শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন

পদ্মা সেতুকে ঘিরে শরীয়তপুরের কৃষিখাতে আসবে ব্যাপক সফলতা

খোরশেদ আলম বাবুল, শরীয়তপুর প্রতিনিধি
  • Update Time : সোমবার, ২০ জুন, ২০২২
  • ১২২ Time View

খোরশেদ আলম বাবুল, শরীয়তপুর প্রতিনিধি : পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থায়ই নয়, এই সেতু উন্নয়নেরও প্রবেশ দ্বার। সময় বাচিয়ে সেই সাথে শিল্প, সংস্কৃতি, কৃষিখাত, পর্যটন শিল্প সহ নানা ব্যবসায় প্রসার ঘটিয়ে অর্থনীতিকে করবে সমৃদ্ধ। শুধু শরীয়তপুর জেলা নয় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কোটি মানুষের জীবন যাত্রার মান নিয়ে যাবে উচ্চতায়। বিশেষ করে শরীয়তপুরের কৃষি খাতে আসবে ব্যাপক অর্থনৈতিলক সফলতা। দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শরীয়তপুরের কৃষি খাত।পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সংবাদে কৃষকদের মাঝে উদ্দিপনা দেখা দিয়েছে নতুন নতুন ফসল উৎপাদনের। কৃষি বিভাগও ফসল উৎপাদনে কৃষকদের পাশে থেকে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নির্দেশনা প্রদান করছেন। কৃষিবিভাগ পদ্মাসেতুকে ঘিরে সম্ভাবনাময় ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষণ দিয়েছে জাজিরা উপজেলায়। সেতু পারাপারে দ্রুত সময়ে তাদের উৎপাদিত পন্য রাজধানীতে বিক্রি করে লাভবানের প্রত্যাশায় তারা চাষাবাদে গুরুত্ব দিয়েছেন।

ইতোপূর্বে জাজিরার মিরাসা চাষি বাজার নামে একটি পাইকারী শাক সব্জির বাজার গড়ে ওঠলেও নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারী ব্যবসায়ীরা শরীয়তপুরে কম আসতো। ফলে শরীয়তপুরে বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত আলু, টমেটো, কাচামরিচ, শশা করলা ও বেগুনসহ নানা ধরনের ফসল উৎপাদনকারী চাষিরা ন্যাজ্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতো।পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর এই এলাকার প্রান্তিক চাষীদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল পাওয়া নিয়ে কোন চিন্তার কারন নেই বলে মনে করেন এই এলাকার কৃষক ও সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞমহল। এ ছাড়াও পদ্মা সেতুকে ঘিরে ইতিমধ্যে সরকারী-বেসরকারী ভাবে উদ্যোগ নেয়া বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। দ্রুত গতিতে চলছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লির কাজও। ফলে আর্থসামাজিক অবস্থা দ্রুত বদলে যাবে শরীয়তপুরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের। এখন অপেক্ষা শুধু সেই মাহেন্দ্র ক্ষণের।

শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা জাকারিয়া মাসুদ বলেন, আমাদের উৎপাদিত পন্য শীতকালিন সবজি ও মসলাসহ অন্যান্য পন্য শরীয়তপুরের বাহিরে নেয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য ছিল তাই আমরা ন্যাজ্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতাম। ফলে কৃষি সেক্টর ছিল অনেকটাই অলাভজনক। পদ্মা সেতু চালু হলে কেটে যাবে আমাদের যোগাযোগের সংকট। বাড়বে এই খাতে বিনিয়োগ। এগিয়ে যাবে শরীয়তপুরের কৃষি খাত।শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একে এম ইসমাইল হক বলেন, কৃষি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে। যা শুধু এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে না ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনমানের উন্নয়ন হবে।কৃষি বিজ্ঞানী কবি মফিজুল ইসলাম বলেন, কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের উন্নয়নের পূর্বস্বর্ত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর পদ্মা সেতু সেই যোগাযোগের ব্যবস্থার পালের দিবে নতুন হাওয়া। যা শরীয়তপুরের কৃষিকে অনেক দুর নিয়ে যাবে। এই অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম রাসুল বলেন, জাজিরাসহ শরীয়তপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে বিনা চাষে রসুন পিয়াজ এবং পাটের পাশাপাশি প্রচুর পরিমান মসলা জাতীয় ফসল ও সবজি উৎপাদন হয়। যা পদ্মাসেতু দিয়ে কৃষকরা ঢাকার বাজারে বিক্রি করে বেশি লাভবান হবে। বিশেষ করে সড়ক পথে ঢাকার বাজার কাছে হওয়ায় জাজিরায় আমরা ফুল চাষকে সম্ভাবনাময় ফসল মনে করছি। ইতোমধ্যে আমরা জাজিরায় কৃষকদের ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষন দিয়েছি। খুব সকালেই এই এলাকার ফুল চাষিরা ঢাকার বাজারে আকর্ষনীয় দামে ফুল বিক্রি করতে পারবে। ফলে কৃষিখাতে শরীয়তপুরে ব্যাপক সফলতার সম্বাবনা রয়েছে বলে আমরা মনে করি।শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে শরীয়তপুরে অমিত সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অনেকগুলো বৃহৎ শিল্প এখানে আসার অপেক্ষায় আছে। শরীয়তপুর কৃষি প্রধান অঞ্চল হওয়ায় ইতিমধ্যে কৃষি সেক্টরে অনেকে বিনিয়োগ করতে আসতে শুরু করেছে। আমরা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বিভিন্ন কৃষি পন্যকে উৎসাহিত করছি। যেমন জাজিরা কালোজিরার মধু ব্র্যান্ডিং করা ছাড়াও মশলা জাতীয় ফসল সম্প্রসারণ নিয়েও আমরা কাজ করছি। আশা করি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শরীয়তপুর জেলা বাংলাদেশের উন্নত জনপদ হিসেবে বিবেচিত হবে।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে শরীয়তপুর হবে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির দশটি জেলার মধ্যে একটি। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছেন। এখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, পরিবহন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা হবে। শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি সহ সামগ্রিক ব্যবসা বানিজ্যকে ঘিরে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে শরীয়তপুরে। সব মিলে শরীয়তপুর হবে উন্নত, আধুনিক সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর জেলা।

 

 

কিউএনবি/অনিমা/২০.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit