বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩০ অপরাহ্ন

আধুনিক বিজ্ঞানের প্রভাবশালী ৮ মুসলিম নারী

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ২৪২ Time View

ডেস্ক নিউজ : আধুনিক যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলিম নারীদের পদচারণ বেড়েছে। স্টেম এডুকেশন বা সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথমেটিকস—এই চারটি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে তারা। বিশ্বের সাড়া-জাগানো আট মুসলিম নারী বিজ্ঞানীর সঙ্গে আমরা আজ পরিচিত হব। শিক্ষা ও গবেষণায় হিজাব ও ধর্মীয় অনুশাসন তাঁদের সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে প্রেরণা জুগিয়েছে।

হিসা আল জাবির : হিসা বিনতে সুলতান আল জাবির একজন প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি কাতারের বর্তমান আমির শেখ তামিমের প্রথম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী। কাতারের আইসিটি অবকাঠামো ও টেলিযোগাযোগে বিপ্লব ঘটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শিশুদের সুরক্ষায় পথ দেখান তিনি। উপসাগরীয় দেশগুলোর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন উপগ্রহ ‘ইশাইল’ তৈরির প্রচেষ্টায় প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেন তিনি। তা ছাড়া প্রথম কাতারি নারী হিসেবে জার্মানভিত্তিক আন্তর্জাতিক কম্পানি ফোকসভাগেনের সুপারভাইজরি বোর্ডে নিযুক্ত হন। ২০১৭ সালে তিনি কাতার আমির কর্তৃক প্রথম নারী হিসেবে আইন প্রণয়নকারী কনসালটেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নিযুক্ত হন।

হায়াত আল সিন্দি : মক্কায় জন্ম নেওয়া এই নারী একজন সৌদি বায়োটেকনোলজিস্ট। মধ্যপ্রাচ্যে এ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রথম নারী তিনি। জর্জ হোয়াইটসাইডসের বিখ্যাত গবেষণাগারে যোগ দিয়ে সবার নজর কাড়েন তিনি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তির সহজায়নে প্রতিষ্ঠিত ডায়াগনস্টিকস ফর অলের সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি। তা ছাড়া মর্যাদাপূর্ণ হার্ভার্ড এন্টারপ্রাইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে একটি প্রজেক্টের জন্য ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে এক লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কার লাভ করেন। পাশাপাশি বিল গেটস থেকেও আরো ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সংগ্রহ করেন।

ডা. রানা দাজানি : ফিলিস্তিনি-জর্দানীয় আণবিক জীববিজ্ঞানী ডা. রানা দাজানি আম্মানের হাশেমিয়াহ ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান ও জৈব-প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক। আরব ও মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী এই নারী বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীর মধ্যে ১৩তম অবস্থানে। আণবিক জীববিজ্ঞান, জেনেটিকস ও স্টেম সেল তাঁর গবেষণাক্ষেত্রগুলোর অন্যতম। ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের ওপর তাঁর জিনোম-ওয়াইড অ্যাসোসিয়েশন অধ্যয়ন জর্দানে স্টেম সেল রিসার্চ এথিকস ল ফ্রেমওয়ার্কের বিকাশে সহায়তা করে। গবেষণার পাশাপাশি নারীশিক্ষা ও ক্ষমতায়নে কাজ করেন তিনি।

আয়েশা আল সাফতি : মিসরীয় বংশোদ্ভূত আয়েশা আল সাফতি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কম্পিউটারবিজ্ঞানী। তিনি অ্যাডহক নেটওয়ার্কিংয়ে বিশেষজ্ঞ, যা দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কম্পিউটেশনাল ডিভাইসের সংযোগ ওয়্যারলেস প্রযুক্তির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে ব্যবহৃত হয়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার ধর্ম আমাকে কাজ করতে নানাভাবে অনুপ্রেরণা জোগায়। পবিত্র কোরআন আমাদের ক্রিয়াকলাপ ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে একটি বিশ্লেষণমূলক পরীক্ষায় ফেলার ওপর জোর দেয় এবং পূর্ববর্তীদের মতামতকে ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ করে। এই মনোভাব সব বিজ্ঞানীর জন্য অপরিহার্য। আর কম্পিউটারবিজ্ঞানে যেকোনো দাবিকে গাণিতিক ও যৌক্তিক বিন্যাসে ব্যাখ্যা, বোঝা ও যাচাই করা হয়। ’

