স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর) : যশোরের মনিরামপুরে আসন্ন মাহে রমজান উপলক্ষে খেদাপাড়া ও কুলটিয়া ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ কার্ডধারীদের না জানিয়ে তালিকার বাইরে চেয়ারম্যানদের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের নামে টিসিবির পণ্য দেওয়া হয়েছে। আবার কার্ড বিতরণের আগেই অতি দরিদ্রদের পরিবর্তে অনেক ধনি ব্যক্তিদের মাঝেও টিসিবির পণ্যসামগ্রি বিতরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে ভূক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা পরিষদ থেকে জানাযায়, আসন্ন মাহে রমজান উপলক্ষে সারাদেশে দরিদ্রদের মাঝে সরকার ডিলারদের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রি বিক্রি করার ব্যবস্থা করেছেন। আর মনিরামপুরে এ জন্য পৌরসভার মেয়র এবং ১৭ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দরিদ্রদের তালিকা প্রস্তুত করে কার্ড বিতরন করা হয়। প্রতিটি কার্ডের বিপরীতে ৪৬০ টাকার বিনিময়ে দুই কেজি ভোজ্যতেল, দুইকেজি চিনি এবং দুই কেজি ডাল দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কার্ডে দুইবার করে এসব পণ্যসামগ্রি বিতরন করা হবে। প্রথম দফায় বিতরন শুরু হয়েছে ২০ মার্চ থেকে। কিন্তু তালিকা প্রস্তুত ও পণ্যসামগ্রি বিতরনে বিভিন্ন অনিয়ম ও ওদূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে খেদাপাড়া ও কুলটিয়া ইউনিয়নে। খেদাপাড়া ইউনিয়নে টিসিবির কার্ড বরাদ্দ করা হয়েছে এক হাজার ৩৫৩ টি এবং কুলটিয়ায় ৯৭৫ টি।
অভিযোগ রয়েছে কুলটিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ হতদরিদ্র্রদের নাম বাদ দিয়ে মৎস্যঘের মালিকসহ ধনি ব্যক্তিদের মধ্যে কার্ড বিতরন করা হয়েছে। ২০ মার্চ ৯৭৫ জনের মধ্যে পণ্য সামগ্রি বিতরন করা হয়। পোড়াডাঙ্গার হতদরিদ্র আবদুর রহমান, আবদুস সালাম, রফিকুল ইসলাম, আড়সিঙ্গাড়ি গ্রামের আকতার হোসেন,ডাঙ্গামহিষদীয়া গ্রামের ভানুমতি, রহিমা বেগম, রাশিদা বেগম, পাড়িয়ালী গ্রামের আবদুল মজিদ, মনিরুল ইসলামসহ শতাধীক ব্যক্তি টিসিবির পণ্য সামগ্রি না পেয়ে অভিযোগ করেন, দরিদ্রদের পরিবর্তে ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায়ের আস্থাভাজন সুজাতপুর গ্রামের মৎস্যঘের মালিক অতিন বিশ্বাস, পলাশ বৈরাগী, আ¤্রঝুটা গ্রামের ব্যবসায়ী মফিজুর রহমান, কৃষি ব্যাংক কর্মচারী মহানন্দ মন্ডল, গাবোরডাঙ্গা গ্রামের উদয় ঘোষসহ অধিকাংশ ধনি ব্যক্তিদের মধ্যে কার্ড বরাদ্দ দিয়ে টিসিবির পণ্য সামগ্রি বিতরন করেন।
এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে ভূক্তভোগীরা ২৩ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগকারীদের মধ্যে প্রভাষ ঘোষ জানান, টিসিবির কার্ড ও পণ্য বিতরনে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনিত সকল অনিয়ম ও দূর্নীতির ব্যাপারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। তবে এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায় জানান, সমাজে ছোট করতে এলাকার একটি চক্র তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অন্যদিকে ২৩ মার্চ বিতরণ করা হয়েছে খেদাপাড়া ইউনিয়নে। তবে অভিযোগ রয়েছে ১৭০ জন কার্ডধারি কোন পণ্য সামগ্রি পাননি। কারন হিসেবে জানাগেছে পণ্যসামগ্রি বিতরনের আগে উপকারভোগীদের কাছে সঠিকভাবে কার্ড সরবরাহ করা হয়নি। ২৩ মার্চ পণ্য সামগ্রি বিতরন করা হলেও ১৭০ জনের কার্ড বিতরন করা হয়েছে ২৪ মার্চ। ফলে তারা পণ্য সামগ্রি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
কদমবাড়িয়া গ্রামের হতদরিদ্র গৃহবধু জাহানারা বেগম জানান, তাকে কার্ড দেওয়া হয়েছে ২৪ মার্চ সকালে। আবার একই গ্রামের নূরজাহান বেগম ও জয়নাল আবেদীন জানান, তারা কার্ড পেয়েছে ২৩ মার্চ রাতে। একই অভিযোগ করেন মামুদকাটি গ্রামের ইসমাইল হোসেন, বকুল পারভেজসহ অনেকেই। তাদের অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের পছন্দের ব্যক্তিদের মাঝে যথাসময়ে কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, টিসিবির কার্ড বিতরণ করেছেন চেয়ারম্যানের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত হানিফ নামে এক ব্যক্তি। খেদাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আলিম জিন্নাহ জানান, সমন্বয়হীনতার কারনে কার্ড বিতরনে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে ১৭০ জন কার্ডধারী যথসময়ে উপস্থিত না হওয়ায় মাষ্টাররোল করে ডিলারের(মেসার্স মিম ষ্টোর) মাধ্যমে পণ্য সামগ্রি বিতরন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান জানান, অনিয়মসহ টিসিবির পণ্য না পাওয়ার ব্যাপারে কার্ডধারী কেউ অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিউএনবি/আয়শা/২৪শে মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:২৯