ডেস্ক নিউজ : হাদিসে আছে, ‘পৃথিবীর মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হলো মসজিদ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদ, আর সবচেয়ে খারাপ জায়গা হলো বাজার।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৭১)
মসজিদের মালিক আল্লাহ। পৃথিবীর সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। এর পরও বিশেষভাবে মসজিদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে মসজিদের মালিকানা আল্লাহর। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, অতএব তারা যেন ইবাদত করে এই গৃহের মালিকের।’ (সুরা: কুরাইশ, আয়াত: ৩)
পৃথিবীতে অনেক সুন্দর সুন্দর মসজিদ তৈরি হয়েছে। মসজিদ প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন, যে আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৪৫০)
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সমুদ্রপাড়ের প্রকৃতির কোল ঘেঁষে তৈরি হয়েছে অনেক মসজিদ। অসাধারণ সৌন্দর্যে নোনাজলের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এ মসজিদগুলো। এমন অসাধারণ ১০টি মসজিদ ২০২৩ সালে আলোচনায় উঠে এসেছে।
সুলতান আহমেদ মসজিদ (তুরস্ক)
তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত। চোখজুড়ানো স্থাপত্যশৈলী, চমৎকার আবহাওয়ায় সমুদ্র তীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি এ মসজিদ। উসমানি সুলতান প্রথম আহমেদ ১৬০৯ থেকে ১৬১৫ সালের মাঝামাঝি মসজিদটি নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক এ মসজিদটির স্থপতি ছিলেন তৎকালীন প্রখ্যাত প্রযুক্তি ও স্থাপত্যবিদ সেদেফকার মুহাম্মদ আগা।
কামাল আতাতুর্ক ১৯৩৪ সালে ‘আয়া সুফিয়া মসজিদ’কে জাদুঘর বানিয়ে নিলে ব্লু মসজিদ ইস্তাম্বুলের প্রধান মসজিদে পরিণত হয়। মসজিদটিতে মুসল্লির ধারণক্ষমতা প্রায় ১০ হাজার।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ (আমিরাত)সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির অন্যতম আকর্ষণ শেখ জায়েদ মসজিদ। প্রতিবছর লক্ষ মানুষ আবুধাবিতে যান শুধু এই মসজিদটি দেখতে।
আবুধাবির জাঁকজমকপূর্ণ এই মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। প্রায় ৫৪৫ মিলিয়ন ডলার এবং ১২ বছর সময় লাগে এর কাজ শেষ করতে। বর্তমান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এই মসজিদটির আয়তন ২২ হাজার ৪১২ বর্গমিটার, যা প্রায় চারটি ফুটবল মাঠের সমান। একসঙ্গে এই মসজিদে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। এ ছাড়াও বৃহত্তম হাতে বোনা কার্পেট, বৃহত্তম ঝাড়বাতি এবং বৃহত্তম গম্বুজের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে রয়েছে এই মসজিদের নাম। বিশ্বমানের ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩ হাজার কর্মী এই মসজিদটি তৈরিতে কাজ করেছেন।
সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ (ব্রুনাই)
১৯৫৪ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৫৮ সালে। এই মসজিদের ডিজাইন করেছেন ইতালিয়ান স্থপতি ক্যাভালিয়ের রুডলফ নোলি। দক্ষিণ এশিয়ায় বেশ কিছু স্থাপত্য কাজের জন্য নন্দিত ও খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। মুঘল ও ইতালিয়ান স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণে এই অসাধারণ স্থাপনার নির্মাণকাজ করেছে ‘এ. ও কোল্টম্যান অব বুটি অ্যান্ড এডওয়ার্ড চার্টার্ড’ কোম্পানি।
মসজিদে ব্যবহৃত উপকরণগুলো আনা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। ইতালি থেকে আনা হয়েছে মার্বেল পাথর। গ্রানাইট এসেছে চীন থেকে। মসজিদের ভেতরের সাজসজ্জার জন্য ঝাড়বাতি আনা হয়েছে ইংল্যান্ড থেকে। মসজিদের মেঝেতে ব্যবহারের জন্য সুদৃশ্য শতরঞ্জি এসেছে সৌদি আরব থেকে। নির্মাণ শেষে ২২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮৬ ফুট প্রস্থের মসজিদটি শহরের সুন্দর ও আভিজাত্যের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
আন-নূর গ্রেট মসজিদ (ইন্দোনেশিয়া)
ইন্দোনেশিয়ার রিআউ প্রদেশের রাজধানী পেকানবারুতে অবস্থিত এই মসজিদটির নির্মানকাজ ১৯৬৩ সালে শুরু হয়ে ১৯৬৮ সালে সমাপ্ত হয়।
