খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় রোর্ড মার্চের সমাপনী সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না ঘটাতে পারলে দেশের মানুষ বাঁচবে না, দেশের স্বাধীনতা থাকবে না।
এদেশের মানুষের সম্পদ লুটে নিয়ে আওয়ামীলীগ সরকারের লোকজন বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। অথচ দেশের মানুষ না খেয়ে মরছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হলো দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার। আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই দেশের মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়।
৩ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯ টায় শরীয়তপুরের বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্টেডিয়ামে (শরীয়তপুর স্টেডিয়াম) ফরিদপুর বিভাগীয় রোর্ড মার্চের সমাপনী সমাবেশে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান কিরণের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি সরদার একে এম নাসির উদ্দিন কালুর পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে নিঃশে^স করে দিয়েছে। অত্যাচার, অনাচার, গুম, খুনসহ এমন কোনো অনাচার নেই যা তারা এদেশের মানুষের সাথে করে নাই। এদেশের গণমানুষের নেত্রী, সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেন দেশের মানুষকে নেতৃত্ব দিয়ে মুক্ত করতে না পারেন, সেজন্য তাকে মিথ্যা মামলায় কারবন্দি করে রেখেছে। এই মানুষটি বর্তমানে কারাগারে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন। নিজেদের মুক্ত করতে চাইলে আগে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্য হলো আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ। দেশের মানুষকে মুক্তি দেওয়া। ফরিদপুর অঞ্চল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঘাটি। আমরা এক বছর ধরে আন্দোলন করছি, আমরা আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। বিএনপির ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে এই স্বৈরাচার সরকার। এরপরেও বিএনপির নেতাকর্মীরা দমে যায়নি। বিএনপির লক্ষাধিক নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন। এই সরকার গুম করছে, হত্যা করছে, গায়েবানা মামলা করছে। তারপরেও তারা বেগম খালেদা জিয়া, দেশের মানুষকে ভালোবেসে বিএনপির পতাকা সমুন্নত রাখছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি রোর্ড মার্চের কর্মসূচি শেষের দিকে। আপনারা রোর্ড মার্চে দেখেছেন রাজবাড়ির গোয়ালন্দ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের মহাসড়কে মানুষের ঢল নেমেছে। জনগণের এই ঢলের অর্থ হলো- দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদী এই আওয়ামী লীগের পতন চায়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে জনগণের প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর দেখতে চায়। দেশের জনগণ আজ জেগেছে, কোনো অন্যায় আর হতে দেওয়া হবে না। যে আন্দোলন দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে, সে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে ইনশাআল্লাহ।
ফরিদপুর বিভাগীয় রোর্ড মার্চের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল মিন্টু, রোড মার্চের সমন্বয়ক ও বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এড.জামাল শরীফ হিরু, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, সিরাজুল হক মোল্যা, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব আলম তালুকদার, জেলা বিএনপির যুগ্নসাধারণ সম্পাদক, দুলাল খান, মাহবুবব মোরশেদ টিপু মাদবর, মহিউদ্দিন বাদল, কেন্দ্রীয় যুবদলের যুগ্নসাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার খান, কামরুল হাসান তালুকদার, জেলা যুবদলের সভাপতি আরিফ উজ্জামান মোল্যা, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ইজাজুল ইসলাম মামুন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম লিটন মুন্সি, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন মুন্সি, জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক মাহবুব আলম খায়ের সহ শরীয়তপুর জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ১০ টায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড় থেকে রোড মার্চের উদ্বোধন শেষে রোড মার্চটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা, গোলাপগঞ্জের মুকসুদপুর বরইতলা বাসস্ট্যান্ড, রাজবাড়ীর বসন্তপুর ও মাদারীপুরের মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডে পথসভা শেষে শরীয়তপুরের বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্টেডিয়ামে সমাবেশ করে দলটির নেতৃবৃন্দ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্য দিয়েও বিএনপি, যুবদল ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অর্ধলাখ নেতাকর্মী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে রোড মার্চের সমাপনি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
সরেজমিনে দেখাগেছে , রোডমার্চে যোগ দিতে দুপুর থেকেই শরীয়তপুরের ৬উপজেলার হাজার হাজার নেতাকর্মীরা বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে শরীয়তপুরের বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্টেডিয়ামে জড়ো হয়। এ সময় নেতাকর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুড়ো সমাবেশস্থল। প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করেই নেতাকর্মীরা রোডমার্চে অংশ নেয়। রোড মার্চে অংশ নিতে আশা নেতাকর্মীরা বলেন, শরীয়তপুর সৃষ্টির পর থেকে এই পর্যন্ত এত বড় সমাবেশ হয়নাই। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীরা খুবই আনন্দিত।
কিউএনবি/আয়শা/০৪ অক্টোবর ২০২৩,/দুপুর ১২:৪০