদীতে দাপিয়ে বেড়ান। কিন্তু যারা নিবন্ধিত জেলে তারা বেশিরভাগই ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামতে চান না। কারন প্রশাসন ধরে সাজা দিলে জেলে কার্ডটি বাতিল হতে পারে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞায় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য নিবন্ধিত জেলেদের সরকারের পক্ষ থেকে চাল বিতরণ করা হয়। তাই আমাদের উচিত নিষেধাজ্ঞায় মা ইলিশ নিধন না করে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করা।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন,প্রতি বছর ইলিশ রক্ষার অভিযানের সময় মৌসুমী জেলেরা দলে দলে নদীতে জাল নিয়ে নেমে পড়েন। এরা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে নদীতে মা ইলিশ শিকার করেন। অনেক সময় দেখা যায় প্রশাসনের লোকজন নদীতে ধাওয়া দিয়ে একবাক থেকে অন্য বাকে যেতে না যেতেই তারা আবার নদীতে নেমে পড়েন। এদের প্রতিহত করতে না পারলে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানও সফল হবে না আর ইলিশ সম্পদেরও উৎপাদনও বাড়বে না।
ঝালকাঠি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জানান, আমাদের সার্বক্ষনিক নজরদারির জন্য ট্রলার থাকে ২৪ ঘন্টা ট্রলারে টহল রাখি এবং ট্রলারে আমরাও থাকি। যে বা যারা আইন অমান্য করে নিষেধাজ্ঞার সময় মা ইলিশ নিধনে নদীতে নামবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। মা ইলিশ রক্ষায় সরকার বদ্ধ পরিকর। নিবন্ধিত জেলেদের ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য নানান ভাবে সহায়তা করা হচ্ছে।
কিউএনবি/আয়শা/০৮ অক্টোবর ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:৪৮