ডেস্ক নিউজ : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা সদর থেকে কাটাখালী জেলেপল্লির দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। এই দুই কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দালালের হাত ধরে উপজেলা সদরে মাছ এলে তার দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। রিকশায় সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে উপজেলা সদরে এনে দ্বিগুণ দামে মাছ বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ী, দালাল-আড়তদাররা। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ শিকার করা জেলেরা পানির দামে মাছ বিক্রি করেন তিন শ্রেণির পাইকারদের কাছে।
এরপর আবার আড়তদারদের দাদনের কাছে জিম্মি জেলেদের ভাগ্য বন্দি রয়ে যায় ওই দাদনের খাতায়। দীর্ঘ বছর জেলে পেশায় থেকেও ভাগ্য বদল দূরের কথা, ঋণের বোঝা নিয়ে মারা যেতে হয় জেলেদের। সন্তানরা বাবার পেশার হাল ধরলে তারাও দাদনের ঋণের খাতায় বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জেলেরা। অন্যদিকে, বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্রতম এ উপজেলার মানুষের কাছে মাছ-ভাত দিন দিন যেন বিলাসিতায় পরিণত হচ্ছে।
শনিবার ও রোববার সকালে দশমিনা সদরের মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, মোটামুটি সামান্য একটু বড় সাইজের চিংড়ি ৬শ, বড় ইলিশ ১৪শ, মাঝারি ৮৫০, ছোট ৭৫০, পোয়া মাছ ৭শ, মাঝারি সাড়ে ৫শ, তপুশি (ছুড়্ড়া) ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে চাষ করা পাঙ্গাস দেড়শ আর তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২শ টাকা দরে। শনিবার ও রোববার দিন দুপুরে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দশমিনা সদরের কাটাখালী জেলেপল্লিতে গিয়ে কথা হয় মো. আব্দুর রাজ্জাক খাঁ, জয়নাল সিকদার ও মো. মিজানুর রহমান হাওলাদারের সঙ্গে।
তারা যুগান্তরকে জানান, মোটামুটি সামান্য একটু বড় সাইজের চিংড়ি ৪শ, বড় ইলিশ ৯শ, মাঝারি ৫শ, ছোট ৪শ, পোয়া ৪শ, মাঝারি আড়াইশ, তপুশি (ছুড়্ড়া) ৩শ টাকায় দালাল, খুচরা বিক্রেতা আর আড়তদারদের কাছে বিক্রি করছেন তারা। অন্যদিকে চাষ করা পাঙ্গাস আর তেলাপিয়া ১২০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।
তারা আরও জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরে আমরা ন্যায্য দাম পাই না। অথচ দালালরা জেলেদের থেকে মাছ কিনে তা প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন। এর মধ্যে আড়তদাররা প্রতি কেজি মাছ ওজনের চেয়ে একশ গ্রাম বেশি নিয়ে এক কেজির দাম দিচ্ছে। অন্যদিকে, বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দরিদ্রতম এ উপজেলার মানুষের কাছে মাছ ভাত এখন যেন বিলাসিতা। দেশি চাষের দুই-তিন পদের চাষের মাছ ছাড়া বাকি অধিকাংশ মাছ মাছের দাম আকাশছোঁয়া। উপকূলের মাছের বাজার চড়া হওয়ায় হতাশ এখানের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
মো. আকবর নামে এক ক্রেতার দাবি, বাজার তদারকি আর দশমিনা মাছ বাজারে গড়ে ওঠা একাধিক সিন্ডিকেটের কারণে মাছের বাজার চড়া। সবচেয়ে দারিদ্র্যতম উপজেলায় মাছের বাজার এমন চড়া হওয়ায় গরিবের পাঙ্গাস আর তেলাপিয়াই একমাত্র ভরসা।
জেলেদের সরাসরি বাজারে মাছ বিক্রির সুযোগ না থাকায় হাত বদলেই মাছের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। জেলেরা ঋণে বন্দি থাকছে আর দালালরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
রফিক নামে এক জেলে জানান, উপজেলার ১০ হাজারের অধিক জেলেদের জন্য সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা, কম মুনাফায় ঋণ না থাকায় জেলেরা দাদনের খাতায় বন্দি হচ্ছে। দীর্ঘ বছর জেলে পেশায় থেকেও ভাগ্য বদল হয় না। আর মাছ বাজারে দালাল সিন্ডিকেট ও একাধিক চক্রের কারণে বাজারে সরাসরি জেলেদের মাছ বিক্রির সুযোগ না থাকায় জেলেদের ভাগ্য বদল হয় না এবং দরিদ্র এ উপজেলার মানুষকে চড়া দামে মাছ কিনতে হয়। দশমিনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, জেলেদের টাকা না থাকার কারণে তারা দাদন নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
দশমিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরকে নিয়ে জেলেদের জন্য উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হবে। জেলেদের সরাসরি বাজারে মাছ বিক্রির জন্য উৎসাহিত করা হবে। ইতোমধ্যে মাছের টলঘর দখলমুক্ত করা হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/১৭ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/রাত ৮:০৮