তিনি বলেন, ‘কেমব্রিজে আসার পর এক বিজ্ঞানী আমাকে বলেছিলেন যে আমি ব্যর্থ হব। কারণ আমি নারী এবং ধর্ম বিজ্ঞানের সঙ্গে যায় না। আমি শুধু মুসলিমদের নয়, বরং সারা বিশ্বের নারী বিজ্ঞানীদের বলতে চাই, আমাদের সেতু পার হওয়া উচিত এবং মানুষের মধ্যে ভালো কিছু খোঁজা উচিত। আমি চাই, নারীরা নিজেদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুক। বিশ্ববাসীকে বলব, আপনার স্বপ্নকে ছোট করার সুযোগ দেবেন না। কারণ আপনি যদি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখেন তাহলে স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যান। ’

সামিরা ইসলাম : সৌদি ফার্মাকোলজিস্ট ও শিক্ষাবিদ সামিরা ইবরাহিম ইসলাম। বর্তমানে তিনি কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটির কিং ফাহাদ মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের ড্রাগ মনিটরিং ইউনিটের প্রধান। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করে সৌদি নারীদের আনুষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তা ছাড়া নার্সিং ফ্যাকাল্টি খোলার ক্ষেত্রেও তিনি প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁর প্রধান আগ্রহের ক্ষেত্র ড্রাগ মেটাবলিজম। আরব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফাউন্ডেশন বোর্ড এবং বিজ্ঞান ও গবেষণায় অবদানের জন্য তিনি মক্কা অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স লাভ করেন।

খাতিজাহ মোহাম্মদ ইউসুফ : মালয়েশিয়ার শিক্ষাবিদ ও ভাইরোলজিস্ট খাতিজাহ মোহাম্মদ ইউসুফ। পেনাংয়ে পড়াশোনার পর অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব ইউনিভার্সিটিতে কলম্বো প্ল্যান স্কলারশিপ নিয়ে পড়েন তিনি। পোলট্রি ভাইরাস বিষয়ক তাঁর গবেষণা নিউক্যাসল ডিজিজ ভাইরাস (এনডিভি) বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০০৫ সালে এশিয়ার দ্বিতীয় বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি মাইক্রোবায়োলজির জন্য ইউনেসকোর কার্লোস ফিনলে পুরস্কার লাভ করেন। ২০০২ সালে হাউটন ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ওয়ার্ল্ড ভেটেরিনারি পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (ডাব্লিওভিপিএ) কংগ্রেসে পোলট্রিশিল্পে অবদানের জন্য প্রথম এশীয় বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।

বুরসিন মুতলু পাকদিল : তুরস্কের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী বুরসিন মুতলু পাকদিল। পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে তুরস্কের বিলকেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। কিন্তু সেখানে হিজাব নিষিদ্ধের পরও তা পরায় নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে মিনেসোটা ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যাস্ট্রোফিজিকস বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ইউনিভার্সিটি অব আরিজোনায় পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সহযোগী নিযুক্ত হন। ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোয় কাভলি ইনস্টিটিউট ফর কসমোলজিক্যাল ফিজিকস (কেআইসিপি)  পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কাজ করছেন। ২০২০ সালে তিনি টেড-এডের সিনিয়র ফেলো ছিলেন। আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি ও ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তিনি। গবেষণার সময় তিনি বিরল গ্যালাক্সি আবিষ্কার করেন, যা তাঁর নামেই (ইঁৎপরহ’ং ধেষধীু) বেশ পরিচিত। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মুসলিম নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

তাহানি আমির : মিসরীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশ প্রকৌশলী তাহানি আমির। বিয়ের পর মাত্র ১৭ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। যান্ত্রিক প্রকৌশলে স্নাতক এবং মহাকাশ প্রকৌশলে স্নাতকোত্তরের পর তিনি ভার্জিনিয়ার ওল্ড ডোমিনিয়ন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৯২ সালে নাসায় কাজ শুরু করেন। সেখানে কম্পিউটেশনাল ফ্লুইড ডাইনামিকস প্রজেক্ট (সিএফডি) নামে তাঁর একটি প্রকল্প ছিল। তাঁর কাছে ধর্ম ও ইসলাম উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কর্মক্ষেত্রের বাইরে তিনি জনসাধারণকে ইসলাম বুঝতে সহায়তা করেন। ২০১৪ সালে নারী ও সংখ্যালঘুদের বিজ্ঞানবিষয়ক ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য নাসার পক্ষ থেকে পাবলিক সার্ভিস পুরস্কার লাভ করেন। তিনি তাঁর জীবনে তিনটি মূলনীতি অনুসরণ করেন—সৃষ্টিকর্তাকে অনুগ্রহ করুন এবং আপনি সবাইকে খুশি করতে পারবেন। শিক্ষা সুযোগের চাবিকাঠি। সহানুভূতি ও অনুগ্রহের মাধ্যমে অন্যের সেবা করুন।

সূত্র : দ্য মুসলিম ভাইব

মুসলিম হেরিটেজ ও নাসার ওয়েবসাইট

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:৪৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit