খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : জাতীয় বীর ও সাবেক ডেপুটি স্পীকার এবং শরীয়তপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত কর্ণেল শওকত আলী ও তার স্ত্রী রোকেয়া পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলী ও তার পরিবারকে নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতার কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বক্তব্যের প্রতিবাদে সংগঠনটির একাংশের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে।
জানাগেছে, নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক সভায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান খোকন তার বক্তব্য বলেছিলেন, ‘খালেদ শওকত ও মাজেদা শওকত মিললা নড়িয়াকে খেয়েছে গিললা। এছাড়াও বলেছেন কর্ণেল শওকত আলীর প্রতিষ্ঠিত নুসার মাধ্যমে সুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে’। ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে নড়িয়া পৌরসভার সামনে নড়িয়া-সখিপুরের আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান খোকনকে তিন দিনের মধ্যে কর্ণেল শওকত আলীর পরিবারের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার জন্য সময় বেধে দেয়।
মানববন্ধন থেকে আওয়ামীলীগ নেতা ও জেলা পরিষদ সদস্য আলী আজগর চুন্নু বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর, সাবেক ডেপুটি স্পীকার প্রয়াত কর্ণেল শওকত আলী ও তার স্ত্রী মাজেদা শওকত আলীর, ছেলে ডা. খালেদ শওকত আলীসহ তার পরিবারকে নিয়ে হাসানুজ্জামান খোকন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে নড়িয়াতে মীর জাফর ও বিশ্ব বেইমান উপাধি পেল। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা জনগণকে না বলে আওয়ামী লীগে বিভাজনের উদ্দেশ্যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে যে অন্যায় করেছে তার কোনো ক্ষমা নেই।
হাসানুজ্জামান খোকন একসময় চট্টগ্রামে ছাত্রশিবির করতেন। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিএনপি নেতা জামাল শরিফ হিরুর নিকটজন ছিলেন। পরবর্তীতে খোকন শিবির সম্পৃক্ততার কথা গোপন করে কর্ণেল শওকত আলীর হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসেছিলেন। শওকত আলীই তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে ছিলেন। যেই নেতা তাকে আওয়ামী লীগের পরিচয় দান করল তার পরিবারের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে খোকন নড়িয়া-সখিপুর বাসীর কাছে বেইমান হিসেবে পরিচিত হলো। আমরা তার বহিস্কারের দাবি জানাই। জেলা আওয়ামী লীগ যদি তাকে বহিস্কার না করে তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
আওয়ামীলীগ নেতা ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিএম মনির হোসেন বলেন, জেলা আওয়ামীলীগকে অনুরোধ করব হাসানুজ্জামান খোকনের বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য। যদি তিনি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে শওকত আলীর পরিবারের কাছে ক্ষমা না চান তাহলে নড়িয়াকে অচল করে দেওয়া হবে। আর এই অচলাবস্তার জন্য জেলা আওয়ামীলীগ, পুলিশ ও প্রশাসন দায়ী হবেন।
এবিষয়ে নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান খোকন বলেন, আমি একটি বক্তব্য দিয়েছিলাম নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি ‘নুসা’ নিয়ে। যখন জাতীয় বীর শওকত আলী নুসা প্রতিষ্ঠা করেন তখন আমি এর সদস্য হই। শওকত আলী যত দিন বেঁচে ছিলেন তত দিন নুসা জনগণের কল্যাণে কাজ করত। এখন শতকরা ৩৫ ভাগ সুদ গুণতে হয় সাধারণ মানুষকে, যা অন্যায়। শওকত ভাইর ছেলে ডা. খালেদ শওকত আলী ও মাজেদা শওকত আলী মিলে সুদের হার এমন বাড়িয়েছেন। আমি শুধু এর প্রতিবাদ করেছিলাম। এছাড়াও পূর্বে ডা. খালেদ শওকত আলী তার ফেসবুকে ‘ আওয়ামী লীগ অচল’ বলে মন্তব্য করেছেন। এইসবের প্রতিবাদ করায় ডা. খালেদ শওকত আলীর লোকজন আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে। ওই মানববন্ধনে আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। ছাত্র শিবির, বিএনপি নিয়ে আমার নামে যে কথা বলেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। চট্টগ্রামে আমি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের পদধারী নেতা ছিলাম।
মাববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, ভোজেস্বর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম ফকির, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হুমায়ুন খলিফা, নড়িয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর উজ্জ্বল বন্দুকসিসহ অন্যান্যরা।
কিউএনবি/আয়শা/১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/রাত ৮:৫০