সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ১২:২১ অপরাহ্ন

সিলেট বিভাগের ৫ জন শ্রেষ্ঠ জয়িতার সাফল্য অর্জন

শহিদ আহমেদ খান সাবের,সিলেট প্রতিনিধি।
  • Update Time : রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ১৩৯ Time View

শহিদ আহমেদ খান সাবের,সিলেট প্রতিনিধি : সিলেট বিভাগের চার জেলা হতে জেলা পর্যায়ে নির্বাচিত ২০ জন জয়িতা থেকে ৫ জন শ্রেষ্ঠ জয়িতাকে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। শ্রেষ্ঠ জয়িতারা হচ্ছেন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী সুনামগঞ্জের সৈয়দা ফারহানা ইমা, শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী মৌলভীবাজারের মার্গ্রেট সুমের, সফল জননী হিসেবে সিলেটের সালেহা বেগম, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যামে জীবন শুরুর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী মৌলভীবাজারের শাহেনা আক্তার ও সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান অর্জনকারী সিলেটের খুশি চৌধুরী।

বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের হল রুমে বিভাগের শ্রেষ্ঠ ৫ জয়িতাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্মানান প্রদান করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত সচিব ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর সিলেটের উপ-পরিচালক শাহিনা আক্তার বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ৫ জন জয়িতাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। আগামীতেও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা প্রদান অব্যাহত থাকবে।

সুনামগঞ্জের সৈয়দা ফারহানা ইমা ২০১০ সালে সাতরং বুটিকস এন্ড লেডিস টেইলার্স চালু করেন। এক সময় ক্ষুদ্র পরিসরে দু’জন কারিগর নিয়ে শুরু করা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন শহরের কালীবাড়িতে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানে ১৫ জন নারী কারিগর কাজ করছেন। এছাড়াও ইনসাফ ফুড কর্ণার, ইনসাফ কম্পিউটার প্রিন্টার্স ও অনলাইন পেইজ ইমাজিন নামে ৩টি প্রতিষ্ঠান করেছেন। মৌলভীবাজারের মার্গ্রেট সুমের খাসিয়া সম্প্রদায়ের সন্তান। ১৯৯৭ সালে পিতা মারা যাওয়ার পর মিশনারীজের সহায়তা ফাইনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স শেষে স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।

২০১৮ সালে স্কলারশীপ পেয়ে অস্টেলিয়া থেকে মাস্টার্স শেষ করে তিনি ম্যানেজার পদে দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা ওয়াল্ডভিশন, এরপর কারিতাস বাংলাদেশের শিক্ষা বিভাগে প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে যোগদান করে পদোন্নতি পেয়ে তিনি টেকনিক্যাল অফিসার হয়েছেন। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এবং ইন্ডিজিনিয়াস পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেসের মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত আছেন। সফল জননী হিসেবে সিলেটের সালেহা বেগম দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের চর মোহাম্মদপুর গ্রামে তার জন্ম। স্বামীর অসুস্থতার কারণে সালেহা বেগম সবজি বিক্রি, শীতল পাটি তৈরী ও বিক্রি করে সন্তানদের স্কুলের বেতন পরিশোধ করেছেন।

তার নিজের অমানসিক পরিশ্রম ও অনুপ্রেরণার কারণে তার ৬ সন্তান আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তাই তো তিনি একজন সফল জননী। তার ছেলে ডাঃ মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম (অচিনপুরী) জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট-এ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। মোঃ ওয়ারিসুল ইসলাম সোনালী ব্যাংক লিঃ দিরাই শাখায় সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বিয়ানীবাজার শাখার ডেপুটি ম্যানেজার, ডাঃ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে টেমসাইড হাসপাতালে কর্মরত, মেয়ে সাজিয়া সুলতানা সিলেট মডেল মাদ্রাসায় সিনিয়র শিক্ষক ও রাজিয়া সুলতানা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিঃ এ এক্সিকিউটিভ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

মৌলভীবাজারের শাহেনা আক্তার স্বামীর যৌতুকের নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যামে জীবন শুরু করে সফল হয়েছেন। তিনি ইউডিসিতে বেকার ছেলে-মেয়েদের কম্পিউটার, প্রবাসীদের অনলাইন লটারী আবেদন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সহ এজেন্ট ব্যাংকিং, অনলাইনে একসপে ক্রয়বিক্রয়, ই-নামজারী প্রভৃতি বিভিন্ন কাজের জন্য ২০১৩ সালে এটুআই-এর আওতায় দেশ সেরা নারীদের একজন নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে ঢাকায় উদ্যোক্তা সম্মেলনে যোগ দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য থেকে তার মনোবল আরো দঢ় হয়। তিনি পূর্ণউদ্যেমে কাজ শুরু করে ২০১৮ সালে দেশ সেরা উদ্যোক্ত হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি স্বাবলম্বী ও অনেক নারীর পথ প্রদর্শক।

সিলেটের খুশি চৌধুরী ১৯৭০ সালে কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে অসহায় নারীদের জন্য কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সদস্য হয়ে তাদের সাথে থেকে হাজারো নারীর অধিকার আদায় ও নারী নির্যতান বন্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে তিনি নিজের খরচে অনেক দুঃস্থ নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাদেরকে সেলাই মেশিন প্রদান, শতশত হিন্দু-মুসিলম কন্যা দায়গ্রস্ত পিতাকে তার কন্যার বিয়ে খরচ বহন, মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ করে দিতে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মহিলা পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বাল্যবিবাহ বন্ধ, যৌতুক ও এসিড নিক্ষেপ রোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন তিনি।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/সন্ধ্যা ৭:৩২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit