শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

সন্তান প্রতিপালনে কোরআনের নির্দেশনা

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৯২ Time View

ডেস্ক নিউজ : ধন-সম্পদ আর সন্তানাদি পার্থিব জীবনের শোভা-সৌন্দর্য, আল্লাহর দেওয়া আমানত। এই আমানত সম্পর্কে মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (বুখারি, হাদিস : ৭১৩৮)।
 
তাই আমাদের উচিত, সন্তানকে নেক সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করা। নিম্নে সন্তান গড়ার কোরআনি নির্দেশনাগুলো তুলে ধরা হলো—

সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা : সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হলে তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। যাতে সে যেকোনো সমস্যার ব্যাপারে নির্দ্বিধায় মা-বাবার সঙ্গে আলাপ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সন্তানকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে বহু ভুল সিদ্ধান্ত ও বিপদ থেকে রক্ষা করা যায়। যে ইউসুফ (আ.) তাঁর বাবার সঙ্গে স্বপ্নের বিষয়ে আলোচনা করলেন, তিনি তাঁকে ওই স্বপ্নের ব্যাপারে কারো সঙ্গে আলোচনা করতে বারণ করেন। পবিত্র কোরআন ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল, হে আমার পিতা, আমি দেখেছি এগারোটি নক্ষত্র, সূর্য ও চাঁদকে, আমি দেখেছি তাদেরকে আমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায়। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৪)।

সন্তানকে সতর্ক করা : সন্তানরা জীবন সম্পর্কে কম অভিজ্ঞ হয়, তাই বাবার উচিত, তাদের কঠিন এই পৃথিবী সম্পর্কে সতর্ক করা, যে পথে বিপদের আশঙ্কা আছে, সে পথ এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেওয়া। যেমন—ইউসুফ (আ.)-এর বাবা তাঁকে সতর্ক করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, তার পিতা বললেন, ‘হে আমার পুত্র! তোমার স্বপ্নের কথা তোমার ভাইদের কাছে বর্ণনা কোরো না। যদি করো তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। শয়তান তো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৫)।

সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনে সুপরামর্শ দেওয়া : প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কিছু সম্ভাবনা থাকে, তা বুঝে তাকে সেই সেক্টরে দক্ষ করে তুললে ও উৎসাহ দিলে সে সফল হতে পারে। বাবার উচিত, সন্তানকে সুশিক্ষিত করার পাশাপাশি তার মধ্যে থাকা সম্ভাবনাগুলো সম্পর্কে তাকে উৎসাহ দেওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,  ‘(স্বপ্নে যেমন দেখেছ) এভাবে তোমার প্রতিপালক তোমাকে মনোনীত করবেন, তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেবেন এবং তিনি তাঁর অনুগ্রহ তোমার প্রতি আর ইয়াকুব পরিবারের প্রতি পূর্ণ করবেন, যেভাবে তিনি তা পূর্বে তোমার পিতৃপুরুষ ইবরাহিম ও ইসহাকের প্রতি পূর্ণ করেছিলেন, নিশ্চয়ই তোমার রব সর্বজ্ঞ, বড়ই প্রজ্ঞাবান। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৬)।

সন্তানদের মধ্যে সমতা বজায় রাখা : সন্তানদের আদর-সমাদর ও তাদের পেছনে খরচ করার ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখা। যাতে করে তাদের নিজেদের মধ্যে একে অপরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি না হয়। যেমন ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা যখন ধারণা করল যে ইউসুফ (আ.)-কে তাদের বাবা একটু বেশি আদর করছেন, তখন তারা তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ কর, যখন তারা (বৈমাত্রেয় ভাইরা) বলাবলি করছিল, ‘নিশ্চয়ই ইউসুফ আর তার (সহোদর) ভাই আমাদের পিতার কাছে আমাদের চেয়ে বেশি প্রিয়, অথচ আমরা পুরো একটা দল, আমাদের পিতা স্পষ্ট ভুলের মধ্যে আছেন। তোমরা ইউসুফকে হত্যা করে ফেল কিংবা তাকে কোনো ভূমিতে ফেলে আস, তাহলে তোমাদের পিতার দৃষ্টি তোমাদের প্রতিই নিবদ্ধ হবে, তার পর তোমরা (তাওবাহ করে) ভালো লোক হয়ে যাবে। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৮-৯)।

