মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১২ পূর্বাহ্ন

সিলেটের দীপিতার বিশ্বজয় !

শহিদ আহমেদ খান সাবের,সিলেট প্রতিনিধি।
  • Update Time : সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩
  • ২২৭ Time View

শহিদ আহমেদ খান সাবের,সিলেট প্রতিনিধি : বিশ্বের প্রখ্যাত একটি বিদ্যাপীঠের নাম কানাডার কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি। এই ইউনির্ভাসিটিতে মেধাবী ও সৃজনশীল শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপের জন্য আবেদন করে থাকেন। তবে গোটা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা আবেদন করলেও কনকর্ডিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ দেয়া হয় মাত্র দুটি। এবার এই দুটি স্কলারশিপের মধ্যে একটি অর্জন করেছে বাংলাদেশ, অপরটি রুয়ান্ডা। নি:সন্দেহে বলা চলে এই অর্জন অনেকটা বিশ্বজয়ের মত। স্কলারশিপের এই গৌরব অর্জন করেছেন সিলেটের দীপিতা সিনহা।

পড়বেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। স্কলারশিপ বিজয়ী অপর শিক্ষার্থী রুয়ান্ডার রেইন। প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ অর্জনকারী প্রত্যেকের জন্য সর্বসাকুল্যে কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি ব্যয় করবে প্রায় ৫ কোটি টাকা করে। মেধাবী দীপিতা সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ ও রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান, গাইনী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: নমিতা সিনহার জৌষ্ঠ কন্যা। দীপিতা বিশ্বজয়ের পর তাদের পুরো পরিবার কানাডার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।

আজ সোমবার তারা কানাডায় পৌঁছার কথা। দেশত্যাগের প্রাক্কালে মেধাবী দীপিতা সিনহা জানায়, স্কুল ও কলেজে স্যারেরা আমাকে সব লিডারশিপের দায়িত্ব দিতেন। এটা আমাকে লিডারশিপ সম্পর্কে জানতে বাধ্য করে। তাছাড়া প্রত্যেক মানুষেরই একটা লক্ষ্য থাকে। সেই অনুযায়ী স্বপ্ন লালন করে এবং এগোয়। আমিও আমার কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। এজন্য আপাতত কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। সাময়িকভাবে একটু দুরে চলে যেতে হচ্ছে আমার প্রিয় মা বাবা, প্রিয় সিলেট ও প্রিয় মাতৃভুমি থেকে। দীপতা জানান, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার ইচ্ছা তার প্রবল। অনর্গল কথা বলতে পারেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, কোরিয়ান ভাষায়।

এখন ফ্রেঞ্চ ভাষা চর্চা করছি। একের পর এক ভাষা শিক্ষা এটা তার অন্যতম হবি। দীপিতার মতে, বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ। আগের মত শুধু জাতি-সমাজ নয়, এখন বিশ্বজাতি-বিশ্বসমাজের কি কল্যাণ করা যায় তা নিয়েই ভাবতে হবে। দীপিতা সিনহার বাবা সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ বলেন, বাবা-মায়ের চোখে সন্তানরা সব সময়ই শিশু। তাই মেয়েকে একা বিদায় দিতে না পেরে আমরা পুরো পরিবার সঙ্গী হয়েছি। তার ভর্তি সম্পন্ন করে দেশে ফিরবো। তিনি বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই নিজ নিজ পেশাগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তাই সন্তানদের তেমন সময় দেয়া হয়না। তারপরও স্কলারশিপের আবেদনসহ সার্বিক যোগাযোগ অনেকটা সে একাই সম্পন্ন করেছে এবং এর স্বীকৃতিও পেয়েছে। সন্তানের এমন সফলতা শুধু আনন্দের নয়, গর্বেরও- এমন বক্তব্য তার।

