ডেস্ক নিউজ : বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বেলজিয়ামের রানি এবং জাতিসংঘের এসডিজিবিষয়ক বিশেষ দূত ম্যাথিল্ড ম্যারি ক্রিস্টিন এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীশিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় আসে।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যলেখক মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। মো. নজরুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) এজেন্ডাগুলো অষ্টম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা এবং ২০২১-২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে গোটা বিশ্ব অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে এবং মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। এ যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। কারণ, যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে।’
শেখ হাসিনা রাজনীতি, প্রতিরক্ষা ও বিচার বিভাগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য তার সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে রানিকে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি নারীশিক্ষার প্রসারে তার সরকারের প্রচেষ্টার কথাও সংক্ষেপে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, সরকার সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ নারীদেরও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে বয়স্ক নারী, বিধবা এবং স্বামী পরিত্যক্ত নারীও রয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশব্যাপী ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রতিটি কেন্দ্র একজন পুরুষ ও একজন নারীর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সরকার সারা দেশে ১৮ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছে, যেখান থেকে বেশির ভাগ নারী ও শিশু প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। এসব ক্লিনিক থেকে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনা মূল্যে দেয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছেন। কক্সবাজার ক্যাম্পে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া কয়েক হাজার গর্ভবতী নারীকে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে, এতে তাদের উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য দুর্যোগে হতাহতের সংখ্যা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও টেকসই ঘর নির্মাণ করেছে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য সারা দেশে ৮৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বাংলাদেশ অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণপ্রবণ দেশ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তার সরকারের উদ্যোগের চিত্র তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। সবুজ বেষ্টনী তৈরি করেছে। উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ ও টেকসই বাড়ি নির্মাণ করেছে।
বৈঠকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমুদ্রবিষয়ক সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম উপস্থিত ছিলেন। তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকায় আসেন জাতিসংঘের এসডিজিবিষয়ক বিশেষ দূত বেলজিয়ামের রানি ম্যাথিল্ড ম্যারি ক্রিস্টিন।
কিউএনবি/আয়শা/০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/সন্ধ্যা ৬:৫০