এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ নিহত হয়েছে ২৫ জন। এ সকল দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়েছেন অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন বেশুমার। গেল বছরের প্রায় প্রতিদিন ঘটেছে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে নিহতের সংখ্যা অনেকে হয়েছেন চিরতরে পঙ্গু।
২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী-শিশুসহ সব বয়সের মানুষ নিহত হয়েছেন। চৌগাছা বাসী সারাদেশের ন্যায় ২০২২ সালকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত। কিন্তু সড়কে প্রাণ কেড়ে নেয়া স্বজন হারা পরিবারগুলো এ সালকে কখনও ভুলতে পারবে না। এখনও মা হারা সন্তান, সন্তান হারা মা, স্ত্রী হারা স্বামী, স্বামী হারা স্ত্রীসহ স্বজনরা চোখের পানি লুকিয়ে কাঁদে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস হতে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত চৌগাছায় বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। অনেকে চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করছেন। আহত হয়েছেন বেশুমার। দুর্ঘটনায় স্বজনহারা পরিবারগুলোতে চলছে আহাজারী। সন্তানহারা মায়ের বুকফাঁটা আর্তনাদ, স্বামীহারা স্ত্রীর চোখের পানি, পিতৃহারা সন্তানের পিতাকে খুঁজে পাওয়ার আকুতি। এ সকল দৃশ্য এলাকাবাসীকে দারুণ ভাবে কাঁদায়।
গেল বছর ৩ জানুয়ারী চৌগাছা-যশোর সড়কে (যবিপ্রবি) বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোটরসাইকেলের সাথে ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে পৌর এলাকার তারনিবাস গ্রামের ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান (৪৫) মৃত্যু হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের ফাঁসতলা নামক স্থানে ট্রাকের চাপায় নিহত হন ইসমাইল হোসেনের (৫৬)। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার সুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন উপজেলার মন্মতপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৬৭)। ১ মার্চ চৌগাছা-কোটচাঁদপুর সড়কে মুক্তদাহ মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন উপজেলার দেবিপুর গ্রামের চান্দু মিয়ার ছেলে সার-কীটনাশক ব্যবসায়ী বিপ্লব হোসেন (৪২)। ২ মার্চ দুপুরে চৌগাছা-যশোর সড়কে ব্র্যাক অফিসের সামনে টলির ধাক্কায় মারা যান ভ্যানচালক নজরুল ইসলাম (৫৭)। তিনি উপজেলার মাজালী গ্রামের বাসিন্দা।
৬ মার্চ উপজেলার টেংগুরপুর মোড়ে সড়কের স্প্রিডব্রেকার পার হওয়ার সময় স্বামীর মোটরসাইকেল থেকে পড়ে রোজিনা খাতুন (৪০) নামে এক গৃহবধূ নিহত হন। তিনি জীবননগর উপজেলার সুবোলপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী। ১৭ মার্চ সকালে চৌগাছা-যশোর সড়কে ডিভাইন গার্মেন্টেসের সামনে আলমসাধু উল্টে চালক আছর উদ্দিন (৩৬) নিহত হন। তিনি উপজেলার কাঁকুড়িয়া গ্রামের এলাহি বক্রের ছেলে। ২৫ মার্চ রাতে চৌগাছা-যশোর সড়কের চৌগাছা সদর (কয়ারপাড়ার) ইউপি ভবনের সামনে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পথচারী কয়ারপাড়া গ্রামের আসাদুল ইসলাম (৪৫)।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরের দিন বিকেলে উপজেলার হাজরাখানা গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে শাহিনুর রহমান (২৪) ও একই গ্রামের বাবর আলীর ছেলে সাগর হোসেন (২২) নামে দুই বন্ধু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়। ৪ এপ্রিল সকালে চৌগাছা-মহেশপুর সড়কে কাভার্ডভ্যানের চাপায় রাজু আহমেদ (২৫) নামের এক যুবক নিহত হয়। রাজু উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের দানবাক্স নওদাপাড়া গ্রামের লাল্টু বিশ্বাসের ছেলে। ৯ এপ্রিল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষার্থী টেংগুরপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে লিমন হাসেন (১৭) নিহত হয়। ১২ এপ্রিল সড়কে প্রাণ যায় ব্যবসায়ী ডালিম হোসেনের (৫৬)। তিনি উপজেলার ফুলসারা গ্রামের শিক্ষক মরহুম আমজাদ হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী উষা বেগমসহ ৪ জন মারাত্মক আহত হন।
৩ জুলাই সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে জরুরি কাগজ আনতে বাড়িতে যাওয়ার পথে চৌগাছা-যশোর সড়কের কয়ারপাড়া মোড়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রকৌশলী জাহিদ হাসান জুয়েল (৩৫)। তিনি উপজেলার মাজালী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। ১২ জুলাই চৌগাছা-যশোর সড়কের কয়ারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মাইক্রো ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে স্বাধীন হোসেন (১৮) নামের এক যুবক নিহত হয়। নিহত স্বাধীন যশোর শহরের কাঠালতলার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলামের ছেলে। ২৩ জুলাই উপজেলার হাকিমপুর-বারোবাজার সড়কের চন্দ্রপাড়া বাজার মোড়ে ট্রাকে কেড়ে নিলো নাহিদ হোসেন (৭) নামে এক শিশুর। সে উপজেলার চন্দ্রপাড়া গ্রামের বাহাদুর রহমান মন্ডলের ছেলে।
২৪ এপ্রিল চৌগাছা উপজেলার আইটি বিভাগের কর্মী তন্ময় ইসলাম তপু (২৭) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। তিনি উপজেলার মাশিলা লক্ষিপুর গ্রামের কামাল হোসেনের একমাত্র ছেলে। ৫ আগস্ট মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কলেজছাত্র আরিফ হোসেনের (১৮) নিহত হয়। নিহত আরিফ পৌরসভার তারনিবাস গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমানের ছেলে এবং তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের ছাত্র ছিলো। ১৭ আগষ্ট চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের টেঙ্গুরপুর গরুহাটায় নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় বাবু মিয়া (৪৫) নামে এক গরু ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের টেঙ্গুরপুর গ্রামের মৃত হোসেন আলী মিয়ার ছেলে। ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় চৌগাছা-যশোর সড়কের নিমতলা বাজার ব্রীজ এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নজরুল ইসলাম (৭০) নামে একজন নিহত হন। তিনি ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার মানিকদি গ্রামের মৃত নসর উদ্দীনের ছেলে। ১৩ নভেম্বর সড়ক দুর্ঘটনায় মাহমুদা খানম (৩৭) নামে একজন নিহত হন। তিনি উপজেলার স্বর্পরাজপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওঃ আম্মাদুল ইসলামের স্ত্রী। সর্বশেষ ১৭ ডিসেম্বর চৌগাছা পারবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রদীপ কুমার মল্লিক (৪৫) নামে এক পল্লী বিদ্যুৎ কর্মী নিহত হন। তিনি অভয়নগন উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মৃত রতন মলিল্লকের ছেলে। এ ছাড়াও এ সকল সড়ক দুর্ঘটনায় চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন অর্ধশত মানুষ। আহত হয়েছেন বেশুমার।
কিউএনবি/আয়শা/৩১ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:২১