এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছার আড়পাড়া-আড়কান্দি দুই কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে স্থানীয়রা মঙ্গলবার (১৪ জুন) কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য আজাদ রহমানের নেতৃত্বে জনতা কাজ বন্ধ করে দেয়। তাদের দাবি সড়কে ভালো মানের ইট দিয়ে কাজ করতে হবে।
জানা যায়, এক কোটি ৯২ লাখ টাকায় দুই কিলোমিটার সড়কটি উন্নয়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর এলজিইডি। চৌগাছার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেবা ট্রেডার্সের প্রোপাইটার রফিকুল ইসলাম মুকুল ও আড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম যৌথভাবে কাজটি করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ বারবার বলা সত্ত্বেও খুবই নিুমানের ইটদিয়ে রাস্তাটি করা হচ্ছে। রাস্তার ম্যাকাডমের ফাইনাল লেয়ার করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ক্লাস ইটের বদলে ভাটার কাঁদা, ময়লা, ধুলাবালিযুক্ত ব্যাটস (ভাঙ্গা ইট) ও তিন নম্বর ইট (স্থানীয় ভাষায় আমাইট) নিয়ে আসাহয়েছে। এবং সেগুলো থেকে খোয়া ভাঙার কাজ চলছে। অথচ উপজেলা প্রকৌশল অফিসের কোনো প্রতিনিধি সেখানে নেই।
নিয়মানুযায়ী কাজ করার সময় উপজেলা প্রকৌশল অফিসে ইনফর্ম করে তাদের প্রতিনিধি নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। সেটি না করেই খারাপ ইট দিয়ে এই কাজ করতে থাকেন ঠিকাদার। খারাপ ইট নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সোমবার ওই ইউনিয়নের বাসীন্দা আজাদ রহমান খান নামে এক জন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে খারাপ ইট দিয়ে কাজ না করার জন্য বলেন। তবুও ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম মঙ্গলবার সকালে লেবার দিয়ে ওই নিন্মমানের ইট দিয়ে খোয়া তৈরি শুরু করেন। তখন স্থানীয়রা বাধা দেন।
এ সময় ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম কাজ করার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে একপ্রকার অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ সময় ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম স্থানীয়দের বলেন, আজাদ রহমান তার কাছে চাদা চেয়েছেন। তবে এর কিছুক্ষণ পরেই আজাদ রহমান ঘটনাস্থলে পৌছে শহিদুল ইসলামের মুখোমুখি হন। তিনি স্থানীয় জনসাধারণের সম্মুখে ঠিকাদারকে বলেন, আমি কি আপনার কাছে চাঁদা চেয়েছি? তখন ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম কথা ঘুরাতে চেষ্টা করেন। এ সময় আজাদ রহমান বলেন, আপনি আগে জবাব দেন আমি আপনার কাছে চাঁদা চেয়েছি কিনা? তখন ঠিকাদার জবাব দেন আপনি চাঁদা চাননি।এ পর্যায়ে ঠিকাদার বোঝাতে চেষ্টা করেন রাস্তাটির কাজ করলে আমার ২৫ লাখ টাকা ক্ষতি হবে। তবুও আমি এলাকার স্বার্থে কাজটা করছি।
এ সময় ঠিকাদারকে বলেন,আপনার ক্ষতি হলে কাজ সারেন্ডার করে দেবেন। আপনি ক্ষতি করে কাজ করবেন কেনো এ প্রশ্নে তিনি আর কোনো জবাব দেননি। অফিস এমন ইট আনার অনুমতি দেয়নি। অফিসের কোনো প্রতিনিধি কর্মস্থলে আছে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অফিসের কেউ কর্মস্থলে নেই। ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায় খুবই নিন্মমানের ভাটার ময়লাসহ ভাঙা ইট নিয়ে খোয়া ভাঙ্গা হচ্ছে এবং ময়লা ইটের গুড়া নিয়ে রাখা হয়েছে। ঠিকাদার স্থানীয়দের বুঝাতে চাচ্ছেন কাজটিতে তার ২৫ লাখ টাকা ক্ষতি হবে তারপরও তিনি এলাকার স্বার্থে কাজ করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ , উপজেলা প্রকৌশল অফিসের লোকজন সেখানে যান না। এই সুযোগে ঠিকাদার অফিসের দোহাইসহ নানা অযুহাত দেখিয়ে নিন্মমানের ইট দিয়ে কাজ করছেন। তারা বারবার বলার পরও ভালো মানের ইট নিয়ে কাজ না করায় মঙ্গলবার সকালে তারা ঠিকাদারকে আটকে রেখে কাজটি বন্ধ করে দেন।
এদিকে চৌগাছা প্রকৌশল অফিসের অধীনে সম্প্রতিককালে কাজ চলছে এমন বেশ কয়েকটি রাস্তায় নিন্মমানের ইট দিয়ে উন্নয়ন কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বারবার বললেও তারা নিন্মমানের ইট দিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। অফিসের কিছু অসাধু উপ-সহকারী প্রকৌশলী এবং কার্যসহকারীর সহায়তায় ঠিকাদাররা এসব কাজ করে চলেছেন।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার চৌগাছা সদর ইউনিয়নের দিঘলসিংহা সড়ক, স্বরুপদাহ ইউনিয়নের তিলকপুর থেকে ইন্দ্রপুর সড়ক, পাতিবিলা ইউনিয়নের পাতিবিলা মেইন রোড থেকে নিয়ামতপুর গ্রামের সড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়কে নিন্মমানের ইট ব্যবহৃত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আড়পাড়া-আড়কান্দি সাইটের কার্য-সহকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, তারা কাজের সাইটে যান। তিনি আরো বলেন, ওই ঠিকাদাররা কথা শুনতে চাচ্ছেন না। বারবার তাদের ভালো মানের ইট কাজের সাইটে নিতে বলা হলেও তারা নিচ্ছেন না। এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, কাজের সাইটে নিন্মমানের ইট নিয়ে গেলে তা এ্যালাউ করা হবে না। সঠিক মানের ইট দিয়েই রাস্তার কাজ করতে হবে। আমি উপজেল প্রকৌশলীকে সাইটে গিয়ে ব্যবস্থানেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
কিউএনবি/আয়শা/১৬.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:৫০