রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন

ইভিএম ভোটের সিদ্ধান্তে বাড়ছে আস্থার সংকট

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০২২
  • ১৩৬ Time View

ডেস্কনিউজঃ বিতর্কিত বক্তব্য আর প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশনের উপর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার সংকট বাড়ছে। বিরোধীদের আস্থা অর্জনের চেয়ে তাদের দূরে ঠেলে দিতেই যেন পছন্দ কমিশনের। ফলে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণের বিষয়টি আরও বেশি অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত এসেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্টনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে ‘ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারার’ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার এক দিনের মাথায় সংসদ নির্বাচনে অর্ধেক আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত জানাল ইসি।

বিরোধীরা তো বটেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেয়নি। সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, “নির্বাচন কমিশন নিয়েও আস্থার সংকট আছে, ইভিএম নিয়েও আস্থার সংকট আছে। যা রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। এমনকি আমরাও এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছি। শুধু তাই নয়, প্রয়াত প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী তো ইভিএমের কারিগরি কমিটি প্রধানের পদ থেকে থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। যে কোন ইলেকট্রনিক যন্ত্র যেটা সফটওয়্যার দিয়ে চালানো হয় সেটা দিয়ে আপনি যে ফল চান, সেটা পেতে পারেন।

ইভিএমের ব্যাপারে আস্থার সংকট দূর না করে কমিশন যখন এমন সিদ্ধান্ত নেয় তখন আস্থার সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কী উদ্দেশ্যে, কোন স্বার্থে তারা এই সিদ্ধান্ত নিল? ইভিএম যে একটা নির্ভরযোগ্য যন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এটা প্রয়োজন- এটা প্রমাণের দায়িত্ব তাদের, রাজনৈতিক দলের নয় কিংবা নাগরিকদেরও নয়। এসবের ফলে আমাদের জন্য আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হবে, যা কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না।”

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, “এই কমিশন কী কখনও বিরোধীদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছে? নির্বাচন কমিশনারেরা যখন বলেন, কে নির্বাচনে আসবে আর কে আসবে না সেটা দেখার দায়িত্ব কমিশনের নয়, তখন বুঝতে হবে কমিশন আসলে কী চাচ্ছে? তারা যে সিদ্ধান্তই নিক সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। একক কাউকে খুশি করতে নয়।”

রাজনৈতিক দলের আস্থা অর্জন কী নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়? জানতে চাইলে জনাব হোসেন বলেন, “অবশ্যই। কিন্তু সেটা তারা করছে না। তাদের এসব সিদ্ধান্তে বিরোধী দলগুলোর আস্থা কী বাড়ার কথা? তারা নিজেরাই অনাস্থার পথ বেছে নিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা যদি তারা অর্জন করতে না পারে তাহলে কীভাবে ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন করবে? বিশেষ করে আমাদের আগের দুটি কমিশন যেখানে অনাস্থার সৃষ্টি করেছে সেখানে তাদের প্রধান কাজ ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন।”

গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “ইভিএম নিয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, অনূর্ধ্ব ১৫০টি আসনে নির্বাচন করবে। প্রাপ্যতা সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করবে। ন্যূনতম একটাও হতে পারে। কমিশন দলগুলোর সুপারিশ আমলে নিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবকিছু বিচার, বিশ্লেষণ করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন ইসির কাছে ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম আছে। এ দিয়ে ৭০ থেকে ৭৫টি আসনে ভোট করা যাবে। ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে হলে আমাদের আরো ইভিএম লাগবে।”

ফলে নতুন করে ইভিএম কেনার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ইসি সচিবালয়কে নির্দেশ দিয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আরেক দফা প্রমাণ হল তারা সরকারের এপিঠ-ওপিঠ। এই কারণেই আমরা তাদের ডাকা সংলাপে যাইনি। বর্তমান সরকারকে আবারও ক্ষমতায় বসাতে যা যা আয়োজন করা দরকার সেটা তারা করছে।

দেখেন, দেশের মানুষের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে নাভিশ্বাস উঠেছে। সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়াল। বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে। সেখানে মানুষকে স্বস্তি দিতে এসব জায়গায় ভর্তুকি দেওয়ার দরকার ছিল, তা না করে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে তারা এখন ইভিএম মেশিন কিনবে। ফলে তাদের উদ্দেশ্য কী সহজেই বোঝা যায়। আমরা তো বলেছি, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। এমনকি এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেও কোন নির্বাচনে আমরা যাব না। দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এই সরকারকে হটিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে।”

অবশ্য নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে অখুশি নয় সরকারি দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ডয়চে ভেলেকে বলেন, “নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। তারা কিভাবে এই আয়োজন করবে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। যেসব রাজনৈতিক দল আছে, আমরা যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি, আমরা আমাদের দাবিগুলো নির্বাচন কমিশনের কাছে উপস্থাপন করতে পারি। এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোটের আশা করেছিল। আমরা সেই দাবিও উপস্থাপন করেছিলাম। আমরা মনে করি, ইভিএমে ভোট হলে জনগনের ভোট দেওয়ার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে কিছু কিছু রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিরোধিতা করেছে। নির্বাচন কমিশন উভয় পক্ষের মতামত শুনে একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

আমরা নির্বাচন কমিশনকে বাধ্য করতে পারি না যে, ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট দিতে হবে। আমরা একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে যে দাবি উপস্থাপন করেছি সেই দাবির ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কতটুকু সহানুভুতিশীল হবে সেটা তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। সরকারি দল হবার কারণে আমাদের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করারও সুযোগ নেই। সেটা ভালো দেখাবে না। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে যদি বড় ধরনের কোন অন্যায় না হয় তাহলে আমাদের সেটা মেনে নিতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশন যদি কোন অন্যায় সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ অবশ্যই সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাবে।”

নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পাটি- সিপিবি। সংগঠনের সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “ইভিএমে যে আমাদের আস্থা নেই, সেটা তো আমরা আগেও বলেছি। ইতিমধ্যে ইভিএমের কারিগরি বিশ্বস্ততা নিয়ে বহু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। শুধু আমাদের দেশে না, অন্য দেশেও এসব প্রশ্ন উঠেছে। সেই সব সংকটের নিরসন না করে এবং শত আপত্তিকে অগ্রাহ্য করে নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে তাদের নিরপেক্ষতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে দলীয় সরকারের অধিনে কোন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। যেটা ইতিমধ্যে প্রমাণিতও হয়েছে। ফলে সেই বিষয়ে আগে আলোচনা হওয়া দরকার।”

প্রসঙ্গত, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। আগামী নির্বাচন নিয়ে গত ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন আয়োজিত সংলাপে ২৮টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ নয়টি দল সংলাপ বর্জন করে। ৫ সেপ্টেম্বর দুটি দলের সঙ্গে সংলাপের দিন নির্ধারিত রয়েছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) সংলাপে অংশ নেওয়া ১৫টি রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করে। আওয়ামী লীগসহ আটটি দল ইভিএমের পক্ষে মতামত দিয়েছে। চারটি রাজনৈতিক দল শর্ত সাপেক্ষে ইভিএম চালুর কথা বলেছে।

কিউএনবি/বিপুল/২৪.০৮.২০২২/রাত ১১.৫৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit