পুষ্প বিলাস
—————
আমার ছোট বেলাটা ছিল খুব আনন্দের। বড় বাড়ি, বাড়ির সামনে হরেক রকমের গাছ পালা, আম, জাম,কাঁঠাল, পেয়ারা,আতাফল, নারিকেল,জাম্বুরা আরও কত রকম গাছ। আমাদের উঠানে আব্বা ফুলের বাগান করতেন। নিজেই নার্সারী থেকে নানা রংয়ের ফুল গাছ কিনে আনতেন। আব্বা নিজেই গাছের পরিচর্যা করতেন। সপ্তাহে একদিন একজন মালী আসতেন গাছের পরিচর্যা করার জন্য। আমার তিন ভাই আর আমি মাঝে মাঝেই আব্বার সাথে বাগানের আগাছা পরিষ্কার করতাম, গাছগুলো তে পানি দিতাম।
প্রকৃতির সাথে তখন থেকেই আমাদের আত্মার একটা সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে। প্রকৃতির সাথে এই সম্পর্ক যেনো বিনা সূতায় বাঁধা। সবুজের কাছাকাছি থাকতে সেই ছোট বেলায় বাবাই আমাদের শিখিয়েছেন। এখনও সেই সবুজের প্রতি ভালো লাগা, ভালোবাসা রয়ে গেছে।
আব্বা ঘরে সবসময় তাজা ফুল রাখতেন । আববা আমাদের সবসময় বলতেন তোমার কাছে যদি দশ টাকা থাকে তবে তা দিয়ে তুমি পাঁচ টাকার খাবার কিনবে, আর বাকী পাঁচ টাকায় কিনবে ফুল। পেটের যেমন খাবার দরকার তেমনি মনের ও খাবার প্রয়োজন। আর মনের খাবার হচ্ছে ফুল। ফুল যদি ঘরের মধ্যে থাকে তবে ফুলের দিকে চোখ পড়লে মন ভালো হবেই।
আব্বা মারা যাওয়ার আগের কয়েক মাস নিজে বাইরে গিয়ে ফুল কিনতে পারতেন না। এতো অসুস্থ তারপর ও ফুল কিনে আনাতেন। আমরাও মাঝে মাঝে ফুল কিনে আনতাম। ফুল আনলে আব্বা একদম শিশুদের মত খুশী হয়ে যেতেন। বেলী ফুলের মালা চোখে পড়লেই আব্বার সেটা চাই। ঘরে এনে আম্মার হাতে দিতেন। আমি বাসায় থাকলে আমাকে, আমার মেয়ে হবার পর বেশির ভাগ বেলী ফুলের মালা আমার মেয়ে পেয়েছে। এখন আমার মেয়ে ও তার নানার মত বেশী ফুল দেখলে আমার জন্য নিয়ে আসে, আমি মেয়ের জন্য। হয়তো আমি যখন থাকবো না আমার মেয়ে তার মায়ের, নানার কথা মনে করে বেলীফুলের মালা কিনে দিবে তার সন্তান কে, এভাবেই বংশপরম্পরায় এই ভালোবাসা আর ভালো লাগা চলতে থাকবে। জীবন সুন্দর।
লেখিকাঃ ইফ্ফাত আরা একজন মনোবিজ্ঞানী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে পড়াশোনা করেন। এখন নিজ প্রতিষ্ঠান Family And Community Empowerment Support থেকে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করেন। ব্যস্ততার মাঝেও সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করেন। আজকের এই পোস্টটি তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহিত।
কিউএনবি/বিপুল/১৪.০৯.২০২২/দুপুর ২.৪০