রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
পরিবারে সুখ ফেরাতে বিদেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন শার্শার রনি শার্শায় গৃহবধূকে গনধর্ষণের অভিযোগ কোম্পানীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তরুণের মৃত্যু মনিরামপুর প্রেসক্লাবের দাতা সদস্যের বোনের ইন্তিকাল মনিরামপুরে রশীদ বিন ওয়াক্কাসকে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা আটোয়ারীতে কিন্ডারগার্টেনের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও সনদপত্র বিতরণ পাঁচদোনা টু ডাঙ্গা চারলেন সড়ক অপরাধীদের অভয়ারণ্যে  চৌগাছায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠিত দৌলতপুরে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিনের দাফন সম্পন্ন চৌগাছায় ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বিএনপি নেতাকে পিটিয়েছে প্রতিবেশী পুলিশ সদস্য

বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগ ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০২৩
  • ১৭০ Time View

ডেস্ক নিউজ : বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের স্থিতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এ স্থিতি ছিল ৩৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার বা ৩ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ডলারের হিসাবে স্থিতি বেড়েছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, টাকার হিসাবে বেড়েছে ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। 

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগের এ হিসাব শুধু বৈধভাবে নেওয়া পুঁজির ভিত্তিতে করা। দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বিদেশে যারা পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন এতে শুধু তাদের তথ্য রয়েছে। এর বাইরে আরও বিপুল পরিমাণ পুঁজি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করে নেওয়া হয়েছে। সেগুলো দিয়ে বিভিন্ন দেশে হোটেল, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। যার হিসাব এতে নেই। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) হিসাবে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ৯১ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। 
পাচারের এসব অর্থের একটি বড় অংশ দিয়েই বিদেশে বিনিয়োগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে পুঁজি নিয়ে কানাডা, সংযুক্ত আরব আমীরাত, মরিশাস, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপালে বিনিয়োগ করা হয়েছে। যা বৈধভাবে বিনিয়োগের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি। ডলার সংকটে দেশের অর্থনীতি যখন নিদারণ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, তখনও দেশ থেকে পুঁজি নেওয়া কমেনি। বরং বেড়েছে। এর বিপরীতে বিদেশ থেকে দেশে আসা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ কমে গেছে। 

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যেটি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। যে কারণে বিদেশি বিনিয়োগ কম আসছে। বিপরীতে দেশি উদ্যোক্তারাও দেশে বিনিয়োগ না করে পুঁজি সরিয়ে ফেলছেন। একদিকে বিদেশি বিনিয়োগ কমছে, অন্যদিকে দেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ বাড়ছে। এটি বেশি চলতে থাকলে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতা আরও প্রকট হবে। তিনি আরও বলেন, দুই ধরনের বিনিয়োগ বাড়াতেই সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। মুদ্রার মানে ও কর কাঠামোতেও স্থিরতা ফেরাতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। আর বিনিয়োগ না হলে অথনীতিতে গতি আসবে না। কর্মসংস্থান বাড়বে না।
 
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে ১০১ দশমিক ৭২ শতাংশ। তবে বিদেশে অর্জিত মুনাফা ও এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ মিলে মোট পুঁজি বিনিয়োগ কমেছে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এর বিপরীতে বিদেশ থেকে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পুঁজি হিসাবে অর্থ আসার পরিমাণ কমেছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ ও মুনাফাসহ বিনিয়োগ বেড়েছে ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। 

২০২১ সালে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের স্থিতি ছিল প্রায় ৩৯ কোটি ডলার বা ৩ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে বিনিয়োগ বেড়েছিল ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে তা বেড়েছে ২ দশমিক ৬০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগের স্থিতি কমেছে। কিন্তু দেশ থেকে নিট পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। মূল পুঁজির স্থিতি ২০২১ সালে ২২ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। গত বছর তো বেড়ে হয়েছে ২২ কোটি ৯১ লাখ ডলার। বিদেশে অর্জিত মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগের স্থিতি ২০২১ সালে ছিল ৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার। গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৯ লাখ ডলার। ২০২১ সালে এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণের স্থিতি ছিল ১১ কোটি ১৩ লাখ ডলার। গত বছর তা কমে ১০ কোটি ৯৯ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। 

২০২১ সালে বিদেশে বিনিয়োগ থেকে মুনাফা বাবদ এসেছিল ৩০ লাখ ডলার। ২০২২ সালে বিদেশ থেকে মুনাফা এসেছে ১ কোটি ২১ লাখ ডলার। এ খাতে মুনাফা আনার প্রবণতা বেড়েছে। বৈশ্বিক অস্থিরতায় অনেকেই পুঁজির একটি অংশ আবার দিশে নিয়ে আসছেন যে কারণে এ খাতে হঠাৎ করে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। 

দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পুঁজি নেওয়া হয়েছে হংকংয়ে ১ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে ভারতে ১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। তৃতীয় অবস্থান নেপাল ৮৩ লাখ ডলার। চতুর্থ অবস্থান সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৭০ লাখ ডলার। এছাড়া যুক্তরাজ্যে ৬৬ লাখ ডলার, সিঙ্গাপুরে ২৩ লাখ ডলার, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৬ লাখ ডলার, মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ ডলার, যুক্তরাষ্ট্রে ১২ লাখ ডলার, কেনিয়ায় ১২ লাখ ডলার, ওমানে ১১ লাখ ডলার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠন করতে ৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। খনিজ সম্পদ খাতে ৭১ লাখ ডলার, রাসায়নিক পণ্য খাতে ১২ লাখ ডলার ও মেশিনারিজ উৎপাদনে ৬ লাখ ডলার। 

২০২১ সালে দেশ থেকে পুঁজি হিসাবে নেওয়া হয়েছে ৫৮ লাখ ডলার। গত বছর নেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। এক বছরে পুঁজি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ১০১ দশমিক ৭২ শতাংশ। ডলার সংকটের মধ্যেও এসব পুঁজি নেওয়া হয়েছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, এ পুঁজির একটি বড় অংশ নেওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়তে। যার মাধ্যমে প্রবাসীদেও রেমিট্যান্স আহরণ করা হবে। 

এছাড়া বিদেশে অর্জিত মুনাফা পুনরায় বিনিয়োগ করা হয়েছে ২০২১ সালে ২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। গত বছর করা হয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ ২০২১ সালে নেওয়া হয়েছে ৯ কোটি ১৭ লাখ ডলার। গত বছর নেওয়া হয়েছে ৬১ লাখ ডলার। 

নিট পুঁজি, বিদেশে অর্জিত মুনাফা ও এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ এসব মিলে ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে বিনিয়োগ করা হয়েছিল ৯ কোটি ১৭ লাখ ডলার। গত বছর তা কমে হয়েছে ৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার। কমেছে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ। এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণের প্রবাহ কমে যাওয়ায় গত বছর বিনিয়োগ কমেছে। 

গত বছরের আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আরও পাঁচটি কোম্পানির বিদেশি বিনিয়োগ করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, ওষুধ কোম্পানি রেনেটা ও খাদ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানি প্রাণ ফুডস। বাকি তিনটি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান। এগুলো হচ্ছে, এমবিএম গার্মেন্টস, নাসা গ্রুপের এজে সুপার গার্মেন্টস ও কলাম্বিয়া গার্মেন্টস। 

এদিকে দেশে ডলার সংকট মোকাবিলা ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। বিদেশে রোডশো করছে। তারপরও দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে না। অথচ দেশি উদ্যোক্তাদের একটি অংশ বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছে। এতে দেশের পুঁজি বিদেশে চলে যাচ্ছে। অন্যদিকে দেশ বঞ্ছিত হচ্ছে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি থেকে। 

২০২১ সালে মূলধন হিসাবে দেশে এফডিআই এসেছে ১১৪ কোটি ডলার। গত বছর এসেছে ১০২ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে এফডিআই কমেছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে মুনাফা থেকে পুনরায় বিনিয়োগ ও এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির ঋণ মিলে এফডিআই বেড়েছে ২০ দশমিক ২ শতাংশ। 

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১১ অগাস্ট ২০২৩,/রাত ১১:০০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit