সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন

দৌলতপুরে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাস জনিত গরুর রোগ : আতঙ্কে ক্ষুদ্র খামারীরা

মো. সাইদুল আনাম, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ।
  • Update Time : সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৩২৪ Time View

মো. সাইদুল আনাম, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাস জনিত একধরণের গরুর রোগ। যা ‘লাম্পি স্কিন ডিজিস’ নামে পরিচিত। এতে গরুর গায়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে ফোসকা বা ক্ষতের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গরু পালনকারী ক্ষুদ্র খামারী সহ সবধরণের খামারীদের মাঝে। তাদের অভিযোগ এ রোগ নিয়ন্ত্রনে প্রাণী সম্পদ বিভাগের নেই কোন তদারকি।

গরু পালনকারীরা জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলায় এ রোগের সবচেয়ে বেশী বিস্তার ঘটেছে। ফলে গরু পালনকারী খামারীদের মাঝে নতুন করে রোগ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ উপজেলার প্রতিটি ক্ষুদ্র খামারীর পালনকরা গাভী বা গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে দৌলতপুর প্রাণী সম্পদ বিভাগের কোন দেখভাল বা তদারকি না থাকার অভিযোাগ খামারীদের। ফলে খামারীরা তাদের পালনকরা গরু নিয়ে রয়েছেন চরম আতঙ্ক ও উৎকন্ঠায়। খামারীরা জানান, তাদের গরুর গায়ে প্রথমে ফোসকা দেখা দিচ্ছে। পরে তা গরুর সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়ছে এবং ঘা বা ক্ষত দেখা দিচ্ছে।

গরুর এ রোগ হলে গরু খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে এবং গরু শুইয়ে থাকলে আর উঠে দাড়াতেও পারছেনা। গরুর এ রোগ দৌলতপুরের প্রায় সব গ্রামেই ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসার অভাবে অনেকের গরু মারাও গেছে। দৌলতপুর প্রাণী সম্পদ বিভাগে যোগাযোগ করা হলে তারা গরুর চিকিৎসা দিতে চাই না। আবার দৌলতপুর প্রাণী সম্পদ বিভাগের চিকিৎসককে গরুর চিকিৎসার জন্য ডাকা হলে তিনি ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা ভিজিট চান। না দিলে তিনি যেতে চাননা। দৌলতপুর প্রাণী সম্পদ অফিস ও অফিস সংলগ্ন পশু চিকিৎসার দোকানগুলিতে একাধিক দালাল রয়েছে। দালালরাই মুলত দৌলতপুর প্রাণী সম্পদ অফিস নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

দৌলতপুর উপজেলার চুয়ামল্লিকপাড়া ও কাঞ্চনগর গ্রামের গরু পালনকারী পিয়ার আলী, রানা হোসেন ও শাহীন আলী জানান, তাদের গরুর গায়ে ফোসকা ও ঘা হলে দৌলতপুর পশু অফিসে গেলে তারা গরুর চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আবার গরুর চিকিৎসার জন্য বাড়ি ডাকা হলে পশু ডাক্তার ১৫০০ টাকা ভিজিট চাইলে আমার স্থানীয়ভাবে গরুর চিকিৎসা দিয়েছি। দৌলতপুর প্রাণী সম্পদ অফিসের বিরুদ্ধে দৌলতপুরের বিভিন্ন এলাকার ক্ষুদ্র খামারীদের এমন অভিযোগ আরো রয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেন।

গরুর রোগের বিষয়ে দৌলতপুর প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুল ইসলাম বলেন, এটি একটি ভাইরাস জনিত নতুন রোগ, যা মশা মাছির মাধ্যমে ছড়াই। লাম্পি স্কিন ডিজিস সংক্ষেপে ‘এলএসডি’ রোগ নামে পরিচিত। এ রোগের এখনও ভ্যাকসিক পাওয়া যায়নি। গরুর এ রোগ দেখা দিলে মশারীর মধ্যে রাখার পরামর্শসহ এরোগের বিষয়ে খামারীদের সচেতন করার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি গরুর এ রোগের জন্য প্রাণী সম্পদ অফিসে গিয়ে পরামর্শ নেওয়ারও আহ্বান জানান। তবে ভিজিট নেয়া বা চাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও প্রাণী সম্পদ অফিস কেন্দ্রিক দালল মুক্ত করার বিষয়ে একটু সময় লাগবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে এ রোগে আক্রান্ত গরুর পরিচর্যা করতে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে গরু পালনকারীদের। তাদের ধারণা গরু শরীর থেকে মানুষের দেহে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। গরুর এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ হলেও এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। এ রোগ প্রতিরোধে খামারীদের সচেতন করতে উঠোন বৈঠক সহ রোগ নিরাময়ে পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণী সম্পদ বিভাগ বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান।

আর্থিক নিরাপত্তার জন্য দরিদ্র পরিবারগুলো একটি বা দু’টি গরু পালন করে থাকেন। রোগে আক্রান্ত হয়ে সন্তানের মত পালনকরা গরুটির কোন ক্ষতি হলে তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। আর এ জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট বিভাগের বেশী বেশী তদারকি। এমনটাই মনে করেন ক্ষুদ্র খামারী সহ সংশ্লিষ্টগণ।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit