শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৫:১৯ অপরাহ্ন

কোথাও জায়গা পাইনা, কেউ থাকতে দেয়না, তাই পুকুরে মাঁচা বানাইয়া থাকি

গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি প্রতিনিধি ।
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ২৩৬ Time View

গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি : আমার স্বামী মইরা গেছে ১৫ বছর হইছে। আমার একটা নাতি আছে ও আমার সাথে থাকে। এই নাতিরে লইয়া অনেক কষ্টে দিনযাপন করছি।একটা বাসা ভাড়া নিছিলাম হেয়াও পানিতে তলাইয়া যায় তাছাড়া আয় রোজগারের কেউ না থাহায় বাড়া দিতে পারছি না।এর আগে আমার ভাই বাসা ভাড়ার টাকা দিতো তিনি এখন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এহন কই যামু, যাওয়ার কোন পথ দেহি না। পরে চিন্তা করলাম সবার কাছে চাইয়া বাঁশ খুটি আইনা এই পুহোইরের (পুকুর)মধ্যে মাচা বানাইয়া থাহি। এই জায়গাটা দিবে না তিনবছর ধরে মামাতো ভাইগো কাছে ঘুরতে আছি। মোর মায়ে জায়গা পাইবো মামাবাড়ি। কিন্তু এরপরও আমারে ঘর বানাইতে দেয়নায় বাড়িতে।

যখন তাদের কাছে গেছি আমারে ধাক্কা মাইরা ফালাইয়া দিছে। বাঁশ খুটি ভাইঙ্গা ফালাইয়া দিয়ে ঘর বানাইতে দেয় নায়। এরপর আমার মামাতো ভাই সিদ্দিকুর রহমান বলেন যদি জায়গা নেন তাহলে উপরে দিমু না পুকুরের মধ্যে আছে সেখানে নেন।পরে আমি কি করমু আমার কপালে আছে এটা পুকুরের মধ্যে বাঁশখুটি দিয়া মাচা বানাইয়া তিন মাস ধরে নাতিরে লইয়া থাহি। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন অসহায় বিধবা নারী মিনারা বেগম। মিনারা বেগমের বিবাহ হয়েছিল ফরিদপুরে তার স্বামী দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণে সেখানে যা জমি ছিল তা বিক্রি করে তার চিকিৎসা করিয়েছেন।তার বাবার বাড়ি নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের রাজ পাশা গ্রামে। সেখানে তাদের কোন জমি নাই। তাই তার মামা বাড়িতে তার মায়ের জমিতে ঘর উত্তোলন করে বসবাস করতে চেয়েছিলেন।

তাই নলছিটি পৌরসভার সবুজবাগ এলাকায় মায়ের জমিতে পুকুরের মধ্যে বাঁশ খুটি দিয়ে মাচা তৈরি করে পলিথিন দিয়ে দীর্ঘ তিনমাস ধরে বসবাস করছেন মিনারা বেগম ও তার নাতি নিরব সরদার । অসহায় মিনারা বেগম বলেন, আমার কোন ছেলে সন্তান নাই। একটা মেয়ে আছে তারও জামাই তাকে ছেড়ে দিছে। আমার মেয়ে চিটাগং থাকে। আমি তিনবছর হয়েছে নলছিটিতে এসেছি মেম্বার চেয়ারম্যানদের কাছে গিয়েছি কিন্তু কোন কিছুই পাইনি।সরকারি ঘরের জন্য দুইবার আবেদন করেছি কিন্তু তাও কপালে জোটেনি। তাছাড়া বিধবা ভাতার জন্য গেছি তা বলছে কোটা খালি নাই।

আমার নাতি নলছিটি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অনেক কান্নাকাটি করে ঘর নাই এভাবে থাকা যানা। পড়াশোনা করতে কষ্ট হয়। ও যে চট্টগ্রাম গিয়ে লেখাপড়া করবে তার মায়ের কাছে সেখানে অনেক খরচ বেশি। এহন যদি কেউ আমারে সাহায্য সহযোগিতা বা থাকার জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে নাতিটাকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারি। নলছিটি পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মনিরুজ্জামান মনির বলেন,বিধবা ওই মহিলা তার নাতিকে নিয়ে ৩ মাস ধরে এখানে বাঁশ খুটি মাচা বানিয়ে পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিয়ে পুকুরের উপর থাকছেন।আসলে এটা মানুষ কতটা অসহায় হলে এভাবে বসবাস করছে তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার কাছে আসলে আমি ফেইসবুক লাইভ দিলে বিষয়টি অনেকের নজরে আসে।

ঢাকার জসিম ভাই নামে এক সাংবাদিক তাদের দুইবান টিম কিনে দিয়েছে। আসলে তার দরকার থাকার মতো একটা ঘর।
এবিষয়ে মিনারা বেগমের মামাতো ভাইদের বাড়িতে না পাওয়ায় তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। নলছিটি উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী বলেন, মিনারা বেগমের জাতীয় পরিচয় পত্র দেখে ওনি যদি ভাতা পাওয়ার প্রাপ্য হয় তাহলে অবশ্যই ভাতার আওতায় আনা হবে। নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, মিনারা বেগমের বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি ওখানে যাবো গিয়ে তার অবস্থা দেখবো । আর তার জন্য সরকারি সহয়তা করা হবে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/বিকাল ৪:৪৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit