শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন

জ্বালানি ও খাদ্যে ভর্তুকির তথ্য চায় আইএমএফ

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২
  • ১৭৫ Time View

ডেস্ক নিউজ : বাংলাদেশের ‘জ্বালানি তেল ও খাদ্যে’ বছরে কত টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে এটি জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। সম্প্রতি আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে এরই অংশ হিসাবে এসব তথ্য চাওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের ভর্তুকির তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে। এসব তথ্য চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক এ সংস্থাকে অবহিত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি সংস্কার চেয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি সার্বিকভাবে ভর্তুকি কমাতে সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। আগামীতে যদি এ সংস্থা বাংলাদেশকে ঋণ দেয় সেখানেও এসব শর্ত জুড়ে দিতে পারে। তবে এমনিতে এসব শর্ত আগ থেকে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন ছিল। জ্বালানি তেলের মূল্য একটি ফর্মুলায় এনে ঘোষণা করা দরকার। ফলে আইএমএফের এই শর্ত পূরণে বাংলাদেশের সমস্যা হবে না। যদিও ভর্তুকির প্রসঙ্গে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার কৃষিতে ভর্তুকি হ্রাস করবে না। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। তবে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি সংস্কার করা হলে ভর্তুকি কমে যাবে। ভর্তুকি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাজেটে প্রতিবছরই খাদ্য ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকির একটি সম্ভাব্য বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু বছর শেষে বাস্তবে কত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সে হিসাবে ভিন্নতা থাকে। চূড়ান্ত ব্যয়ের হিসাবে বরাদ্দের তুলনায় কম বা বেশি হতে পারে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে চিঠি দিয়ে খাদ্য ও জ্বালানি তেলে ভর্তুকির প্রকৃত অঙ্ক জানতে চাওয়া হয়েছে। অনেক মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য চলে আসছে। পুরোপুরি তথ্য পাওয়ার পর এটি অফিসিয়ালি আইএমএফকে জানানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) খাদ্য খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। গত বছরে ভর্তুকি দেওয়া হয় ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এর আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। করোনার কারণে গরিব মানুষকে কম দামে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে সরকার। এ জন্য খাদ্য খাতে এ ভর্তুকির অঙ্ক গত কয়েক বছরের তুলনায় বেড়েছে।

এদিকে বিগত কয়েক বছর ধরে জ্বালানি তেলে সরকার কোনো ভর্তুকি দিচ্ছে না। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয় ৬০০ কোটি টাকা। তবে ২০২১ সালে করোনা পরবর্তী জ্বালানি তেলের মূল্য বিশ্ববাজারে অনেক বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে এ মূল্য প্রতি ব্যারেলে ১১৩ মার্কিন ডলারে উঠে। যদিও এটি কমে বর্তমান ৯৮ ডলারে এসেছে। অস্বাভাবিক এ মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকার এক দফা জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করেছে। এরপরও ওই বছর প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি লেগেছে জ্বালানি তেলে। চলতি অর্থবছরও এই ভর্তুকির প্রয়োজন হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। সূত্র আরও জানায়, আইএমএফ ভর্তুকির পাশাপাশি দেশে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ পদ্ধতি সংস্কারের তাগিদ দিয়েছে। সংস্থাটি মনে করে এই সংস্কারের মধ্য দিয়ে জ্বালানি তেলে বাংলাদেশের ভর্তুকি দেওয়ার পরিমাণও কমবে। বর্তমান বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে বা কমলে খুব বেশি সমন্বয় করা হয় না। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০ বছরে দেশে ১৭ বার ডিজেলের দামে সমন্বয় করা হয়। এরমধ্যে ১৩ বার বেড়েছে এবং কমেছে মাত্র ৪ বার। সর্বশেষ বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য ৮৫ ডলারে উঠলে সরকার কেরোসিনের মূল্য লিটারে ১৩ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী, আমদানিকারক দেশগুলো নিজস্ব বাজারে তেলের সরবরাহ মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। খুচরা পর্যায়ে তেলের দাম নির্ধারণে সারা বিশ্বের দেশগুলো প্রধানত তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। তবে এসব পদ্ধতির মধ্যে অধিকাংশ দেশই মার্কেট ডিটারমাইন্ড অর্থাৎ বাজারদরের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় পদ্ধতি অনুসরণ করছে। কিছু দেশ আছে প্রাইস সিলিং বা সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেওয়ার পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকে। আর সবচেয়ে কঠোর পদ্ধতি হলো ফিক্সড প্রাইস বা একদর পদ্ধতি। ফিক্সড প্রাইস হচ্ছে সরকার নির্ধারিত থাকে। তবে এটি সর্বোচ্চ মূল্যের ওপরে উঠতে পারে না। সেই সময়টাতে সরকার ভর্তুকি দেয়।

জানা গেছে, প্রতিবেশী ভারতে জ্বালানি তেলের দাম প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় বাজারমূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে। ডায়নামিক ডেইলি প্রাইসিং মেথড নামে এ পদ্ধতি ২০১৭ সাল থেকে চালু হয়েছে সেখানে। বাজারদর অনুযায়ী এ পদ্ধতিতে প্রতিদিনই দাম সমন্বয়ের সুযোগ আছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আফগানিস্তানেও বাজারমূল্যের সঙ্গে তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করা হয়। বাংলাদেশে তেলের দাম নির্ধারণ হয় সরকারের নির্বাহী আদেশে ফিক্সড প্রাইস মেথডে। এ পদ্ধতি অনুসরণের ফলে বিশ্ববাজারে আচমকা দাম বেড়ে গেলেও ভর্তুকি দিতে হয় সরকারকে। ফলে যে কোনো সময় এক্ষেত্রে সরকারের ভর্তুকি বেড়ে যায়। আবার তেলের দাম অনেক কমে গেলেও সবক্ষেত্রে কমে না। ফলে তেলের মূল্য কম থাকার যে সুবিধা-সেটি থেকে ভোক্তারা বঞ্চিত হন। ফলে বাংলাদেশের তেলের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতে সংস্কার চাইছে আইএমএফ।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৩১ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১১:০৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit