উল্লাস করের জন্মভিটা রক্ষায় সংস্কৃতিকর্মীরা মাঠে, জাতীয় পতাকা হাতে মানববন্ধন
বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ।
Update Time :
বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২
১২৫
Time View
বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ গ্রামের দত্তপাড়ার যে বাড়িতে বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্ম সেটি রক্ষায় মাঠে নেমেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। ঐতিহ্যবাহী ওই বাড়িকে পিছনে ফেলে নতুন ভবন উঠতে থাকায় এ সোন্দর্য্য বিলীনের শঙ্কা থেকে সংস্কৃতিকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হলে তারা মাঠে নামেন। আন্দোলনকারিদের দাবি, ভবনসহ বাড়িটিকে সরকার যেন প্রততাত্বিক স্থাপনার আওতায় নিয়ে আসে।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমি যৌথভাবে মানববন্ধনের আয়োজন করে। বাড়ির ঠিক সামনে হওয়া এ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, সাহিত্য একাডেমির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন, উদীচী জেলা সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী স্বপন, সাধারন সম্পাদক ফেরদৌস রহমান, বাউল শিল্পী মাহফুজা খানম, মোজাম্মেল হক, আবুল কাসেম, মো. শাহীনূর। বৃহস্পতিবার একই দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। স্থানীয় সুধী সমাজও বিপ্লবী এ মানুষটির বাড়ির রক্ষার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
১৮৮৫ সালের ১৬ এপ্রিল কালীকচ্ছের দত্তপাড়ার বাড়িতে বিপ্লবী উল্লাসকরের জন্ম। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তাঁর ভ‚মিকা ছিলো অনন্য। উল্লাসকর দত্ত ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে আলিপুর বোমা হামলা মামলায় উল্লাসকরের ফাঁসির আদেশ হয়। তবে পরবর্তীকালে এ সাজা পরিবর্তন করে তাঁকে আন্দামানের সেলুলার জেলে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়। জেলখানায় তাকে শারিরিক নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়। এতে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৯২০ সালে উল্লাসকর দত্তকে মুক্তি দেওয়া হলে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন।
উল্লাসকর দত্ত কে পরে ১৯৩১ সালে আবারও গ্রেপ্তার করা হয় ও তাঁকে ১৮ মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়। ১৯৪৭ এর ভারত বিভাগের পর তিনি কালীকচ্ছ গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ৬৩ বছর বয়সে বিশিষ্ট নেতা বিপিনচন্দ্র পালের বিধবা মেয়েকে বিয়ে করেন। কালীকচ্ছের বাড়িতে ১০ বছর কাটানোর পর তিনি ১৯৫৭ সালে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন। পরে তিনি শিলচরে যান এবং সেখানেই ১৯৬৫ সালের ১৭ই মে মৃত্যুবরণ করেন।স্থানীয় সূত্র জানায়, কালীকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আহমেদুর রহমানের পরিবার থাকেন এ বাড়িটিতে। তাঁদের দাবি ক্রয় সূত্রে এ বাড়ির মালিক।
নিজেদের প্রয়োজনে পুরাতন ভবনের সামনে নতুন করে ভবন করছেন। বাড়িটি রক্ষায় সরকার কিংবা কেউ এগিয়ে এলে বিষয়টি সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন আহমেদুর রহমান।উদীচী সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী স্বপন বলেন, ‘উল্লাস কর দত্তের বাড়ি মানে এটা ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। একজন বিপ্লবী মানুষের পাশাপাশি বাড়িটি শত বছরের ঐতিহ্য বিধায় সরকার ইচ্ছা করলে একটি প্রত্ন তাত্বিক স্থাপনার আওতায় নিয়ে এসে সংরক্ষণ করতে পারে। আমরা চাই উল্লাস করের স্মৃতি সংরক্ষণ হোক। আমরা এ বিষয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’