ডেস্কনিউজঃ করোনা ভাইরাসের চেয়ে আরও একটি ভাইরাসকে ভয়াবহ হিসেবে, আতঙ্ক হিসেবে মনে করেন নাইজেরিয়ার জনগণ। তা হলো লাসা ভাইরাস। এই ভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর হয়। বমি হয়। ভয়াবহভাবে ডায়রিয়া হয়। প্রতি বছর পশ্চিম আফ্রিকায় এক লাখ থেকে তিন লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন।
এতে সম্প্রতি আক্রান্ত হন ভিক্টোরিয়া ওভুরেওয়েন। এ কথা শোনার পর তিনি ভেবেছিলেন, তার জীবনের ইতি এখানেই। আর বাঁচবেন না। তিনি একজন ব্যবসায়ী। আক্রান্ত হওয়ার পর তেমন হাঁটতে পারতেন না ভিক্টোরিয়া ওভুরেওয়েন।তাকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আহ-ওয়াও শহরের ফেডারেল মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। জ্বর ছিল তার। ছিল বমি এবং মারাত্মক ডায়রিয়া। আইসোলেশন ওয়ার্ডে চারদিন রাখা হয় তাকে। তারপর দেখা গেল তিনি হাসপাতালের খাটের ওপর সোজা হয়ে বসতে পারছেন। কয়েকজন রুগ্ন ব্যক্তির মধ্যে হাতেগোনা দু’চারজন কথা বলার মতো শক্তি ছিল। তার মধ্যে তিনি একজন। ভিক্টোরিয়া ওভুরেওয়েন বলেন, অসুস্থ হওয়ার আগে আমার শরীরের হাড়গুলোতে এমন অনুভূতি হয়নি কখনো। প্রচুর ওজন হারিয়েছি। তার ঢিলেঢালা রঙিন শার্টের ওপর দিয়েই দেখা যাচ্ছিল কন্ঠাস্থি।
৪৮ বছর বয়সী এই ব্যক্তি রোগ থেকে সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে তাকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ইবোলার মতোই এটা এক মারাত্মক রক্তক্ষরণজনিত রোগ। তিনি সৌভাগ্যভান। এই ভাইরাসে যারা আক্রান্ত হন, তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ খুব বেশি সুস্থ হন না। অনেক আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ শনাক্তই হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যেসব মানুষ হাসপাতাল পর্যন্ত যান তাদের মধ্যে শতকরা ১৫ ভাগের মৃত্যু ঘটে। দুই থেকে ২১ দিন সময় হলো তাদের জন্য ইনকিউবেশন পিরিয়ড। অসুস্থ হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এক্ষেত্রে ভয়াবহ লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এমন হলে তাদের জন্য খুব দেরি হয়ে যায়।
লেসা ভাইরাস থেকে জ্বরে রক্তের প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়। তাছাড়া রক্ত জমাট বাঁধার সক্ষমতার কারণে শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। কয়েক দিনের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গ ভয়াবহভাবে অকেজো হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় তার মধ্যে আছে মাথা ও মাংসপেশীতে ব্যথা, গলা ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং জ্বর। প্রাথমিকভাবে ম্যালেরিয়া থেকে এই রোগকে আলাদা করা যায় না। ওই অঞ্চলে ম্যালেরিয়া একটি সাধারণ রোগ।
আহ-ওয়াও শহরের ওই হাসপাতালের একমাত্র ল্যাবরেটরিতেই রক্তে লেসা ভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়। ফল পাওয়া যায় দুই দিন পরে। এসব কারণে লেসা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে সময় পেরিয়ে যায়। ফলে এর চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে। নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজা থেকে প্রায় ৩০০ কোলিমিটার দূরে একটি কৃষিপ্রধান মার্কেটের সেন্টার হলো আহ-ওয়াও। এটাকে লাসা সংক্রমণের এপিসেন্টার হিসেবে মনে করা হয়। সেখানে এ বছরের শুরুর দিকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এতে কমপক্ষে ১৬০ জন মারা গেছেন। মার্চে এর সংক্রমণ ছিল সর্বোচ্চ। তখন ওই হাসপাতালের আইসোলেশনের ৩৮টি বেড পর্যাপ্ত ছিল না। ফলে সন্দেহজনক আক্রান্তদের জন্য আরও ১০টি বেড যুক্ত করা হয়েছিল। নাইজেরিয়ার এই অঞ্চলের মানুষ লাসা ভাইরাসকে করোনা ভাইরাসের চেয়ে বেশি ভয় পান।
এর কারণও আছে। ওন্দো রাজ্যে অবস্থিত আহ-ওয়াও শহর। ২০২০ সাল থেকে সেখানে লাসা ভাইরাসে কমপক্ষে ১৭১ জন মানুষ মারা যাওয়ার রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময়ে করোনা ভাইরাসে সেখানে মারা গেছেন মাত্র ৮৫ জন। এ তথ্য ওই হাসপাতালের ইনফেকশন কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্স সেন্টারের।
কিউএনবি/বিপুল/ ২১.০৮.২০২২/ সন্ধ্যা ৭.২৬