উল্লেখ্য, এখানে এটা কখনোই বলা যাবে না যে ইয়াকুব (আ.) তাঁর সন্তানদের মধ্যে সমতা বজায় রাখেননি, বরং তিনি তাঁর সব সন্তানকেই ভালোবাসতেন। কিন্তু ইউসুফ (আ.)-এর ব্যাপারে যেহেতু আল্লাহর বিশেষ ইশারা আছে, তাই তাকে নিরাপদে রাখার জন্য সবার থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করতেন।

তাদের খেলাধুলার সুযোগ দেওয়া : সন্তানের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে খেলাধুলার প্রয়োজন রয়েছে, তাই তাদের খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে। এই জন্যই ইয়াকুব (আ.) তাঁর সন্তান ইউসুফ (আ.)-কে ভাইয়ের সঙ্গে খেলার জন্য মাঠে পাঠিয়েছিলেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলল, হে আমাদের আব্বাজান! কী ব্যাপার, আপনি ইউসুফের ব্যাপারে আমাদের বিশ্বাস করেন না কেন, অথচ আমরা অবশ্যই তার কল্যাণকামী। তাকে আগামীকাল আমাদের সঙ্গে পাঠিয়ে দিন, সে আমোদ করবে আর খেলবে, আমরা তার পুরোপুরি দেখাশুনা করব। ’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ১১-১২)।

শিরক থেকে দূরে রাখা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ কর, যখন লুকমান তার ছেলেকে নসিহত করে বলেছিল—হে বৎস! আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শিরক কোরো না, শিরক হচ্ছে অবশ্যই বিরাট জুলুম। ’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৩)।

মা-বাবার খেদমতের দীক্ষা দেওয়া : কারণ এটা মহান আল্লাহর নির্দেশ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, (নির্দেশ দিচ্ছি) যে আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। (তোমাদের সবার) প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে। তোমার পিতামাতা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার অংশীদার স্থির করার জন্য, যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না। কিন্তু পৃথিবীতে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করবে। যে আমার অভিমুখী হয় তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর আমারই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদের জানিয়ে দেব তোমরা যা করছিলে। ’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৪-১৫)।

কৃতজ্ঞতার শিক্ষা দেওয়া : উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। ’ এখান থেকে বোঝা যায়, সন্তানকে কৃতজ্ঞতার শিক্ষা দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

নামাজ কায়েমের শিক্ষা দেওয়া : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বৎস! তুমি নামায কায়েম কর। …’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৭)।

সৎ কাজে আদেশ, অসৎ কাজে বাধা প্রদান শেখানো : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘…সৎ কাজের নির্দেশ দাও, আর মন্দ কাজ হতে নিষেধ কর…’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৭)।

ধৈর্য ধারণ শেখানো : যে পরিস্থিতে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ শেখানো বাবার দায়িত্ব। ইরশাদ হয়েছে, ‘…এবং বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চয় এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। ’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৭)।

অহংকার ও দাম্ভিকতা থেকে দূরে রাখা : ‘অহংকারের বশবর্তী হয়ে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না, আর পৃথিবীতে গর্বভরে চলাফেরা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৮)।

সংযত জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করা : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘চলাফেরায় সংযত ভাব অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর নিচু করো। স্বরের মধ্যে নিশ্চয়ই গাধার স্বর সর্বাপেক্ষা শ্রুতিকটু। ’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৯)।

কিউএনবি/অনিমা/০৬ ডিসেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সকাল ৮:৫২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit