তরিকুল ইসলাম ঝিকরগাছা (যশোর) সংবাদদাতা : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পর এবার অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী তামান্না নুরাকে ফোন দিয়েছেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। তামান্নার সাথে দেখা করার জন্য খুব শীঘ্রই যশোর আসবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি । বিষয়টি তামান্নার বাবা রওশন আলী নিশ্চিত করেছেন। তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, সকাল ১১ টা ১৫ মিনিটে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি আমার ফোনে কল দিয়ে তামান্নাকে দিতে বলেন। তামান্নার সাথে দীর্ঘ ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড কথা বলেছেন। এ তিনি তামান্নাকে বলেন, মনোবল হারাবে না, গোটা বাংলাদেশ তোমার সাথে আছে। তুমি এগিয়ে যাও। তুমি নুরের নুর। আল্লাহু রাব্বুল আল-আমিন তোমাকে নুরের আলোয় আলোকিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, এক পা দিয়ে তুমি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছো, তুমি পারো এবং পারবে। ভার্সিটিতে মাক্রো বাইলোজি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দিয়েছেন এবং বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি আমি তোমার সাথে দেখা করতে যশোরে আসবো’। এছাড়াও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি তার পরিবারের সকলের খোঁজখবর নেন এবং তামান্নার বাবা-মাকে সালাম জানাতে বলেন।এদিকে এর আগে গত সোমবার রাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তামান্না নুরাকে ফোন করেছিলেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। একই দিন লন্ডন থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহেনাও তাকে ফোন দিয়েছিলেন।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউপির আলিপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভিন শিল্পির বড় কন্যা তামান্না আক্তার নুরা। জন্মপ্রতিবন্ধি তামান্নার দুটি হাত ও একটি পা নেই। সকল প্রতিকুলতা আর পাহাড়সম বাঁধা পেরিয়ে তামান্না একের পর এক তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। জীবনযুদ্ধে হার না মানা এ অদম্য তামান্না পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি’র ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছে। ঝিকরগাছা বাঁকড়া ডিগ্রী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী তামান্না নূরা ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিল।
গত ২৪ জানুয়ারী যশোর জেলা প্রশাসক মোঃ তমিজুল ইসলাম খানের নির্দেশে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) হুসাইন শওকত ও ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহাবুবুল হক তামান্না আক্তার নুরার সাথে দেখা করতে যান এবং তার ইচ্ছার কথা জানতে চান। এসময় তামান্না দুটি ইচ্ছার কথা জানায়। একটি হলো, সে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চাই। অন্যটি হলো, ছোট বেলা থেকে ডাক্টার হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু পারষ্পারিকভাবে জানতে পেরেছি শারীরিক ডিস্ অ্যাবিলিটির জন্য ডাক্টারী পড়া যাবে না। সেজন্য আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা করে বিসিএস ক্যাডার হতে চাই। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে চাই।
একথা শুনে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তিনি মানবতার মা ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের প্রতি তার আলাদা একটা নজর আছে। সেই কথা শুনে তামান্না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। সে চিঠি ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহাবুবুল হক জেলা প্রশাসক মোঃ তমিজুল ইসলাম খানের নিকট জমা দিয়েছিলেন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রেরণ করেছিলেন। এরই মধ্যে তামান্নার এইচএসসি’র ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ফলাফলে তামান্না আবারও তার মেধার প্রমাণ দিয়েছে। লেখাপড়ার জীবনে বাঁকড়া আজমাইন এডাস স্কুলে কেজি থেকে শুরু করে প্রথম শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণিতে ফলাফলে মেধা তালিকার পাশাপাশি এডাস বৃত্তি পরীক্ষায় প্রতিবার সে বৃত্তি পেয়েছে।
২০১৩ সালে আজমাইন এডাস স্কুল থেকে পি.এস.সি, ২০১৬ সালে বাঁকড়া জে.কে. মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও একই স্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। ২০২১ সালে সে বাঁকড়া ডিগ্রী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসাবে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। তার এই ফলাফলে সকলেই আনন্দিত ও উচ্ছ্বাসিত। মঙ্গলবার সকালে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডা. কাজী নাজিব হাসান তামান্নাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান এবং মিস্টি নিয়ে তার বাসায় যান।
উপজেলা প্রশাসন তাকে সবসময় পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন। একই দিন যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক কল্যাণ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তামান্নাকে বিশেষ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে বলে তার বাবা রওশন আলী জানিয়েছেন। তার মেয়েকে নিয়ে লেখা ও সাফল্য তুলে ধরার জন্য সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মীদের তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমার মেয়েকে নিয়ে যতকিছু হচ্ছে তার সব কৃতিত্ব আমার সাংবাদিক ভাইদের।
কিউএনবি/আয়শা/১৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:৩৫