ঘর মন জানালা
——————
আজ কতো দিন শরীর মন দুটোই ভরপুর খারাপ গেলো ছেলেকে নিয়ে হাসপাতাল করতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ফিরে বিশ্রামের আশায় মায়ের কাছেও ছিলাম। মানুষের যে কখন কি হয়!
তার পরেও রহমতকারীর নিকট শুকরিয়া খুব ভালো রেখেছেন। হাসপাতাল না করলে বোঝা যায় না সুস্থতা কতবড় নিয়ামত। এই কয়দিনে আমার কাজের সাহায্য কারি মেয়েটার সংসার ওলটপালট হয়ে গেছে!
আমার ননদের মেয়েটার স্কুল কোচিং ঠিক মত হয়নি। আমার সন্তান ও সাহেবের, দুইজনেরই অফিসিয়াল কাজ অনেকটা এলোমেলো হয়ে পরেছে, যেগুলোর দায়িত্ব আমার উপর ছিল। আমার তদারকির অভাবে এ মাসে বাসাটা খালি যাচ্ছে, ভাড়াটিয়া পাওয়া গেলো না। আমার আত্মীয়ের দেশে আসার তারিখ পরিবর্তন করতে হয়েছে আমি ঘরে নেই বলে। এই আমিটা কতো মানুষের কতো কাজে আসি, কাজ থামিয়ে দিলে আসলে বোঝা যায়। তার পরেও প্রতিটা মহিলাকেই সম্ভবত শুনতে হয় সারাদিন কি করো?
আজ কিচেনের জানালায় এসে মুরগী ও মাছের উচ্ছিষ্ট আহারি খাওয়ার জন্যে কাক গুলোর দেখা নেই। প্রতিদিন উড়ে উড়ে এসে নির্ভয়ে খাবার খেতো, তারা ক্ষুধায় হয়তো এ কয়দিনে অন্য জানালায়। আজ মেয়েটা আমাকে বলছে, আফা দেখছেন ওরা আর আইতাছে না মনে হয় ভুইলা গেছে, আমগো কথা। প্রতিদিন আধাপোয়া হইবো মুরগী, মাছ পরিস্কার কইরা বাইর অয়, কলিজাডারেও কুইট্টা খাওয়াই আর দেহেন আমাগো ভুইল্ল্যাগেছে!
আমি বললাম হ্যা এরকমই হয় রে সুলতানা, নয়দিন ভালোবাসার পর যদি কোন কারনে দশ নম্বরদিন মানুষ কে ভালোবাসতে না পারা যায় তবে পূর্বের নয়দিন কেও মানুষ মনে রাখতে চায় না। তবে কাক দেখবি ঠিক চলে আসবে বলতে বলতেই কাকের আগমন পলিথিনের ট্রে থেকে একে একে এসে সব খাবার খেয়ে গেলো নির্ভয়ে মাঝে মাঝে ওর হাত থেকেও খায় । খুব আত্মসম্মান কাকেদের ক্যামেরা নিয়ে আমি এগোলেই পালায়। আমার জানালায় খায় এটা ওরা দুনিয়াকে দেখাতে চায় না বোধহয়।
সুলতানা বলে ওঠে আফা, আমি অন্য মানুষগো মতো না। আপনি রাগকরলেও আমি আবার আহি দেহেন না? আপনার এই ঘরডার মধ্যে ঘুম ভাইঙ্গা প্রত্থমে না আইলেই দেখছি হেই দিনডাই আমার অমঙ্গল অয়! দেহেন না আপনি ঘরে নাই এই কয়দিনে আমার সব তছনছ হয়ে গেছে। মাকসুর বাপে ফিটাইয়া আমার কিচ্ছু রাহে নাই! গতবছরের মতো এইবার ও ডাক্তার লাগবো মনে কয়। আমার হারা শরীলডা বিশ করে আফা একটুকুন ও ঘুমাইতে ফারি না।
ঘুমাও না ঘুমাও ডাক্তার দেখালেও গতবারের মতো তোমাকে আমি আর আমার ঘরে রাখছি না। সারারাত তোমার চিৎকারে আমরা কেউ ঘুমাতে পারিনি নিজে তো আরাম করে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ঝগড়া চালিয়েছিলে। মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এতো চেঁচামেচি করে কিভাবে !
আফা দেন না এট্টু আপনার আইফুনডা, এটটুকু দেন আমার হাতোত, লগডা খুইল্লা, মাকসুর বাপের লগে কথা কমু দেননা আফা, আফা গো দেন না!! আমি কিন্তু কাইনদ্যা দিমু!! ও আমার নাম্বার বলোক কইরা রাখছে!ও আফা আফা গো ওই একটুও বুঝে না আমি একদিনও ওর লগে কথা না কইয়া থাকতে পারিনা গো আফা!
অতঃপর সুলতানার হাউমাউ করে কান্না। সুলতানা অসম্ভব প্ররিশ্রমী ও বুদ্ধিমতি যার মনে সমুদ্র সমান প্রেম তার চরিত্রহীন স্বামীর জন্য। ওর নাকি বিয়ের বয়স সাত বছর। ছয় বছরের একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে ওদের। আর ওর স্বামী ওর পরে আরো তিন টা বিয়ে করেছে। ও প্রত্যেক বারই নিজস্ব চেষ্টায় স্বশরীরে স্বামী কে ফিরিয়ে এনেছে নিজের কাছে। আমিও দুইবার থানায় ঢুকিয়ে পিটিয়ে ভালো করার চেষ্টা করেছি কিন্তু এর পর আবার যা তাই! বাবা বলতেন, পাহাড় পরিবর্তন হয়, কিন্তু স্বভাব নয়! দেখলাম সত্যিই তাই। পাঁচ বছর মেয়েটা আমার সাথে আমার ঘরের কাজ ও রান্নায় সাহায্য করছে। ওর কষ্ট ও আমার সাথে মাঝে মাঝে শেয়ার করে। আমি ওকে বহুবার বলেছি এই চরিত্রহীনের আশায় না থেকে নিজের সুখ খুঁজে নাও। নতুন করে জীবন শুরু করো। কিন্তু ওর এক কথা মানুষের জন্ম, মৃত্যু বিয়া একবারই হয় গো আফা। আমার চোখে দেখা সেরা চরিত্রের মেয়ে সুলতানা। কিন্তু প্রশ্ন জাগে ওর স্বামীর কাছে যারা আসে তারা ঠিক কোন চরিত্রের!?
লেখিকাঃ ‘গুলশান আরা ইসলাম’ এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে পোস্টটি সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের গুলশান আরা ইসলাম নিয়মিতভাবে চমৎকার লেখনীর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক চমৎকার পোস্ট উপহার দিয়ে থাকেন।
০৮.০৯.২০২২/ রাত ১১.১০