দীপিতার মা গাইনী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: নমিতা সিনহা বলেন, আমার বাবা চন্দ্রমোহন সিংহ একজন প্রবীণ সঙ্গীতজ্ঞ। দীপিতার সঙ্গীতে তালিম শৈশবেই, বাবার হাতে। তারপর ওস্তাদদের কাছে নাচ, গান, আবৃত্তি, উপস্থাপনা শিখেছে। অনেকগুলো পুরস্কার ও পেয়েছে। মায়ের মতে, সৃজনশীলতা ও মানবিক মানসিকতা দীপিতার শৈশব থেকেই। পড়াশুনার পাশাপাশি সহপাঠীদের নিয়ে অনেকগুলো নতুন নতুন সংগঠন করেছে। সেসব সংগঠনের মাধ্যমে বেশ কর্মকান্ডও করেছে। ক্লাশে, ক্লাবে, সংগঠনে ক্যাপ্টেন-দলনেতা সব সময়ই থাকত। তাকে একজন ভাল ক্ষুদে সংগঠক ও বলা যায়। ডা: নমিতা বলেন, নিজের সারা জীবনের অর্জন নিয়ে যতোটা আনন্দিত মেয়ের এটুকু অর্জনে তারচে শত শতগুণ আনন্দিত। মানবিক মানুষ হোক এটাই প্রত্যাশা।

দীপিতা সিনহা পড়াশুনা সিলেটের ব্লু বার্ড হাইস্কুল, সিলেট অগ্রগামী বালিকা বিদ্যালয় ও এমসি কলেজে। স্কুল জীবনে দীপিতা সব সময়ই ক্লাশ ক্যাপ্টেন ছিল। সাইন্স ক্লাবের সদস্য দীপিতা রোবট তৈরীসহ বিভিন্ন ইভেন্টে পুরস্কৃত হয়। করোনা মহামারীর সময়ে সতীর্থদের নিয়ে ‘দুর্বার’ নামের সামাজিক সংগঠন গঠন করে বৃক্ষরোপন করে। করোনার সময়ে ‘ডোর ইজ অপেন’ নামের মানবিক উদ্যোগ নেয় সতীর্থদের নিয়ে। তারা টানা একমাস ছিন্নমূলদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করে মানবিক দায়িত্ব পালন করে। পায় ব্যাপক প্রশংসা।

স্কলারশিপ পাওয়ার আগে মেধাবী দীপিতা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ‘ছায়া জাতিসংঘ’ ডিবেটে কানাডার প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই ডিবেটে ‘বেস্ট থিংকার্স’ স্বীকৃতি পান এই মেধাবী শিক্ষার্থী। ইন্টার স্কুল গণিত অলিম্পিয়াডে সেরা হওয়ার পর যান ইংলিশ অলিম্পিয়াডের বিভাগীয় গ্রান্ড ফিনালে। আইইএলটিএস এ সর্ব্বোচ্চ স্কোর পাওয়া মেধাবী দীপিতা জাতীয় বিজ্ঞান ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় জেলা চ্যাম্পিয়ন হন। দেশ ত্যাগের প্রাক্কালে দীপিতাকে শুভেচ্ছা জানাতে যান মণিপুরী সমাজকল্যাণ সমিতি সিলেট জেলা শাখার সভাপতি রোটারিয়ান নির্মল কুমার সিংহ, সাধারণ সম্পাদক সংগ্রাম সিংহ ও যুগ্ম সম্পাদক রণজিৎ সিংহ, শিক্ষক, আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন মহল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠ থেকে কানাডার কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে অনেকটা ভিন্ন। তারা প্রতিটি সেশনেই খোঁজেন মেধাবী ও সৃজনশীল শিক্ষার্থীদের। ভর্তিতে প্রাধান্য দেন সামাজিক কর্মকান্ড, মানবিক ও উদ্ভাবনী মানসিকতা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের। অনুরূপভাবে বিশ্বের সৃজনশীল-মেধাবীদের ভর্তির প্রথম টার্গেটেই থাকে এই ইউনিভার্সিটি। ফলে প্রতিটি সেশনেই গোটা বিশ্বের অনন্য মেধার শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধন ঘটে এর ক্যাম্পাসে। বিশ্বের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির স্কলারশিপের তালিকা অনেকটা লম্বা থাকে। কিন্তু কানাডার মন্ট্রিলের এই ইউনিভার্সিটি এখানেও ব্যতিক্রম। স্কলারশিপের আবেদন সারা বিশ্ব থেকে জমা হলেও দেয়া হয় মাত্র দু’জনকে। এর নাম কনকর্ডিয়া প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৪ অগাস্ট ২০২৩,/রাত ৮:০৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit