ডেস্ক নিউজ : প্রতিবছর একদিকে নবীন শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। অন্যদিকে কারো কারো বাজে বিদায়ের ঘণ্টা। ফুরিয়ে যায় ক্যাম্পাস জীবনের দিনগুলো। এরপরই আসে গ্রাজুয়েটদের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত।
সমাবর্তন হলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক রোমাঞ্চকর অধ্যায়। যে অধ্যায়ের সাক্ষী হতে সবাই অপেক্ষায় থাকে। তাই সমাবর্তনকে বলা হয় শিক্ষার্থীদের লালিত স্বপ্ন। সমাবর্তনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন শেষে মূল সনদপত্র দেয়া হয়। এদিন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা পড়নে কালো গাউন, আর মাথায় কালো ক্যাপ পড়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। সমাবর্তনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হয় বিধায় এদিন সবার মধ্যে বাঁধভাঙা আনন্দ-উল্লাস বিরাজ করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার সাত বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে সমাবর্তন। আর মাত্র বাকি ২ দিন। শেষ সময়ে এখন সবার হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে স্বপ্নের কালো গাউন আর কালো হ্যাট। মুখে ফুটেছে হাঁসি। হৃদয়ে জেগেছে সজীবতা। ফেলে আসা অনুভূতিগুলো নতুন করে উঁকি দিচ্ছে মনের কোণে। গ্র্যাজুয়েটরা তাই কালো গাউন আর মাথায় কালো হ্যাট পরে অতীতের সেই ফেলে আসা মুহূর্তগুলোই স্বরণ করছেন। পুরনো দিনের আড্ডা আর আনন্দগুলো যেন আবারো ফিরে এসেছে তাদের মাঝে। যে আনন্দে বাড়তি যোগ হয়েছে শিশু থেকে শুরু করে প্রিয়জন, বাবা-মা ও ক্যাম্পাসের ছোট ভাই-বোন। দেখে মনে হবে যেন তাদেরও সমাবর্তন আজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে এখন কেই কেউ কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে, কেউবা আবার চাকরির পিছনে ছুটছে। জীবন যুদ্ধে অবতীর্ণ গ্রাজুয়েট যোদ্ধারা হয়তো ভুলেই গিয়েছিল প্রিয় বন্ধুদের কথা, প্রিয় মানুষের কথা। কর্মব্যস্ত জীবন থেকে একটু ছুটি নিয়ে ক্যাম্পাসে এসেছেন ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে। প্রিয় বন্ধুদের কাছে পেয়ে সবাই যেন আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন। সাথে হাতে পাওয়া কালো গাউন ও মাথায় গ্র্যাজুয়েশন ক্যাপ পড়ে ছবি তুলতেও ভুলছেন না। হৈ-হুল্লোড় আর ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক ধ্বনিতে মোহিত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস আঙিনা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে প্রথম, ২০০১ সালে দ্বিতীয়, ২০০৬ সালে তৃতীয়, ২০১০ সালে চতুর্থ এবং ২০১৫ সালে পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। বিগত সমাবর্তন অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করেছে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী ২৬ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী।
মো:রুবেল হক নামে এক গ্র্যাজুয়েট বলেন, আমি ২০১৬ সালে আইন ও বিচার বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছি। শিক্ষার্থী হিসেবে অনুভূতি আর এখনকার অনুভূতি একদমই আলাদা। দীর্ঘদিন পর বিভাগের শিক্ষক, সহপাঠী, বিভাগের জুনিয়রদের দেখে খুবই আনন্দ হচ্ছে। একবারও মনে হচ্ছে না আমরা এখান থেকে চলে গেছি।
আরেক শিক্ষার্থী রাজুয়ার হোসাইন অবশ্য আবারও মনে করিয়ে দিলেন সমাবর্তনের অতিরিক্ত ফি নেয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাজীবনের অত্যন্ত আনন্দের, উৎফুল্লের এবং জীবনের বড় প্রাপ্তির অংশ সমাবর্তন। নিজের পরিবার, সিনিয়র জুনিয়র মিলে এই আনন্দ হয় বাঁধ ভাঙার। তবে এই আনন্দ ক্ষাণিক ম্লান হয়ে যায় যখন অতিরিক্ত টাকার জন্য আমাদের বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। তাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সবিনয় অনুরোধ পরবর্তী সমাবর্তন যেন সকলের জন্য হয়। সকলের অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত হয়।’
স্নাতকোত্তর পর্যায়ের আরেক গ্র্যাজুয়েট মো. সুলতান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘গ্রাজুয়েশন শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত অবস্থায় এত জলদি সমাবর্তন পাবো এমনটা কল্পনাও করিনি। আজ যখন গাউন-টুপি হাতে পেলাম এবং আমাদের জন্য এত সুন্দর আয়োজন করা হচ্ছে দেখে সত্যি খুবই আনন্দ লাগছে। আসলে এই আনন্দ বলে বোঝানোর মতো না। এত দিনের ইচ্ছে পূরণ হতে যাচ্ছে।’
দীর্ঘ সাত বছর পর জাবি ক্যাম্পাস পাচ্ছে সমাবর্তনের ছোঁয়া। সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ ও সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এবারের সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন ১৫ হাজার ২১৯ জন গ্র্যাজুয়েট। উৎসবমুখর পরিবেশে যেন সুন্দর একটি সমবর্তন উপহার পান গ্রাজুয়েটধারীরা- এমনটাই প্রত্যাশা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের । লেখক: ইমন ইসলাম, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
কিউএনবি/আয়শা/২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/রাত ১০:৩৪