সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৬ অপরাহ্ন

কোরবানির যে বিষয়গুলো জানা খুব জরুরি

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০২২
  • ১৬৪ Time View

ডেস্ক নিউজ : মনের কোরবানি হল সবচেয়ে কোরবানি। ঈদুল আযহার সময় যে কোরবানি, সেখানে পশু জবাই করার মাধ্যমে মালের কোরবানি হয়, সেই সঙ্গে মনেরও কোরবানি হয়। এই কোরবানিই হল সবচেয়ে বড় কোরবানি। কারণ, মানুষের পক্ষে জান-মালের কোরবানি দেওয়া সহজ কিন্তু মনের কোরবানি দেয়া কঠিন। মানুষ নিজের সম্পদ ব্যয় করতে সহজে রাজি হতে পারে কিন্তু নিজের মনের ধ্যান-ধারণা, নিজের মনের বুঝ, নিজের মনের যুক্তি সহজে ছাড়তে প্রস্তুত হয় না। 

তাই সম্পূর্ণ আল্লাহকে রাজি-খুশি করার নিয়তেই কোরবানি করতে হবে। প্রচার কিংবা লোক দেখানোর চেতনাকে বাদ দিতে হবে। মনের সব গলত-খেয়াল ত্যাগ না করলে পশু কোরবানির আমলে এখলাস থাকবে না। আর কোন আমলে এখলাস না থাকলে সেই আমলের কোন মূল্য নেই। 

কোরবানির ওয়াজিব পালন করতে গিয়ে অনেকেই ভুল করে ফেলেন। তাতে কোরবানি সহিহ শুদ্ধ হয় না। তাই কোরবানির জরুরি বিষয়গুলো জেনে নেওয়া জরুরি। এ সম্পর্কে দেশের বিশিষ্ট ও লেখক মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন বলেন-

১০ জিলহজের ফজর থেকে ১২ জিলহজের সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থাৎ কোরবানির দিনগুলোতে যার নিকট সদকায়ে ফিতর/ফিতরা ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থ/সম্পদ থাকে তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। তবে মুসাফিরের উপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়। ওয়াজিব না হলেও নফল কোরবানি করলে কোরবানির ছওয়াব পাওয়া যাবে।

কোরবানি শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব। সন্তানাদি, মাতাপিতা ও স্বামীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় না, তবে তাদের পক্ষ থেকে করলে তা নফল কোরবানি হিসাবে গণ্য হবে। যার উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, সে কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করলে সেই পশু কোরবানি করা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়। কোন মাকসুদের জন্য কোরবানির মান্নাত করলে সেই মাকসুদ পূর্ণ হলে তার উপর (গরীব হোক বা ধনী) কোরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

যার উপর কোরবানি ওয়াজিব, সে কোরবানি না করলে কোরবানির দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটা বকরীর মূল্য সদকা করা ওয়াজিব।

কোরবানির ক্ষেত্রে বকরী, খাসী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা কমপক্ষে পূর্ণ এক বছর বয়সের হতে হবে। বয়স যদি একবছর থেকে কিছু কমও হয়, কিন্তু এরূপ মোটাতাজা যে, একবছর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে তার কোরবানি দোরস্ত আছে, তবে অন্তত ছয় মাস বয়স হতে হবে। তবে বকরী কোন অবস্থায় এক বছরের কম বয়সের হতে পারবে না। গরু ও মহিষের বয়স কমপক্ষে দুই বছর হতে হবে। উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। 

কোরবানির পশু ভাল এবং হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। যে প্রাণী লেংড়া অর্থাৎ যা তিন পায়ে চলতে পারে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও তার ওপর ভর করতে পারে না এরকম পশু দ্বারা কোরবানি জায়েয নয়। যে পশুর একটিও দাঁত নেই, তা দ্বারা কোরবানি দুরস্ত নয়।

যে পশুর কান জন্ম থেকেই নেই, তা দ্বারা কোরবানি দোরস্ত নয়। তবে কান ছোট হলে অসুবিধা নেই। যে পশুর শিং মূল থেকে ভেঙ্গে যায় তা দ্বারা কোরবানি দোরস্ত নয়। তবে শিং ওঠেনি বা কিছু পরিমাণ ভেঙ্গে গিয়েছে এরূপ পশুর কোরবানি দোরস্ত আছে। যে পশুর উভয় চোখ অন্ধ বা একটি চোখ পূর্ণ অন্ধ বা একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশি নষ্ট, তা দ্বারা কোরবানি দোরস্ত নয়। কোন পশুর একটি কান বা লেজের এক-তৃতীয়াংশ কিংবা তারচেয়ে বেশি কেটে গেছে তা দ্বারা কোরবানি দোরস্ত নয়।

অতিশয় কৃশকায় ও দুর্বল পশু যার এতটুকু শক্তি নেই যে, জবেহের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে, তা দ্বারা কোরবানি দোরস্ত নয়। ভাল পশু ক্রয় করার পর এমন দোষ-ত্রুটি দেখা দিয়েছে যার কারণে কোরবানি দোরস্ত হয় না। এরূপ হলে ওই জন্তুটি রেখে আর একটি ক্রয় করে কোরবানি করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে সেটিই কোরবানি দিতে পারবে।

গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েয। যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তবে সে বাচ্চাও জবেহ করে দিবে। তবে প্রসবের নিকটবর্তী হলে সেরূপ গর্ভবতী পশু কোরবানি দেয়া মাকরূহ। তবে বন্ধা পশু কোরবানি করা জায়েয।

বকরী, খাসী, পাঠা, ভেড়া-ভেড়ী ও দুম্বায় একজনের বেশি শরীক হয়ে কোরবানি করা যায় না। এগুলোর একটা একজনের পক্ষ থেকেই কোরবানি হতে পারে। এছাড়া একটা গরু, মহিষ ও উটে সর্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারে। তবে সাতজন হওয়া জরুরি নয়, দু’জন বা তিনজন বা চারজন বা পাঁচজন বা ছয়জন কোরবানি দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে কারও অংশ সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হতে পারবে না।

মৃতের নামেও কোরবানি হতে পারে। এমন কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর বিবিগণ ও বুযুর্গদের নামেও কোরবানি হতে পারে।

যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি করে না বরং গোশত খাওয়া বা লোক দেখানো ইত্যাদি নিয়তে কোরবানি করে, তাকে অংশীদার বানিয়ে কোন পশু কোরবানি করলে সকল অংশীদারের কোরবানিই নষ্ট হয়ে যায়। তাই শরীক নির্বাচনের সময় খুবই সতর্ক থাকা দরকার। একজনের কারণে যেন সকলের কোরবানি নষ্ট হয়ে না যায় সে দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।

এছাড়া যার সমস্ত উপার্জন বা অধিকাংশ উপার্জন হারাম, তাকে শরীক করে কোরবানি করলে অন্যান্য সকল শরীকের কোরবানি অশুদ্ধ হয়ে যাবে। এই কারণটিও যাছাই-বাছাই করে কোরবানিতে শরিক করা উচিত।

কিউএনবি/অনিমা/২৮.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:১৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit