ডেস্ক নিউজ : শিশুদের সময় দেওয়া বিভিন্ন পেশায় ব্যস্ত থাকার কারণে আমরা আমাদের সন্তানদের যথেষ্ট সময় দিতে পারি না। ফলে তারা আমাদের মায়া-মমতা থেকে কিছুটা বঞ্চিত থাকে। তাই প্রতিদিনের ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে আমরা যেন তাদের সময় দিতে না ভুলি, সে জন্য সুচিন্তিত পরিকল্পনা হাতে নেওয়া। আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-ও শিশুদের অনেক সময় দিতেন।
তাদের সঙ্গে খেলা করতেন। আদর করতেন। চুমু খেতেন। স্নেহ-আদরে তাদের শিশুমন ভরিয়ে দিতেন।
সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন হারিস থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) কুরাইশ বংশের ছোট ছোট বালক আব্দুল্লাহ, উবায়দুল্লাহ ও কাসিরকে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে নবীজি বলতেন, যে সবার আগে আমার কাছে আসতে পারবে তাকে এই পুরস্কার দেব। সঙ্গে সঙ্গে শিশুরা নবীজির কাছে ছুটে আসত এবং তাঁর কোলে-পিঠে ঝাঁপিয়ে পড়ত। নবীজি সবাইকে দুহাতে জড়িয়ে ধরতেন এবং আদর করে চুমু খেতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৮৩৬)
কখনো কখনো তিনি তাঁর বড় নাতি হাসান (রা.)-কে কাঁধে চড়িয়ে বেরোতেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৭৪৯)
আদর করে ডাকা
সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদিন আমি নবী (সা. )-এর সঙ্গে বের হয়েছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি ‘বানু কায়নুকা’ বাজারে এলেন। বাজার থেকে ফিরে ফাতিমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় এসে ডাকতে লাগলেন, ছোট্ট মণি আছে কি? ছোট্ট সোনা আছে কি? ভেতরে ফাতেমা (রা.) নবীজির নাতি হাসান (রা.)-কে কিছুক্ষণ দেরি করালেন। আমার ধারণা হলো তিনি তাঁকে পুঁতির মালা সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন। তারপর তিনি দৌড়িয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বলেন, হে আল্লাহ, তুমি তাকেও (হাসানকে) মহব্বত করো এবং তাকে যে ভালোবাসবে তাকেও মহব্বত করো। (মুসলিম, হাদিস : ২৪২১)
নিজ হাতে সাজিয়ে দেওয়া
শিশুদের পরিপাটি রাখলে তা তাদের মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়। তাই মায়েদের এ বিষয়ে যত্নবান হওয়া উচিত। একবার নবীজির কাছে বেশ কিছু কাপড় এলো। তাতে একটি কালো রঙের নকশা করা ছোট কাপড় ছিল। নবীজি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, এই কাপড়টি কাকে দেওয়া যায়? কেউ কিছু বলল না। নবীজি তখন তাঁর একজন সাহাবি খালেদ বিন সাঈদ (রা.)-এর ছোট মেয়ে উম্মে খালেদকে ডাকলেন। ছোট্ট উম্মে খালেদ নবীজির কাছে এলো। নবীজি তাকে নিজ হাতে নকশাকৃত কাপড়টি পরিয়ে দিলেন এবং তার দীর্ঘায়ুর জন্য দোয়া করলেন। এরপর তাকে লক্ষ্য করে সোহাগের সঙ্গে বললেন, ‘হে উম্মে খালেদ, এটি কত সুন্দর!’ (বুখারি, হাদিস : ৫৮২৩)
শিশুদের মনোভাব বোঝা
অনেক সময় শিশুরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মন খারাপ করে থাকে। তখন তাকে সুন্দর কথা বলে প্রফুল্লতার মধ্যে রাখা উচিত। মদিনার এক ছোট্ট বালক আবু উমাইর। নবীজি (সা.) যখন তাদের ঘরে যেতেন তখন তাকে খুব আদর করতেন। আবু উমাইরের একটি ছোট্ট পাখি ছিল। বুলবুলি জাতীয় এক প্রকার ছোট্ট পাখি ‘নুগাইর’। আবু উমাইর পাখিটিকে খুব ভালোবাসত এবং তাকে নিয়ে খেলা করত। একদিন হঠাৎ পাখিটি মারা গেল। ছোট্ট শিশু আবু উমাইর পাখির শোকে কাতর হয়ে পড়ল। তখন তাকে খুশি করার জন্য নবীজি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং সুন্দর করে ছন্দ মিলিয়ে বলতে লাগলেন, ‘ইয়া আবা উমাইর মা ফাআলান নুগাইর’? ও আবু উমাইর কি করছে নুগাইর? (বুখারি, হাদিস : ৬১২৯)
কোমল আচরণ করা
আনাস (রা.) একজন বিখ্যাত সাহাবি ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই নবীজির সঙ্গে থাকতেন এবং নবীজির বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতেন। তিনি প্রায় দশ বছর নবীজির খেদমতে ছিলেন। কিন্তু নবীজি কখনো তাকে ধমকের স্বরে একটি কথাও বলেননি। (মুসলিম, হাদিস : ২৩০৯)
ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দেওয়া
অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি শিশুকে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞানে গড়ে তোলা একটি জরুরি কাজ। তাই মা-বাবার আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অনুপ্রাণিত করা এবং ছোটবেলা থেকেই শরিয়তের সব বিধানের প্রতি তাদের মনোযোগী করে গড়ে তোলা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি আপনার পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ করুন এবং নিজেও তার ওপর অবিচলিত থাকুন। ’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৩২)
কিউএনবি/আয়শা/০২ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৪:২৪