মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন

অনিশ্চয়তায় ইভিএম প্রকল্প

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৯৫ Time View

ডেস্কনিউজঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন। এই নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এ লক্ষ্যে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ নামে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পও হাতে নেয় সংস্থাটি। তবে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলেও প্রকল্পের প্রাথমিক কাজই শেষ করতে পারেনি কমিশন। প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে এখনো পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে পারেনি সংস্থাটি। ফলে পরবর্তী ধাপের কাজে যেতে পারেনি কমিশন। আপাতত এটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অননুমোদিত প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত জনবল কাঠামোর অনুমোদন দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশোধন দিয়ে ১ হাজার ৩০০ জনবলকে নামিয়ে আনা হয়েছে মাত্র ১৩ জনে।

আর অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে প্রশাসনিক খরচ, গাড়ি ক্রয়, ভূমি অধিগ্রহণ ও গুদাম নির্মাণে রাজি নয় পরিকল্পনা কমিশন। সবমিলিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে ইভিএম কেনার এই প্রকল্প। সেক্ষেত্রে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে চূড়ান্ত অনুমোদন না হলে আসছে সংসদ নির্বাচনে অর্ধেক আসনে ইভিএম ব্যবহার নাও হতে পারে।

চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের এই প্রকল্পকে অনেকে বিলাসী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে এই বিপুল অর্থ খরচের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া বিরোধী দলগুলো পুরো ইভিএম নিয়ে ঘোরতর আপত্তি জানিয়ে আসছে।

ইভিএম প্রকল্প নিয়ে কাজ করা পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্যামস্টেক উইংয়ের যুগ্মা প্রধান মো. আবদুর রউফ বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে আমাদের কাছে ইভিএম প্রকল্পের প্রস্তাবনা এসেছিল সেটি আমরা পর্যালোচনা করেছি এবং আমরা কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে প্রকল্প ফেরত পাঠিয়েছি। সেগুলো সংশোধন হয়ে এখনো আসেনি। আসলে আমরা সেটা যাচাই করবো সবকিছু ঠিক থাকলে পরবর্তী সময়ে আমরা সেটার ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা করবো। এরপর তাদের কাছ থেকে নানা বিষয়ে যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। তাদের যুক্তি সন্তোষজনক হলে তবেই আমরা এটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠাবো। আপাতত এটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অননুমোদিত প্রকল্পের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম মানবজমিনকে বলেন, আমরা কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছি। নির্বাচন কমিশন সংশোধন করে এখনো আমাদের কাছে পাঠায়নি। এদিকে প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া হলো-প্রথমে একটি প্রকল্পের ডিপিপি পাঠায় পরিকল্পনা কমিশনে। কমিশন ওই ডিপিপি পর্যালোচনা করে দেখে প্রকল্পের কোনো ত্রুটি বা খরচ বেশি দেখানো হয়েছে কি-না। এরপর ত্রুটিগুলো সেটা যাদের প্রকল্প তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারা সেটা সংশোধন করে পুনরায় কমিশনে পাঠায়। কমিশন আবার যাচাই করে দেখে তাদের নির্দেশনা ঠিকমতো মানা হয়েছে কি-না। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে সেটার ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের রাখা হয় পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে প্রকল্পের যেই বিষয়গুলো ত্রুটি মনে হয় সেগুলো তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারলে সেটা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়। সেখানেও আরেক দফা প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা ও খরচসহ অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এই প্রকল্পের সবকিছু যুক্তিসংগত মনে হলে তবেই প্রধানমন্ত্রী সেটা অনুমোদন দেন। এখানে অনুমোদন না পেলে সেটা আবার পুনরায় আগের সব ধাপ অতিক্রম করে একনেকে আসতে হয়। ফলে মধ্য জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন না পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। প্রকল্প অনুমোদন পেতে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

প্রকল্পের প্রাথমিক কাজই এখনো শেষ হয়নি, সেক্ষেত্রে ১৫০টি আসনে ইভিএমে নির্বাচন করা সম্ভব হবে কি-না জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা আগেই বলেছি যে, ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন না পেলে ইভিএম সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে যাবে। তখন ১৫০ আসনে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করার বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে যাবে।

