এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় সার ডিলারদের বিরুদ্ধে কৃত্রিম সার সংকট তৈরির অভিযোগ উঠেছে। বেশিদামে সার কিনতে বেকায়দায় পড়েছেন কৃষকরা। আমন মৌসুমে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সাব-ডিলারদের অভিযোগ বিসিআইসি সার ডিলাররা তাদের সার দিচ্ছেন না। ফলে বাজারে ইউরিয়া এবং এমওপি সারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। একইসাথে টিএসপি ও ডিএপি সারও কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের অভিযোগ, সরকার সম্প্রতি ইউরিয়া সারের দাম বাড়িয়ে খুচরা প্রতি কেজি ২২ টাকা করেছে। অথচ বিক্রেতাদের কাছে কিনতে গেলে তারা ২৫ টাকার নিচে সার দিচ্ছেন না। একইভাবে এমওপি (পটাশ) সার বাজারেই পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তা ১৫ টাকা কেজি বিক্রির কথা থাকলেও তারা ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে আমাদের।
সাব-ডিলারদের অভিযোগ উপজেলায় মোট ১৬ জন বিসিআইসি সার ডিলার রয়েছেন। এদের বেশিরভাগেরই এলাকায় খুচরা বিক্রির দোকান নেই। ফলে তারা অন্য কয়েকজন ডিলারের কাছে সারের কাগজপত্র (জিও) বিক্রি করে দেন। আর সেই কয়েকজন এই সার উপজেলার নিবন্ধনধারী সাব-ডিলারদের কাছে বিক্রি না করে উপজেলার বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে পুরো উপজেলাজুড়ে ইউরিয়া এবং এমওপি সারের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ উপজেলায় কয়েকজন ডিলার সরাসরি এই কৃত্রিম সার সংকট তৈরি করছেন। খুচরা বিক্রেতা সাবডিলাররা বলছেন, বিসিআইসি সার ডিলাররা তাদের বরাদ্দ দেয়া টিএসপি সার চট্রগ্রাম এবং নওয়াপাড়া থেকে নিজেদের গুদামেই না এনে কাগজপত্র (জিও) বিক্রি করে দেন। পরে মিশর ও তিউনেশিয়ান টিএসপি এনে বেশি দামে কিনতে কৃষকদের বাধ্য করেন। কয়েকজন কৃষক বলেন, ইউরিয়া সার২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরেও কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এছাড়া ২২ টাকা কেজির দেশি টিএসপি ২৯ থেকে ৩২ টাকা, মিশর ও তিউনেশিয়ান টিএসপি ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা পর্যন্ত কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
চৌগাছা পৌরসভার তানভীর এন্টার প্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাব-ডিলার আমিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভায় দুইজন বিসিআইসি সার ডিলার রয়েছেন। তাদের একজন উপজেলার অন্য ৫ থেকে ৬ জন ডিলারের সার কিনে নিয়ে নিজে গুদামজাত করে রেখেছেন। নিজের বাড়িসহ বিভিন্ন গুদামে তার অতিরিক্ত সার থাকলেও তিনি সাব-ডিলারদের কাছে সার বিক্রি করছেন না। তিনি বলেন, আমরা পৌরসভা এলাকায় ৯ জন সাব-ডিলার, খুচরা বিক্রেতা রয়েছি। তাদের কাছে সার বিক্রি না করে এই দুই ডিলার কালোবাজারে যারা ডিলার নয় তাদের দিয়ে বেশী দামে সার বিক্রি করছেন। ফলে বাদ্য হয়ে কৃষকদের বেশীদামে সার কিনতে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গত মঙ্গলবার ১৬ আগষ্ট আমার সামনের একটি দোকানে বেশি দামে ১০০ বস্তা ইউরিয়া সার বিক্রি করেন পৌরসভার এক সার ডিলার। আমি তার কাছে মাত্র ২০ বস্তা সার কিনতে চাইলেও তিনি আমাকে সার দেননি। বলেন, সার নেই। দিতে পারবো না। পরে অনেক ধরাধরি করে এবং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানানোর পর ওই ডিলার আমাকে মাত্র ১০ বস্তা ইউরিয়া দেন। তার প্রশ্ন কৃষক কেন ২৮ টাকা কেজি ইউরিয়া কিনবেন ? উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কি করেন ? তিনি কি ডিলারদের নিকট থেকে কোনপ্রকারসুবিধা নিয়ে থাকেন ?। তিনি বলেন, আমি সাব-ডিলার হওয়া স্বত্বেও আমাকে সার না দিয়ে ওই ডিলার শিমুল নামে এক দোকানিকে দিয়ে বেশীদামে সার বিক্রি করাচ্ছেন (যিনি সাব-ডিলার নন)। এ বিষয়টি আমি মোবাইল ফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।প্রায় একই অভিযোগ করে পৌরসভার অন্য দুই খুচরা বিক্রেতা (সাব-ডিলার) দিপু এন্টার প্রাইজের মালিক দিপু হোসেন এবং টিপু এন্টার প্রাইজের মালিক টিপু বলেন, ডিলাররা আমাদের সার দিচ্ছেন না। কৃষি কর্মকর্তা আমাদের সার পাবার ব্যবস্থা না করে উল্টো আমাদেরই জরিমানা করছেন। তাদের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তা অবৈধ সুবিধা নিয়ে ডিলারদের পক্ষাবলম্বন করছেন। যে সব ছোট ছোট দোকান থেকে তিনি সুবিধা পান না সেসব দোকানেই ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়ে যেয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত করে জরিমানা করছেন।
এ বিষয়ে পৌরসভার বিসিআইসি সার ডিলার আব্দুল হালিম চঞ্চল বলেন, তিনি আমার কাছে সার চেয়ে ছিলেন। আমি তাকে সার দিয়েছি। তিনি সার নিলে আরো দেবো। তিনি বলেন সরকারি রেটেই সার দিয়েছি বেশী দাম নেওয়ার প্রশ্নই আসেনা।অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমরা সারের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছি। ইতোমধ্যেই অনিয়মের অভিযোগে কিছু দোকানে জরিমানা করা হয়েছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, মৌখিকভাবে এমন অভিযোগ পেয়েছি। এরআগেই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে জরিমানাও করা হয়েছে। ডিলাররা সাব-ডিলারদের সার দিচ্ছেন না এমন অভিযোগ একজন সাব-ডিলার মোবাইলে জানিয়েছেন, সার না পাওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিউএনবি/অনিমা/১৭ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:৪১