মসজিদটির নির্মাণশৈলী ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তাজমহলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। মসজিদে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মুসল্লি একত্রে নামাজ পড়তে পারে। মসজিদটি ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম পুরাতন মসজিদ। মসজিদটিতে মালয়, তুর্কি, আরবি এবং ভারতীয়সহ বিভিন্নস্থাপত্য শৈলীর ব্যবহার হয়েছে।
মালাক্কার ভাসমান মসজিদ (মালয়েশিয়া)
মালাক্কা প্রণালি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মালয় উপদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের মধ্যে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ সমুদ্রপ্রণালি। প্রাচীন স্থাপত্যের নকশার অনুকরণে মসজিদটি নির্মিত।
২০০৬ সালের ২৪ নভেম্বর মসজিদটি নামাজের জন্য খুলে দেয়া হয়। মসজিদ সংলগ্ন বিশাল উঁচু মিনার, সুপরিসর বাগান, পার্কিং ও সামনের খোলা জায়গাজুড়ে দেখা মেলে পযর্টকদের। মসজিদে রয়েছে শিশুদের আনন্দের সঙ্গে কোরআন শেখানোর ব্যবস্থা। আলাদা স্থানে, আরবি হরফগুলোকে বিভিন্ন ছবি ও নকশার মাধ্যমে শেখানো হয়।
ক্রিস্টাল মসজিদ (মালয়েশিয়া)
মালয়েশিয়ার উত্তর-পূর্ব কোণে কেলান্তান ঘেঁষে অবস্থিত তেরেঙ্গানু প্রদেশ। এখানেই অবস্থিত ক্রিস্টাল মসজিদ। মূল্যবান ক্রিস্টালের সঙ্গে স্বচ্ছ কাচ ও স্টিলের দণ্ড দিয়ে বানানো হয়েছে মসজিদটি। স্বচ্ছতার কারণেই এই মসজিদের এমন নামকরণ। মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শনটি দাঁড়িয়ে আছে মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু এলাকার ‘পোলা ও ওয়ান ম্যান’ দ্বীপে।
সুলতান তেরেঙ্গানু মিজান জায়নুল আবেদিনের নির্দেশে তৈরি করা হয় মসজিদটি। ২০০৬ সালে তিনি এই মসজিদ নির্মাণের আদেশ দেন। ২০০৮ সালে মুসল্লিদের নামাজের জন্য মসজিদটি উন্মুক্ত করা হয়। মালয়েশিয়ার ক্রিস্টাল মসজিদ ঐতিহ্যগত ইসলামিক স্থাপত্য ও আধুনিকতার বৈশিষ্ট্য নিয়েই নির্মিত।
হাসান দ্বিতীয় মসজিদ (মরক্কো)
২২ একর জায়গার ওপর নির্মিত হাসান দ্বিতীয় মসজিদটির এক-তৃতীয়াংশই সাগরের কুল ঘেঁষে পানির ওপর নির্মিত। বিশ্বের ১৩তম বৃহত্তর মসজিদ এটি। মূল মসজিদের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার। ২০০ মিটার (৬৬০ ফিট) দৈর্ঘ্য এবং ১০০ মিটার (৩৩০ফিট) প্রস্থ হলো মূল মসজিদ। আর মসজিদ গ্রাউন্ডে অতিরিক্ত ৮০ হাজার লোকের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সটিতে রয়েছে অজুখানার পাশাপাশি কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র, সমৃদ্ধ পাঠাগার ও বিশাল কনফারেন্স রুম।
মসজিদের মিনারের উচ্চতা ২১০ মিটার (৬৯০ ফুট)। দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার তথা ১৯ মাইল দূর থেকেই মিনার দেখা যায়। মসজিদের ফ্লোর থেকে ছাদের উচ্চতা দীর্ঘ ৬৫ মিটার। ডিজিটাল পদ্ধতিতে মসজিদের ছাদ খুলে যায় বিধায় এর ভেতরে আলো-বাসাত প্রবেশ করতে পারে। তবে বৃষ্টির সময় মসজিদের ছাদ বন্ধ থাকে।
মসজিদের নির্মাণ এবং সৌন্দর্য বর্ধনে মোট ২৫০০ শ্রমিক এবং ১০ হাজার আটিস্ট দীর্ঘ ৭ বছর কাজ করেন। ২৫০০ শ্রমিকের মধ্যে ১৪০০ লোক দিনে আর ১১০০ লোক রাতে অবিরাম কাজ করে যান।
পুচং পেরদানা মসজিদ (মালয়েশিয়া)
পুচং পেরদানা মসজিদ। মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর পুচং শহরের পুচং পেরদানায় অবস্থিত একটি মসজিদ। মসজিদটি ২০০৪-২০০৬ সালে নির্মিত হয়েছে। মসজিদুস-সালাম নামেও পরিচিত মসজিদটি।
আল-রাহমা মসজিদ (সৌদি আরব)
সৌদি আরবের জেদ্দার সমুদ্রতটে অবস্থিত আল-রাহমা মসজিদ। নির্মিত হয় ১৯৮৫ সালে। সৌদির অন্যতম দর্শনীয় এই মসজিদটি একই সঙ্গে ফাতেমা আল-যাহরা মসজিদ নামেও পরিচিত।
২৪০০ বর্গকিলোমিটার স্থানের ওপর প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদটি প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে নির্মিত। আটটি স্তম্ভকে ভিত্তি করে দাঁড়ানো মসজিদটির ছাদে মোট ৫২টি গম্বুজ রয়েছে, যার মধ্যে একটি গম্বুজ বৃহত্তর। একই সঙ্গে মসজিদটির একটি মিনার রয়েছে। নারীদের নামাজ আদায়ের জন্যও মসজিদটিতে আলাদা নামাজের স্থান রয়েছে।
শোয়েটজিনজেন মসজিদ (জার্মানি)
জার্মানির শোয়েটজিনজেন মসজিদ। এটিকে লাল মসজিদ বলেও ডাকা হয়। নিকোলাস ডি পিগেজ ১৭৭৯ সালে নির্মাণ শুরু করেন। ১৭৭৯৫ সালে এটির নির্মাণ শেষ হয়।
অসাধারণ সুন্দর দুটি মিনার ও নামাজের বিশাল জায়গা রয়েছে তাতে। বিশ্বের অসাধরণ সুন্দর মসজিদগুলোর একটি টি। প্রকৃতির কোল ঘেঁষে তৈরি বলে তাতে যেন শান্তির বায়ু বয়ে যায়। প্রকৃতির রূপ যেন ঘিরে রাখে।
কিউএনবি/আয়শা/০৬ অক্টোবর ২০২৩,/সন্ধ্যা ৬:৫৫