আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীন, উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান সামরিক হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে ‘শান্তিবাদী’ ভাবমূর্তি থেকে বেরিয়ে শুক্রবার আগ্রাসী ও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে জাপান। টোকিওর প্রতিরক্ষানীতি বদল নিয়ে চলছে নানামুখী বিতর্ক। এ নিয়ে জাপানের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য আশাহি শিম্বুন’ তিনটি প্রেক্ষাপট সামনে রেখে একটি বিশ্লেষণী নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। জাপানের চারপাশে উদ্ভূত সামরিক তত্পরতা নিয়ে টোকিওর নিরাপত্তা উদ্বেগ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা কোনো ধরনের জাতীয় বিতর্ক ছাড়া যুদ্ধোত্তর (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ) নীতি থেকে সরে আসার যে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন, তা দেশটির সামরিক ব্যয়কে লাগামহীন করে তুলতে পারে এবং নতুন হুমকি তৈরি করতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক জোট
জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী (এসডিএফ) যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। নতুন কৌশল অনুযায়ী, দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা জোট সচল রাখতে গিয়ে দুই দেশের বাহিনীর কাজে ভিন্নতা আসতে পারে, যা এই জোটকে ভেঙেও দিতে পারে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, জাপান নিজেরা ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র কিনবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষানীতি বদলে ফেলে সেটিকে যতই ‘আত্মরক্ষার চেষ্টা’ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা হোক না কেন, তা প্রতিবেশীরা বিশ্বাস না-ও করতে পারে। ফুমিও কিশিদার সরকারের গৃহীত ত্রিমুখী পরিকল্পনার অন্যতম জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলের (এনডিএস) ভিত্তিতে জাপানের ‘প্রতি-আক্রমণ সক্ষমতা’ বাড়ানোর পরিকল্পনা সম্ভাব্য শত্রুদের পাল্টা সামরিক প্রস্তুতির সম্ভাবনা জোরালো করতে পারে এবং আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে।
চীনের সম্প্রসারণ
জাপানের সদ্যঃপ্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের শাসনামলে ২০১৩ সালে সংকলিত প্রথম জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে (এনএসএস) জাপানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য চীনকে হুমকি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ওয়াশিংটন প্রভাবিত এই বক্তব্যের পুনর্মূল্যায়নে বলা হয়, জাপানের কাছে চীন ‘অভূতপূর্ব এবং বৃহত্তম কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’। নিকটতম প্রতিবেশী হওয়ায় চীনের সঙ্গে জাপানের অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া পূর্ব এশিয়ায় জাপানের সঙ্গে চীনের সংঘাত হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে জাপানের জনগণের জীবন ও সম্পদের জন্য বেশি ক্ষতিকর হবে। সুতরাং চীনের সর্বাত্মক সংঘাতের পরিবর্তে জাপানের উত্তেজনা প্রশমন এবং যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করা হয়েছে বিশ্লেষণী নিবন্ধে।
ব্যাখ্যা কিংবা সম্মতি ছাড়া গৃহীত নীতি
নিরাপত্তানীতি বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের গলদ দেখা গেছে। কিশিদা বারবার বলে গেছেন, তিনি প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে নতুন উদ্যোগ নেবেন। গত জুলাই মাসে নির্বাচনের সময় কিশিদা নীতি বদল নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে তিনি ঘোষণা দেন, পাঁচ বছরে মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশ নিরাপত্তাসংক্রান্ত ব্যয় করবেন তিনি। এসংক্রান্ত ব্যয়ের ৭৪০ কোটি ডলার সংস্থান করা হবে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে। তিনি এসব সিদ্ধান্ত বেশ তাড়াহুড়া করে নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্লেষণী নিবন্ধে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের উচিত ছিল, নিরাপত্তা উদ্বেগকে সামনে রেখে জনগণের সামনে সমাধানের অনেকগুলো বিকল্প দেখানো এবং জনগণকে ‘অবহিত করে সম্মতি আদায়ের’ চেষ্টা করা। কিন্তু তিনি জনগণকে এমন একটি কড়া ওষুধ চাপিয়ে দিয়েছেন যার অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
কিউএনবি/আয়শা/১৭ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/রাত ১০:১৪