প্রস্তাবিত জনবল কাঠামোর অনুমোদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৩ জন দিয়ে তো কিছু হবে না। পুনর্বিবেচনা করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডিপিপি সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর কথা। যদি এখনো না পাঠিয়ে থাকে তাহলে আজ-কালের মধ্যেই পাঠিয়ে দিবে।

ইভিএম প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কর্নেল রাকিব হাসান মানবজমিনকে বলেন, পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্প প্রস্তাব শোধন করে পাঠাতে বলা হয়েছে। আমরা কাজ করেছি। তবে এখনো পাঠানো হয়নি। এই সপ্তাহের মধ্যেই পাঠানো হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছিলেন-জানুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে ইভিএম প্রকল্প পাস না হলে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রকল্প পাস হতে এখনো সর্বনিম্ন ২ মাস সময় লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে দেড় শ’ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, জানুয়ারির মধ্যে বরাদ্দ পাওয়া না গেলে দেড় শ’ আসনে ইভিএমে ভোট করা কঠিন হবে। এটা অস্বীকার করার উপায় নাই। তবে কষ্ট হলেও দুই মাসের মধ্যে প্রকল্প পাস হলে ১৫০ আসনেই ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব। কেননা, ইভিএম প্রকল্প নিয়ে আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের জন্য কঠিন যেটা হবে সেটা হলো স্টোরেজ। আমি প্রকল্প পরিচালক হিসেবে বিকল্প স্টোরেজ ভেবে রেখেছি। পাটকল, চিনিকলের স্টোরেজগুলো পড়ে আছে। এগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এটা আমার মাথায় আছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, আগামী সংসদ নির্বাচনে ৪৫ হাজার ভোটকেন্দ্র থাকবে। এর মধ্যে ইভিএমে ভোট হবে এ রকম ১৫০ আসনে, কেন্দ্র থাকবে ২৫ হাজার। প্রতি কেন্দ্রে ৭টি করে ইভিএম থাকবে। প্রতিটি কক্ষে গড়ে দেড়টি করে মোট ২ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ কোটি ইভিএম সেটের প্রয়োজন হবে। এর বাইরে ভোটারদের শিখনের জন্য প্রতি কেন্দ্রে দুটি করে ৫০ হাজার এবং প্রশিক্ষণে ব্যবহারের জন্য আরও ২৫ হাজার প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া রিজার্ভ হিসেবে আরও ৫০০ ইভিএমের প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ৩ লাখ ৩৮ হাজার ইভিএমের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে ইসি। এসব সেট সংরক্ষণেও বিশাল খরচ গুনতে হবে। ১০টি অঞ্চলে স্টিল কাঠামোর ওয়্যারহাউস নির্মাণ করা হবে। এতদিন ইভিএম সেট সংরক্ষণে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি বকেয়া বাবদ ৩৬ কোটি ২১ লাখ টাকা দাবি করেছে।

জানা গেছে, ইসি ৩ লাখ ৩৮ হাজার ইভিএম সেট কেনার প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার সেট ইসি’র হাতে রয়েছে। নতুন কিনতে হবে ২ লাখ ইভিএম সেট। প্রতিটি সেটের দাম ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। কমিশনের হাতে থাকা বর্তমানের প্রতিটি ইভিএম সেট কেনা হয় ২ লাখ ৫ হাজার টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি মেশিনে ১ লাখ টাকা করে বেশি দাম ধরা হয়েছে। প্রস্তাবে ৪টি জিপগাড়ি এবং ৫৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার কথা বলা হয়েছে।

এসব খরচের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, এসব গাড়ি না কিনে প্রয়োজনীয় সময়ে ভাড়া নেয়া যেতে পারে। আর জমিসহ ১০টি ওয়্যারহাউস করতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। অন্যসব সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রেও আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ ধরা হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনিক খরচ, পেশাগত সেবা ও সম্মানী, মেরামত ও সংরক্ষণ, ভবন স্থাপনা, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম এবং ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে।

কিউএনবি/বিপুল/২১.১২.২০২২/ ১২.২৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit